অনলাইনে টিকিট কিনতে না পেরে পায়ে হেঁটেই বাড়ির পথে দিল্লির পরিযায়ী শ্রমিকরা
অনলাইনে টিকিট কিনতে না পেরে পায়ে হেঁটেই বাড়ির পথে দিল্লির পরিযায়ী শ্রমিকরা
পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বিশেষ শ্রমিক ট্রেনের বন্দোবস্ত করা হলেও বহু শ্রমিক অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কিনতে না পেরে পায়ে হেঁটেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। মে মাসের তপ্ত গরমে জাতীয় সড়কের ওপর দিয়েই হাজার হাজার শ্রমিক এখনও হেঁটে যাচ্ছেন বাড়ি ফেরার লক্ষ্যে।
অনলাইনে টিকিট কিনতে পারেননি পরিযায়ী শ্রমিকরা
২৬ বছরের লালা রাম কেওয়াত যে নির্মাণ সাইটে কাজ করতেন সেখানেই ছিলেন মঙ্গলবার পর্যন্ত। ৫০ দিনেরও বেশি সময় তাঁর কাজ নেই উপরন্তু যা জমিয়েছিলেন তা সবই দিনের পর দিন খরচ হয়ে যাচ্ছে। কেওয়াত এখন তাঁর স্ত্রী, দুই সন্তান ও কিছু বন্ধুদের নিয়ে দিল্লির ইন্দরলোক থেকে ৪৬৩ কিমি হেঁটে উত্তরপ্রদেশে তাঁর গ্রাম ঝাঁসিতে যাচ্ছেন। কেওয়াতের পাশাপাশি একদল তরুণ বিহারের কাটিহারে উদ্দেশ্যে হাঁটছেন। তাঁরা কেওয়াতকে তাঁর সাত বছরের শিশুকে কোলে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়, কারণ সে হাঁটতে হাঁটেত ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই ওই তরুণরা যঁরা শ্রমিকের কাজ করেন, ওই নির্মাণ স্থানেই থাকছিলেন এবং খাবারের জন্য তাঁদের পুলিশের ওপর নির্ভর হয়ে থাকতে হচ্ছিল। ওই দলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ১৯ বছরের আবু কালান জানান, তাঁরা ট্রেনের টিকিট কিনতে পারেননি বাড়ি ফেরার জন্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের ইন্টারনেট চলে এমন ফোন নেই। বুধবার আমাদের মধ্যে আটজন দিল্লির স্টেশনে গিয়েছিলেন এটা দেখতে যে কাউন্টার থেকে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে কিনা কিন্তু পুলিশ আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেননি কারণ আমাদের কাছে বৈধ টিকিট ছিল না। কাজ ছাড়া আমরা দিল্লিতে থাকতে পারব না।'
সরকারি সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত অধিকাংশ শ্রমিক
মঙ্গলবার থেকে সরকার আটটি বিশেষ ট্রেন, যার মধ্যে দিল্লি থেকে তিনটি ট্রেন সহ যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা পর্যায়ক্রমে শুরু করেছে। সরকার বিশেষ শ্রমিক ট্রেনেরও ব্যবস্থা করেছে। যাতে আটকে থাকা শ্রমিকরা বাড়ি ফিরতে পারেন। দিল্লি থেকে কমপক্ষে পাঁচটি শ্রমিক ট্রেন মধ্যপ্রদেশ ও বিহারের উদ্দেশ্যে গিয়েছে। কিন্তু ট্রেনের পরিষেবা পেতে হলে যাত্রীদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে অথবা জেলা শাসকের দপ্তরে গিয়ে ট্রেনের আসনের জন্য বলতে হবে। যে সব পরিযায়ী শ্রমিকরা সরকারি আশ্রয়স্থানে রয়েছেন তাঁরাই সরকারের সাহায্য পাচ্ছেন কিন্তু এছাড়াও বহু শ্রমিক তাঁদের কর্মস্থানেই দিন কাটাচ্ছেন ফলে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে।
গরমের কারণে রাতেই পা চালিয়ে দুরত্ব অতিক্রম করছে শ্রমিকরা
শ্রমিক ট্রেনের জন্য অনলাইনে টিকিট কিনতে না পেরে শহরের পরিযায়ী শ্রমিকরা প্রত্যেক রাতে নিজেদের গ্রামে ফেরার জন্য হাঁটা শুরু করছেন। স্টেশনের টিকিট বুকিং কাউন্টারও এখন বন্ধ তাই কালান ও কেওয়াতের মতোই অসহায় শ্রমিকরা পায়ের ওপর ভরসা করেই বাড়ির দিকে এগিয়ে চলেছেন। দিনের বেলা সূর্যের প্রখর তেজকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য শ্রমিকরা রাতেই বেশ কিছুটা দুরত্ব অতিক্রম করে নিচ্ছেন। তাঁরা হাইওয়ের ধারে কোনও পার্কে দিনে থাকছেন, বিশ্রাম নিচ্ছেন এবং স্বেচ্ছাসেবীদের থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছেন। প্রত্যেকে দু'বোতল করে জল বহন করছেন প্রত্যেকদিন।
দশ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক সরকারি আশ্রয়স্থানে রয়েছেন
সরকারি তথ্য বলছে, ২০ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক সরকারি আশ্রয়স্থান ও স্কুল চত্ত্বরে রয়েছেন। সরকারি ২২৩টি আশ্রয়স্থাএনর পাশাপাশি ২৫৬টি স্কুলকে আশ্রয়স্থান বানানো হয়েছে যেখানে দিল্লিতে আটকে পড়া দশ হাজার শ্রমিক রয়েছেন।
বাংলার উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ভ্রুকুটি! অভিমুখ বদলে চিন্তার মেঘ সাত জেলায়