কৃষি বিল ২০২০ নিয়ে কেন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সুর চড়ছে! কয়েকটি তথ্য
বহু বিরোধিতার পর শেষমেশ রবিবার রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে মোদী সরকারের আনা কৃষি বিল। এই বিলের বিরোধিতায় করোনার আবহে রবিবার কার্যত তাণ্ডবের দৃশ্য দেখা যায় সংসদে। তৃণমূল সহ বিরোধী গোষ্ঠী তো বটেই, এমনকি বিজেপির শরিক দল শিরোমনি অকালি দলও প্রবল বিরোধিতায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর তুলেছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক কেন এই বিলের বিরুদ্ধে বিরোধীরা সরব?

কৃষি বিল ও কিছু তথ্য
মূলত মোদী সরকার তিনটি কৃষি বিল পেশ করেছে। তিনটি বিলই লোকসভায় পাশ হয়েছে।এই তিনটি বিল হল , ' কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন ',' অত্যাবশ্যক পণ্য আইন', 'কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত রাখতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ণ চুক্তি'। এই তিনটি বিল লোকসভায় পাশ হলেও, রবিবার রাজ্যসভায় ধ্বনি ভোটে দুটি বিল পাশ হয়েছে। সংসদের অন্দরে ও সংসদের বাইরে দেশ জোড়া প্রতিবাদের মধ্যে বিলগুলি পাশ হয়। রাজ্যসভায় ' কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন ' ও 'কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত রাখতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ণ চুক্তি' বিল দুটি পাশ হয়েছে।

সরকারের উদ্দেশ্য
সরকারের দাবি, প্রান্তিক চাষিদের সুবিধা পাইয়ে দিতেই এই বিল। যে সমস্ত চাষিরা নিজেদের ফসল নিয়ে দরদাম করতে পারছেন না, তাঁদের সুবিধা পাইয়ে দেয়া ছাড়াও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত কৃষি এই বিল পাইয়ে দিতে পারে বলে দাবি সরকারের। কেন্দ্রের দাবি এই বিলের হাত ধরে ২০২২ সালে প্রতিটি কৃষকের আয় দ্বিগুণ বাড়বে। এই বিলের দ্বারা সরকার নিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে কৃষকদের মুক্ত করবে। কৃষকরা তাঁদের ফসলের দাম আরও বাড়াতে পারবেন, দরদাম করে।

কেন বিরোধিতা হচ্ছে বিলের?
এদিকে, বিরোধিদের দাবি, কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিক ফসলের ন্যূনতম সহায়কমূল্য পাবেন না এই ব্যবস্থায়। বিলের হাত ধরে বাজার থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ তুলে নিলে, কৃষকরা অসহায় হয়ে পড়বেন। কৃষকদের আশঙ্কা, সরকার এই বিলের মাধ্যমে নূন্যতম সহায়ক মূল্যে তাঁদের থেকে ফসল কেনা বন্ধ করবে। ফলে ফের পুঁজিপতিদের ও কৃষি সংক্রান্ত খুচরো ব্যবসায়ীদের আধিপত্য কৃষিবাণিজ্যে বিস্তার হবে। ফলে দেশের কৃষক আরও গরিব হবেন।

আশঙ্কা আরও রয়েছে
কৃষিজাত পণ্যের মজুতকরণ নিয়েও আতঙ্কিত চাষিরা। সরকারের নিয়ন্ত্রণের হাত উপর থেকে সরে গেলে ভারতের কৃষি বাজারে ব্যবসার আস্ফালন বাড়বে। ফলে ব্যবসায়ীরাই ধীরে ধীরে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে শুরু করবে। যার দ্বারা কৃষক দাম চাইলেও যোগ্য দাম পাবে না, বলে আশঙ্কা। এছাড়াও কৃষিপণ্যে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ঘিরেও আতঙ্কিত চাষিরা।

রাজ্যগুলি কোন আশঙ্কায়
উল্লেখ্য, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় মান্ডি ট্যাঙ্ক চালু রয়েছে। সরকারের নতুন বিলের হাত ধরে সেই মান্ডি ট্যাঙ্কে প্রচুর লোকসান হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। কারণ কৃষক না চাইলে তিনি এখন থেকে মন্ডিতে ফসল নাও বিক্রি করতে পারেন। অন্যদিকে, ফসল বিক্রির ক্ষেত্রে কমিশন এজেন্টরা এর মধ্যে থাকতে পারছেন না। ফলে সমস্যার মেঘ গাঢ় হচ্ছে দুই রাজ্যের জন্য।

মোদী সরকারের বিরোধিতা
এদিকে, এই বিলের প্রতিবাদে হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। প্রতিবাদে পথে নেমেছেন কমিশন এজেন্টরা। কারণ এঁদের বাদ দিয়েই পণ্যের দরদামের কথা বলা হচ্ছে। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন, কিষাণ সংঘর্ষ কোঅর্ডিনেশন কমিটি, ক্ষেতকারি সংগঠনা এর বিরোধিতা করছে। সংসদে শিরোমনি অকালি দল, তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস সহ বিরোধীরা একজোট হয়ে এর প্রতিবাদ করে।