বিতর্কিত মন্তব্য কঙ্গনার, পদ্মশ্রী ফেরানোর দাবিতে সরব দেশের সব রাজনৈতিক নেতারা
স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য কঙ্গনার
কঙ্গনা রানাওয়াত ও বিতর্ক যেন একে–অপরের পরিপূরক। সম্প্রতি পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন কঙ্গনা। কিন্তু তাও যেন বিতর্ক পিছু ছাড়তে নারাজ অভিনেত্রীর। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্ভাধীনতা অর্জনকে 'ভিক্ষা’ বলে কটাক্ষ করে সকলের রোষের মুখে পড়েছেন অভিনেত্রী। সব রাজনৈতিক দলের নেতারা সরকারের কাছে কঙ্গনার পদ্মশ্রী কেড়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
কি বলেছেন কঙ্গনা রানাওয়াত
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাতকারে কঙ্গনা জানিয়েছেন যে ১৯৪৭ সালে পাওয়া স্বাধীনতা আসলে ছিল ভিক্ষা। আসল স্বাধীনতা ২০১৪ সালে মোদী-সরকারের আমলে এসেছে বলেই দাবি করেন তিনি। 'কুইন' অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে শীর্ষ কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা কঙ্গনার মন্তব্যকে 'আঘাতজনক ও আক্রোশজনক' বলে অ্যাখা দিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে কঙ্গনাকে দেওয়া পদ্মশ্রী সম্মান ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছেন।
আনন্দ শর্মার টুইট
আনন্দ শর্মা একগুচ্ছ টুইটের মাধ্যমে বলেন, 'কঙ্গনার এ ধরনের বিবৃতি মহাত্মা গান্ধী, নেহেরু ও সর্দার প্যাটেলের নেতৃত্বে পরিচালিত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাহসীকতাকে আঘাত করেছে, শুধু তাই নয়, সর্দার ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ এবং এঁদের মতো আরও সাহসী বিপ্লবীদের আত্মত্যাগকেও তুচ্ছ করেছেন তিনি।' আনন্দ শর্মা আরও বলেন, 'এই জাতীয় পুরস্কার দেওয়ার আগে মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়ন করা উচিত যাতে এই ধরনের ব্যক্তিরা দেশ এবং এর বীরদের অসম্মান না করেন।'
কঙ্গনাকে বয়কট করা হোক
হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডা কঙ্গনার এই মন্তব্যকে 'নির্মম' বলে অ্যাখা দিয়েছেন। হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার প্রেসিডেন্ট জিতান রাম মাঝি, যাঁর দল এনডিএয়ের সঙ্গে বিহারে জোট বেঁধেছে, তিনি জানিয়েছেন, সমস্ত সংবাদমাধ্যমের উচিত কঙ্গনাকে বয়কট করা।' রামনাথ কোবিন্দকে ট্যাগ করে মাঝি লিখেছেন, 'কঙ্গনা রানাওয়াতকে দেওয়া পদ্মশ্রী অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত। তা না হলে বিশ্ব ভাববে গান্ধী, নেহেরু, প্যাটেল, ভগৎ সিং, কালাম, মুখার্জি, সবরকর স্বাধীনতার জন্য ভিক্ষা করেছিলেন।'
রাষ্ট্রদ্রোহি কঙ্গনা
শিবসেনা নেতা নীলম গোর্হে ভারতের স্বাধীনতাকে ভিক্ষা মন্তব্য করার জন্য কঙ্গনা রানাওয়াতের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ নিয়ে আসার জন্য বলেছেন। শিবসেনা নেতা বলেছেন, 'তাঁর মন্তব্যের জন্য কঙ্গনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা উচিত। তাঁর পদ্ম পুরস্কারও প্রত্যাহার করা উচিত।' শিবসেনা ও এনসিপির মহারাষ্ট্র সরকারের জোট, কঙ্গনার এই মন্তব্যে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং অভিনেত্রীর গ্রেফতারের দাবি করে।
মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী ও এনসিপি নেতা নবাব মালিক এ প্রসঙ্গে বলেন, 'কঙ্গনা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান করেছেন। কেন্দ্রের উচিত তাঁর থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার কেড়ে নিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা। মনে হচ্ছে, এই ধরনের মন্তব্য করার আগে কঙ্গনা মালানা ক্রিমের (হাশিশের এক ধরনের মাদক, যা বিশেষ করে হিমাচলে পাওয়া যায়) ভারী ডোজ নিয়েছিলেন।'
আপ ও বিজেপির প্রতিবাদ
তবে, শুধু শিবসেনা বা এনসিপি নয়, কঙ্গনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে আর এক বিরোধী দল আম আদমি পার্টি। বৃহস্পতিবার, আপের তরফে মুম্বই পুলিশের কাছে কঙ্গনার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করার আবেদন জানানো। আপের ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য প্রীতি শর্মা মেনন কঙ্গনার এই মন্তব্যকে দেশদ্রোহী ও উস্কানিমূলক আখ্যা দেন। কঙ্গনার এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেন বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধী। তিনি টুইটে বলেন, এর আগেও মহাত্মা গান্ধীর অবদানকে অপমান করে তাঁর হত্যাকারীদের বাহবা দিয়েছিলেন কঙ্গনা। এবার এই ধরনের মন্তব্য করে মঙ্গল পান্ডে, ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, রানী লক্ষ্মীবাই, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মতো লক্ষ লক্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বলিদানকে অপমান করেছেন তিনি।
ফিল্মি কেরিয়ার কঙ্গনার
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই মুক্তি পেয়েছে কঙ্গনা রানাওয়াত অভিনীত ছবি থালাইভি। ছবিতে কঙ্গনা তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বর্তমানে তিনি ধাকড় ছবি নিয়ে ব্যস্ত। এই ছবিতে রয়েছেন অর্জুন রামপালও।