উত্তরপ্রদেশ–রাজস্থান হয়ে পঙ্গপালের আতঙ্ক মুম্বইতে, মহারাষ্ট্রের কিছু জেলায় হামলা এই পতঙ্গের
উত্তরপ্রদেশ–রাজস্থান হয়ে পঙ্গপালের আতঙ্ক মুম্বইতে, মহারাষ্ট্রের কিছু জেলায় হামলা এই পতঙ্গের
করোনা ভাইরাস মহামারির জেরে দেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে লক্ষ লক্ষ পঙ্গপালের ঝাঁক ফসলের ওপর হামলা করতে পারে এই দুঃস্বপ্ন নিয়ে রাত কাটছে উত্তর ভারতের কৃষকদের। তবে এটা সত্যিও হতে পারে।
২৭ বছরে মধ্যে ভয়াবহ পঙ্গপাল হামলা এ বছর
রাজস্থান, পাঞ্জাব, মধ্য প্রদেশ, গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রের কৃষকরা গত ২৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পঙ্গপালের আক্রমণের মধ্যে রয়েছে। গত মাসে পাকিস্তান থেকে রাজস্থানে ঢোকে পঙ্গপালের ঝাঁক, উত্তর ও মধ্য ভারতের বহু রাজ্যের কৃষকদের ক্ষতি সাধন করেছে এই পতঙ্গ। ইতমধ্যেই দিল্লি, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও কর্নাটকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পঙ্গপাল তাদের সীমানায় ঢোকার সম্ভাবনা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য ও কৃষি সংগঠনের পক্ষ থেকে সতর্ক ককে জানানো হয়েছে যে এই পতঙ্গ আগামী সপ্তাহগুলিতে বিহার ও ওড়িশার মতো পূর্বদিকের রাজ্যগুলিতে পৌঁছাতে পারে।
পঙ্গপালের হামলা কি
ভারত সম্প্রতি পঙ্গপালের ঝাঁকের প্রাদুর্ভাবে অস্থির হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ভারতে চার ধরনের পঙ্গপালের প্রজাতি রয়েছে। মরুভূমি পঙ্গপাল, বম্বে পঙ্গপাল, মিগ্রাটরি পঙ্গপাল ও গাছ পঙ্গপাল। তবে মরুভূমি পঙ্গপালকেই সবচেয়ে মারাত্মক বলে স্বীকার করা হয়। এরা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং একদিনে ১৫০ কিমি পর্যন্ত ঢেকে দিতে সক্ষম। এক ধরণের ঘাসফড়িং, এই পতঙ্গ তার শরীরের ওজনের চেয়ে বেশি খেতে পারে। প্রায় এক কোটি বর্গ কিলোমিটারের অন্তর্গত প্রায় ৪০ মিলিয়ন পঙ্গপাল একদিনে ৩৫,০০০ লোকের মতো খাবার খেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মরুভূমি পঙ্গপালের ক্রমবর্ধমানকে দায়ি করেন। তাঁদের মতে পঙ্গপালদের প্রজনন মাটির আর্দ্রতা এবং খাদ্যের সহজলভ্যতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে পঙ্গপাল ঝাঁক হামলা করেছে
সোমবার কয়েক লক্ষ লক্ষ পঙ্গপাল নতুনভাবে রাজস্থানের বিশাল ভূমিতে উড়ে এসেছিল সেখান থেকে তারা মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পৌঁছায়। পঙ্গপাল ইতমধ্যেই ৯০ হাজার হেক্টর জমি, অধিকাংশই পশ্চিম ও পূর্ব রাজস্থানে, ক্ষতি করে দিয়েছে। পঙ্গপালের আক্রমণে যেসব জেলাগুলি প্রতিকূলভাবে প্রভাবিত হয়েছিল সেগুলির মধ্যে রয়েছে শ্রী গঙ্গানগর, জয়সলমির, বার্মার, বিকানির, যোধপুর, চুরু ও নাগৌড়, আজমির, জয়পুর এবং দউসা। সোমবার জয়পুরে লক্ষাধিক পঙ্গপালের ঝাঁককে দেখা যায়। বৃহস্পতিবার রাজ্যের কৃষি বিভাগের কমিশনার ওম প্রকাশ জানিয়েছেন যে কৃষি বিভাগ রাজস্থানের ৬৭,০০০ হেক্টর জুড়ে পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উত্তরপ্রদেশে কৃষি বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর কমল কাটিয়ার জানিয়েছেন যে ঝাঁসির মঠ ও গারৌথা এলাকায় এবং সোনভদ্র এলাকায় কৃষি বিভাগের কর্মীরা সারারাত পঙ্গপালের সঙ্গে মোকাবিলা করে। সোনভদ্র থেকে বুধবার পঙ্গপালের দল বেমৌরি গ্রামে পৌঁছায় যেখানে কৃষি বিভাগের কর্মীরা তাদের ওপর রাসায়নিক স্প্রে করে রাতভর এবং অনেক পঙ্গপাল মারাও যায়। ফসলের সামান্য ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে।
মহারাষ্ট্রেও হামলা পঙ্গপালের
মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট জেলা থেকে পঙ্গপালের ঝাঁক পূর্ব মহারাষ্ট্রে পৌঁছায় বৃহস্পতিবার দুপুরে। মধ্যপ্রদেশের শিবপুলি জেলায় পঙ্গপালের আক্রমণে বহু ফসলের ক্ষতি হয়। বৃহস্পতিবার দুপির ১টার সময় মহারাষ্ট্রের ভাণ্ডারা জেলার তুমসার তেহসিলের সন্দ্যা গ্রামে পঙ্গপালের ঝাঁক দেখা যায়। এরপরে পঙ্গপালের দল বাওয়ানতাদি নদী পেরিয়ে বালাঘাটে পৌঁছায়। রাজ্যের কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, তাদের কর্মীরা সীমান্তে পঙ্গপালের চলাচলের ওপর নজর রেখেছে। বৃহস্পতিবার রাতেই কৃষি ভিভাগের পক্ষ থেকে তেমামি গ্রামে অভিযান চালানো হয় এবং এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের গাছে দুটি ফায়ার টেন্ডার থেকে কীটনাশক স্প্রে করা হয়। সকালে গাছের ওপর থেকে বহু মৃত পঙ্গপাল ঝড়ে পড়তে থাকে। কৃষি বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘আম গাছগুলির ওপরই প্রভাব বেশি পড়েছে। তারা পাতা খেয়েছে কিন্তু ফল নয়। ধানক্ষেতেও কোনও ক্ষতি হয়নি।' পালঘর জেলার প্রশাসনকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, এরই মধ্যে আসছে ২০০ স্পেশাল ট্রেন, মাথাব্যাথ বাড়ছে মমতা সরকারের