বর্ণ বিভেদের অপমানের জবাবে উচ্চবর্ণের রাঁধুনির তৈরি খাবার খেতে অস্বীকার দলিত পড়ুয়াদের
আবার দেশে প্রকাশ্যে এল বর্ণ বিভেদের চিত্র। তবে এবার ঘটনা সামান্য ভিন্ন। অভিনব উপায়ে অপমানের বদলা নিল বেশ কিছু 'দলিত' সম্প্রদায়ের পড়ুয়া। 'যে যেমন তাঁকে তেমন' পন্থা অবলম্বন করল উত্তরাখণ্ডের একটি স্কুলের দলিত ছাত্ররা। উচ্চবর্ণের ছাত্ররা এক দলিত মহিলার হাতে তৈরি 'মিড ডে মিল' খেতে অস্বীকার করায় তার পাল্টা জবাবে এবার উচ্চবর্ণের মহিলার তৈরি খাবার খেতে অস্বীকার করল ওই বিদ্যালয়ের দলিত সম্প্রদায়ের বেশ কিছু পড়ুয়া।

'মিড ডে মিল' ঝামেলা
ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার উত্তরাখণ্ডের চম্পাওয়াত জেলার 'গভর্মেন্ট ইন্টার কলেজ অফ সুখিধাং'-এ। বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ প্রেম সিং জানান, 'শুক্রবার ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীর ৬৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৮ জন উপস্থিত ছিল। মিড ডে মিল পরিবেশন করার সময় ২৩ জন দলিত ছাত্র উচ্চবর্ণের রাঁধুনি দ্বারা রান্না করা খাবার খেতে অস্বীকার করে। মূলত পড়ুয়াদের বক্তব্য ছিল দিন কয়েক আগে ওই স্কুলের উচ্চবর্ণের ছাত্ররা যখন এক দলিত সম্প্রদায়ের মহিলার রান্না করা খাবার না খেতে চায়, তাহলে তারাই বা কেন একজন উচ্চবর্ণের মহিলার রান্না করা খাবার খাবে।'

কেন এই ঘটনা
এর আগেও একাধিকবার বর্ণপ্রথার ঘটনা সামনে এলেও স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা বোধহয় এই প্রথম। তবে হঠাত কেন এহেন ঘটনা? জানা গিয়েছে, ১৩ ডিসেম্বর ভাড়া করা দলিত মহিলা রাঁধুনি সুনিতা দেবীর রান্না করা খাবার খেতে অস্বীকার করেছিল ওই বিদ্যালয়ের বেশ কিছু উচ্চবর্ণের ছাত্ররা। এরপর ডিসেম্বরের ২১ তারিখ ওই মহিলাকে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এবং তার পরেই এই জবাব ফিরিয়ে দেয় দলিত সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা।

বিদ্যালয়ের অধক্ষর বক্তব্য
এই গোটা বিষয় সম্পর্কে 'গভর্মেন্ট ইন্টার কলেজ অফ সুখিধাং'-এর অধ্যক্ষ প্রেম সিংএর বক্তব্য সামনে এসেছে। তিনি বলেছেন, তাঁরা মিড ডে মিলের রাঁধুনি পদের জন্য ১১টি আবেদন পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে থেকে ৫ ডিসেম্বর সুনিতা দেবীকে কাজের জন্য নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু যখন দুপুরের খাবার দেওয়া শুরু হয় তখন তা খেতে অস্বীকার করে বেশ কিছু পড়ুয়া। সুনিতা দেবীর অপরাধ ছিল তিনি একজন দলিত সম্প্রদায়ের মহিলা। এরপর স্কুলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সুনিতা দেবীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করেন, এই বলে যে নিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। আর তার পরেই এক উচ্চবর্ণের মহিলা বিমিলেশ উপ্রেতি নিযুক্ত হন মিড ডে মিল রাঁধুনি হিসেবে। আর তাঁর তৈরি খাবার খেতে অস্বীকার করে দলিত পড়ুয়ারা।

সুনিতা দেবীর বক্তব্য
দলিত সম্প্রদায়ের সুনিতা দেবী এবং তার স্বামী প্রেম রাম এক খামারে কাজ করেন। তাঁকে বরখাস্ত করার পর, দেবী চম্পাওয়াতের টানাকপুরে স্থানীয় প্রশাসন এবং চালথির পুলিশ ফাঁড়িতে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ করেন। তবে পুলিশ এখনও মামলা নথিভুক্ত করেনি বলে অভিযোগ। দেবী অবশ্য বলেছেন যে দলিত ছাত্ররা উচ্চবর্ণের লোকদের উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে। "উচ্চ বর্ণের ছাত্ররা যদি একজন দলিত ভোজনমাতার রান্না করা দুপুরের খাবার না খায়, তাহলে দলিত ছাত্ররা কীভাবে একজন উচ্চবর্ণের মহিলার রান্না করা খাবার খেতে পারে!"
তবে এই ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা দল 'ভীম আর্মি'র প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ টুইট করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, "যদি দলিত মহিলাকে পুনর্বহাল করা না হয়, ভীম আর্মি উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামিকে ঘেরাও করবে।" অবশ্য গোটা ঘটনার তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চম্পাওয়াত জেলার প্রধান শিক্ষা আধিকারিক আরসি পুরোহিত।