কৃষি বিল ২০২০ সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য একনজরে
রাজ্যসভায় কৃষি বিল পাশ হতেই দেশের প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন যে, 'নূন্যতম সহায়ক মূল্য চালু থাকবে'। এই মূল্য নিয়ে কৃষকদের শঙ্কিত হতে হবে না। তবুও দেশের কৃষক মহলে কেন্দ্রের তিনটি কৃষি বিল নিয়ে রয়ে যাচ্ছে নানান রকমের শঙ্কা। অন্যদিকে, সরকারও বিষয়টি নিয়ে চাষিদের মন পেতে মরিয়া। মধ্যে থাকা বিরোধীরা ক্রমাগত সরকারের বিরোধিতায় সোচ্চার। এমন পরিস্থিতিতে সংসদে পেশ হওয়া কৃষি বিল নিয়ে কিছু তথ্য দেখে নেওয়া যাক। দেখা যাক, এর ভালো ও মন্দ দিক।
মূল্য সংক্রান্ত বিষয়
কৃষি বিল নিয়ে চাষিদের সবচেয়ে বেশি চিন্তা মূল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। এনএসএসওর রিপোর্ট বলছে, ২০১২-১৩ সালের মধ্যে ১০ শতাংশেরও কম চাষি নূন্যতম সহায়ক মূল্যে ফসল বিক্রি করতে পেরেছিলেন। দেশে মাত্র ৬ শতাংশ চাষিই নিজের ফসলেরনূন্যতম সহায়ক মূল্য পান। বাকি ৯৪ শতাংশ তা পাননা। আর নতুন এই বিল কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন ' এর হাত ধরে এই ৯৪ শতাংশ কৃষক প্রবলভাবে সমস্যায় পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা। যে ৯৪ শতাংশের একটা বড় অংশ হরিয়ানা পাঞ্জাবের।
সংসদ ও কৃষি বিল
কৃষি সংক্রান্ত তিনটি বিলই লোকসভায় পাশ হয়েছে।এই তিনটি বিল হল , ' কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন ',' অত্যাবশ্যক পণ্য আইন', 'কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত রাখতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ণ চুক্তি'। এই তিনটি বিল লোকসভায় পাশ হলেও, রবিবার রাজ্যসভায় ধ্বনি ভোটে দুটি বিল পাশ হয়েছে।রাজ্যসভায় ' কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন ' ও 'কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত রাখতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ণ চুক্তি' বিল দুটি পাশ হয়েছে।
কোন ধরনের কৃষি ব্যবস্থা?
সরকারের দাবি এই বিলের হাত ধরে নতুন ধরনের কৃষি ব্যবস্থা সামনে আসবে। এই বিলের দ্বারা কৃষকরা মান্ডির বাইরে ফসল বিক্রি করতে পারবেন। যাঁকে ইচ্ছে তাঁকেই ফসল বিক্রি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আন্তঃরাজ্য ব্যবসার ক্ষেত্রেও জোর দেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক চাষিরা যাতে সরাসারি খুচরো ব্যবসা ও কৃষি বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন, তার চেষ্টা করছে এই বন্দোবস্ত।
পাঞ্জাব ও হরিয়ানা ঘিরে সমস্যা
উল্লেখ্য, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় মান্ডি ট্যাঙ্ক চালু রয়েছে। সরকারের নতুন বিলের হাত ধরে সেই মান্ডি ট্যাঙ্কে প্রচুর লোকসান হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। কারণ কৃষক না চাইলে তিনি এখন থেকে মন্ডিতে ফসল নাও বিক্রি করতে পারেন। ফলে জোর করে মান্ডি ট্যাঙ্ক দিতে হবে না কৃষকদের। অন্যদিকে, ফসল বিক্রির ক্ষেত্রে কমিশন এজেন্টরা এর মধ্যে থাকতে পারছেন না। ফলে সমস্যার মেঘ গাঢ় হচ্ছে দুই রাজ্যের জন্য কমিশন এজেন্টদের জন্যও।
সরকারের হাত সরে গেলে...
এই কৃষি বিল ঘিরে সরকারের হাত কৃষকদের মাথার ওপর থেকে সরে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সহায়ক মূল্য নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তা খোদ প্রধানমন্ত্রী দূর করেছেন। তিনি জানিয়েছেন,সরকার সহায়ক মূল্য নির্ধারণ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবে না।
উদ্বেগ কেন?
কৃষকদের উদ্বেগ , বাজার থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রণের হাত উপর থেকে সরে গেলে ভারতের কৃষি বাজারে ব্যবসার আস্ফালন বাড়বে। ফলে ব্যবসায়ীরাই ধীরে ধীরে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে শুরু করবে। যার দ্বারা কৃষক দাম চাইলেও যোগ্য দাম পাবে না, বলে আশঙ্কা। এছাড়াও কৃষিপণ্যে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ঘিরেও আতঙ্কিত চাষিরা।