শ্মশানে দাহ করতে দ্বিগুন চার্জ! খোলা রাস্তাতেই জ্বলল আদিবাসী ক্ষেতমজুরের চিতা, থানায় অভিযোগ
শ্মশানে দাহ করার টাকা নেই! খোলা রাস্তাতেই আদিবাসী শ্রমিকের শেষকৃত্য
দীর্ঘ লকডাউনের জেরে কার্যত হেলে পড়েছে দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো । ক্রমেই ভাড়ার ফুরোচ্ছে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের। এবার এর মাঝেই প্রকাশ্যে এল এক মর্মান্তিক ঘটনা। শ্মশানে দাহ করার টাকা না যোগাতে পারায় রাস্তার পাশেই মৃত বাবার সৎকার করল সুরাটের এনা গ্রামের বাসিন্দা মোহন রাঠোরের পুত্র শিব রাঠোর। মৃত ব্যক্তির পরিবার হালাপতি উপজাতি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বলেও জানা যায়। দাহ করার জন্য ২৫০০ টাকা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় এদিনে রাস্তাতেই জ্বলল মোহনের চিতা ।
দাহ করার চার্জ ১১০০ থেকে বেড়ে ২৫০০!
সূত্রের খবর, দীর্ঘ রোগভোগের পর মঙ্গলবার দুপুরে মোহন মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবার শ্মশানে দেহ নিয়ে যায় সৎকারের জন্য। মোহনের পুত্র শিব মৃত বাবাকে শ্মশানে নিয়ে যেতেই শ্মশান পরিচালনা সমিতি মোহনের সৎকারের জন্য ২৫০০ টাকা দাবি করে। এদিকে মোহন রাঠোরের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন। তাই তাঁদের পক্ষে এককালীন অত টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। অধিকাংশ গ্রামবাসীরই অভিযোগ আগে আগে সৎকারের জন্য ১১০০ টাকা লাগত। হঠাৎ করেই সেই চার্জ বাড়িয়ে ২৫০০ টাকা করা হয়েছে।
রাস্তাতেই জ্বলল বাবার চিতা
পেশায় ক্ষেতমুজুরের কাজ করতেন মোহন রাঠোর। তাই প্রথম থেকেই তাঁর পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন। তাই সৎকারের জন্য ২৫০০ টাকা খরচের সামর্থ্য ছিল না তার পরিবারের। শ্মশান কর্তৃপক্ষকে শিব তাদের পারিবারিক অবস্থার কথা সাফ জানালেও কোনোও লাভ হয়নি। এরপরেই, শিব তার সম্প্রদায়ের কিছু মানুষের সহায়তায় কাঠ জোগাড় প্রধান সড়কের উপরেই দাহ করে বাবার দেহ। ঘটনার ভিডিও নিমেষেই ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয় শিবের বিরুদ্ধে
এদিকে,চিতা জ্বালতেই নিভু আঁচে জ্বলতে থাকে কিছু মানুষের প্রতিহিংসা। ঘটনার পরেই যাগনিক ঠাকুর নামে তাদেরই এক প্রতিবেশী ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে শিব রাঠোরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন পলসানা পুলিশ স্টেশনে। অন্যদিকে আরেকজন প্রতিবেশী অর্জুন রাঠোর পাল্টা জবাবে পুলিশকে জানায়, "মোহনের পরিবার অত্যন্ত গরিব। তাদের পক্ষে ২৫০০ টাকা দিয়ে সৎকার করা সম্ভব হয়নি। আর টাকা ছাড়া শ্মশান কর্তৃপক্ষ দেহ সৎকারে রাজি হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই অসহায় পরিবার রাস্তায় দাহ করে"।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
জানা যাচ্ছে, দুতরফের অভিযোগ শুনে পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পলসানা থানার পুলিশ। ইতিমধ্যেই পুলিশের তরফে শিবের পরিবারকে রাস্তা পরিস্কার করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে, পলসানা থানার পুলিশ সিএম গাভী জানান, "আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গ্রামবাসীদের একাংশ এই ঘটনার সাথে আপোষ করতে রাজি হন। তাই আমরা জনসমাগমে মৃতদেহ দাহ করার অপরাধে একটি মামলা নিয়েছি। তদন্তের পরেই এই বিষয়ে বাকি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
সাপ্তাহিক লকডাউনে আবারও ঘরবন্দি সমগ্র বসিরহাট মহকুমা