বরাদ্দ সত্ত্বেও বেসরকারি হাসপাতালগুলি ১০ শতাংশের কম ভ্যাকসিন ডোজ তুলেছে, কিন্তু কেন?
বরাদ্দ সত্ত্বেও বেসরকারি হাসপাতালগুলি ১০ শতাংশের কম ভ্যাকসিন ডোজ তুলেছে, কিন্তু কেন?
খুবই ধীরগতিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে করোনা টিকাকরণ হচ্ছে। যদিও ২৫ শতাংশ বরাদ্দ ভ্যাকসিন ডোজ সত্ত্বেও ১ মে থেকে ১৭ অগাস্টের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলি কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন মিলিয়ে মাত্র ৯.৪ শতাংশ ভ্যাকসিন ডোজ পেয়েছে। আর এ জন্যই টিকাকরণের হার কমেছে। এই ৯.৪ শতাংশ ডোজে ১৩ অগাস্টের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাগুলিতে ৬৫ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছে। অন্যদিকে, সরকারি টিকাকরণ কেন্দ্রে ৯৭ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছে, কারণ সেখানে ৯০.৬ শতাংশ ভ্যাকসিন ডোজ পৌঁছেছে। প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য জানার অধিকারের (আরটিআই) জবাব থেকে এই পরিসংখ্যান নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, একদিকে যখন কেন্দ্র টিকাকরণের ওপর জোর দিচ্ছে সেখানে দাঁড়িয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলি কেন কম ডোজ পাচ্ছে বা কম ডোজ তুলছে তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
অনেক কম ডোজ পাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল
অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, হিমাচল প্রদেশ, বিহার ও অসম সহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সমগ্র ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে ২ শতাংশের কম ডোজ সরবরাহ করা হয়েছে। অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, পাঞ্জাব ও ঝাড়খণ্ড সহ ৮টি রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতাল ২ থেকে ৪ শতাংশ ভ্যাকসিন ডোজ পেয়েছে। সংশোধিত নির্দেশিকা অনুযায়ী, যা ২১ জুন থেকে কার্যকর হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে যে ভ্যাকসিন নির্মাতাদের কাছ থেকে কেন্দ্র সরকার ৭৫ শতাংশ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করবে। বাকি ২৫ শতাংশ ভ্যাকসিন নির্মাতারা সরাসরি বেসরকারি হাসপাতালকে বিক্রি করতে পারবে। যদিও এর আগে সরকারের নীতি অনুযায়ী যা ১ মে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত কার্যকর ছিল সেখানে বলা হয়েছিল যে নির্মাতাদের কাছ থেকে রাজ্য ও বেসরকারি হাসপাতালগুলি সরাসরি ৫০ শতাংশ ভ্যাকসিন কিনতে পারবে।
২৫ শতাংশ ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহ
তবে ১ মে থেকে ১৭ অগাস্টের মধ্যে দেশের বেসরকারি হাসপাতালে ২৫ শতাংশ ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহ হয়েছে, কেবলমাত্র তেলাঙ্গানায় ৩৩ শতাংশ, মহারাষ্ট্রে ২৯ শতাংশ ও দিল্লিতে ২৯ শতাংশ ডোজ সরবরাহ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে ১ মে আগে সরবরাহ করা ডোজ বিশ্লেষণের জন্য বিবেচিত হয়নি কারণ ১০০ শতাংশ ডোজ কেন্দ্রীয় সরকার কিনেছিল এবং রাজ্যগুলিতে সরবরাহ করেছিল।
কেন বেসরকারি হাসপাতালে টিকাকরণ কম হচ্ছে
অ্যামিকাস মুম্বইয়ের প্রধান আইনজীবী মুরালি নীলাকান্তন জানিয়েছেন যে বাধ্যতামূলক অগ্রিম অর্থ প্রদান ও অনিশ্চিত ডেলিভারির সময় বেসরকারি হাসপাতালে টিকাকরণের এমন করুণ হালের জন্য দায়ী। তিনি বলেন, 'সাম্প্রতিক পর্যায়ে এসে দেখা গিয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে বাধ্যতামূলকভাবে অগ্রিম অর্থ প্রদান করতে হচ্ছে, যা আগের পর্যায়ে ছিল না। এছাড়াও কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই যে ভ্যাকসিন ডোজ এসে পৌঁছাবে। আর সেই কারণে টিকাকরণ প্রক্রিয়া পরিকল্পনা মাফিক করতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। আর এটাই কারণ বেসরকারি হাসপাতালে টিকাকরণের হার হ্রাস পাওয়ার।' তিনি এও বলেন, 'এরপরও ভ্যাকসিনের দাম বৃদ্ধির আগাম খবর না দিয়ে নির্মাতারা বেসরকারি হাসপাতালের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক অগ্রিম অর্থ নিচ্ছে, যার ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলি যে মূল্য নির্ধারণ করেছিল ভ্যাকসিন বিক্রি করার সেটাও তারা পারছে না। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় শহরাঞ্চলে চাহিদা কমে যায়। এইভাবে, তারা ভ্যাকসিন মজুত ধরে রেখেছে, সেগুলি সরবরাহ করার জন্য অন্যান্য লাভজনক উপায় খুঁজছে। এটি ব্যাখ্যা করে কেন ব্যবহার এখন তুলনামূলকভাবে কম।'
অবস্থা করুণ বেসরকারি হাসপাতালের
বেসরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়া ও ভ্যাকসিনের ভাগ পাওয়া উভয় ক্ষেত্রের অবস্থা যে করুণ তা সরকারের অবগত রয়েছে। গত ১৪ জুলাই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ এক উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে বেসরকারি টিকাকরণ কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি অগ্রিম অর্থ দেওয়া সত্ত্বেও তারা ভ্যাকসিন নেয়নি। এছাড়াও তারা ভ্যাকসিন নিলেও টিকাকরণের হার খুই বাজে। গত ২৪ জুলাই কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রি মন্ত্রী পীযূশ গোয়েল জানিয়েছিলেন যে বেসরকারি ক্ষেত্রগুলি তাদের বরাদ্দ ২৫ শতাংশ ভ্যাকসিন কোটা নেয়নি।