হায়দরাবাদ অনার কিলিং, নিজের পরিবারকে কাঠগড়ায় তুললেন মৃত নাগারাজুর স্ত্রী সুলতানা
প্রেম না পরিবার, কোনটা আগে? এই প্রশ্ন প্রায়ই উঠে আসে কোনও না কোনও ক্ষেত্রে। সেইসঙ্গে ভারতের একাধিক জায়গায় দেখা গিয়েছে প্রেমের সম্পর্ক আটকানোর জন্য পরিবারের এমন কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ছবি যা এককথায় নাড়িয়ে দিয়েছে সামাজিক চিত্র। যতই সকলে সমানাধিকার নিয়ে নারা লাগাক না কেন, এখনও যে দেশের একাধিক জায়গায় পারিবারিক সম্মান রক্ষার গর্বের চূড়ান্ত অন্ধকারে ডুবে রয়েছে এই সমাজেরই একাংশ তার প্রমান এবং সেইসঙ্গে বর্বরতার নজির পাওয়া গেল আরও একবার।

ফের 'অনার কিলিং'এর সাক্ষী হল দেশ। জামাইকে খুন করার অভিযোগ উঠল উচ্চবর্ণের সঙ্খায়লঘু পরিবারের বিরুদ্ধে। তবে এবার এই ঘটনা বিহার বা উত্তরপ্রদেশের নয়, বরং নৃশংস এই ঘটনাটি ঘটেছে হায়দারাবাদে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। সেই সঙ্গে গোটা বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত। সেই সময় প্রত্যক্ষদর্শী কারা ছিলেন, তা খুঁজে বের করে তাঁদের কাছথেকে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জানতে তৎপর হয়েছে পুলিশ।
দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক আসরিন সুলতানার সঙ্গে নাগারাজুর। নাগারাজু দলিত পরিবারের। দুজনের এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি আসরিনের পরিবার। দুজনে বিয়ে করায় নাগারাজুকে খুন করার অভিযোগ তুলেছেন নাগারাজুর স্ত্রী। তাঁর আরও অভিযোগ, নাগারাজুকে যখন মারছিল, সেই সময় তাকে সাহায্য করার জন্যে কেউ এগিয়ে আসেনি। পাশাপাশি পুলিশের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মৃতের স্ত্রী। তিনি জানান,রক্তাক্ত অবস্থায় দীর্ঘক্ষন পড়েছিলেন নাগারাজু। ঘটনাস্থলে দেরিতে আসার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। সুলতানা জানিয়েছেন, ১৫-২০ মিনিট ধরে তাঁর স্বামীকে মারধর করা হয়েছে। অনেকেই গোটা ঘটনাটি দেখলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। ঘটনার ৩০ মিনিট পর ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। ততক্ষনে মৃত্যু হয়েছে নাগারাজুর।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন সুলতানা। তিনি বলেন বুধবার স্বামীর সঙ্গে স্কুটি করে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আচমকাই কয়েকজন তাদের পথ আটকে দাঁড়ান। তার মধ্যে ছিলেন সুলতানার ভাই। তাঁরা স্কুটিতে ধাক্কা দিয়ে প্রথমে মাটিতে ফেলে দেয় দুজনকে। তারপর রড দিয়ে নাগারাজুকে মারধর করা হয়। ছুরি দিয়ে কোপ বসানো হয় তাঁর স্বামীর শরীরে। সেখানেই মৃত্যু হয় নাগারাজুর।
নাগারাজু সেকেন্দ্রাবাদের মারেদপল্লির বাসিন্দা। তিনি মালাকপেটের একটি জনপ্রিয় গাড়ির শোরুমে কাজ করছিলেন। সুলতানার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। জানুয়ারিতে আর্য সমাজ মন্দিরে বিয়ে করেন দুজনে। এই বিবাহ মেনে নিতে পারেননি সুলতানার পরিবার। বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদ সারুরনগর পুলিশ নাগারাজুর স্ত্রীর দাদা সৈয়দ মোবিন আহমেদ এবং মহম্মদ মাসুদ আহমেদকে গ্রেফতার করেছে ।পুলিশ সূত্রে খবর, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷ দোষীরা যাতে উপযুক্ত শাস্তি পায় এবং তদন্তে গতি আনতে দুই অভিযুক্তকে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে পেশ করবে পুলিশ৷