শহুরে বস্তি সহ দেশের জনসংখ্যার বড় অংশের মধ্যে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা, বলছে সেরো সমীক্ষা
শহুরে বস্তি সহ দেশের জনসংখ্যার বড় অংশের মধ্যে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা, বলছে সেরো সমীক্ষা
দেশে যেমন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে তেমনি সুস্থতার হারও বেশ আশাব্যাঞ্জক। কিন্তু তাও যেন আশঙ্কার মেঘ কাটতে চাইছে না ভারতের ওপর থেকে। সম্প্রতি দেশজুড়ে হওয়া দ্বিতীয় সেরো–সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেরো–সমীক্ষা অনুযায়ী, অগাস্টে প্রতি ১৫ জনের মধ্যে ১০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে বয়সের মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। যা ইঙ্গিত করছে যে দেশের একটি বড় অংশ এখনও করোনা ভাইরাসের প্রতি সংবেদনশীল।
দ্বিতীয় সেরো সার্ভেতে ফলাফল বৃদ্ধি
এই সমীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে মঙ্গলবার আইসিএমআরের ডিরেক্টর জেনারেল বলরাম ভার্গভ জানান যে, ২৯,০৮২ জনের (১০ বছর ও তার ঊর্ধ্বে) মধ্যে ৬.৬ শতাংশের ওপর গত ১৭ অগাস্ট থেকে ২২ অগাস্টের মধ্যে সমীক্ষা করে দেখা যায় যে তারা করোনা সংক্রমিত হয়েছিল। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের (১৮ বছর ও তার ঊর্ধ্বে) মধ্যে ৭.১ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, যা অনেকটা বেশি। ১১ মে থেকে ৪ জুনের মধ্যে হওয়া ৭০টি জেলার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রথম সেরো সমীক্ষা ০.৭৩ শতাংশ ফলাফলের চেয়ে দ্বিতীয় সেরোতে এই ফল বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দ্বিতীয় সেরো সমীক্ষা একই জেলাগুলিতে করা হয়, তবে শিশুদর (১০ বছরের ওপর) মধ্যে।
করোনায় আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা
ভার্গভ জানিয়েছেন, উল্লেখযোগ্যভাবে দ্বিতীয় সেরো সার্ভেতে দেখা গিয়েছে যে এই মারণ সংক্রমণের ক্ষেত্রে শিশুরাও দুর্বল, তারাও আক্রান্ত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘বয়স বা লিঙ্গের ক্ষেত্রে সেরোপ্রিভালেন্স আলাদা হয় না। ১০ বছরের ওপর সমস্ত বয়সের মানুষই করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। এর আগে, আমরা এটা সমীক্ষা করে জেনেছিলাম যে ১৮ বছরের নীচে কোনও বয়সের মানুষকে করোনা ভাইরাস প্রভাব ফেলতে পারবে না। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি যে কোনও পার্থক্য নেই তাতে।' ভার্গভ আরও বলেন, ‘তথ্যে দেখা গিয়েছে জনসংখ্যার একটা বড় অংশের করোনা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে। আমাদের এবার ফাইভটি কৌশলের ওপর মনোনিবেশ করতে হবে, যা হল টেস্ট, ট্র্যাক, ট্রেস, ট্রিট ও প্রযুক্তির ব্যবহার। ওষুধের হস্তক্ষেপ ছাড়া সামাজিক দুরত্ব ও মাস্কের ব্যবহার চালিয়ে যেতে হবে, কারণ এটা প্রয়োজন। আসন্ন উৎসব মরশুমের দিকে নজর দিয়ে, শীতের মরশুম ও জন সমাগম, কনটেইনমেন্টের কৌশল সব রাজ্যে কার্যকর করতে হবে, এটি খুবই প্রভাব ফেলবে।
শহুরে বস্তিতে করোনার ঝুঁকি বেশি
এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে দেশের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ চাঙ্গা করতে লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পর শহুরে বস্তি এলাকায় করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছে। সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, শহুরে বস্তিতে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ১৫.৬ শতাংশ। শহরের অন্যত্র এই শতাংশটি ৮.২ শতাংশ ও গ্রামীন এলাকায় এটি ৪.৪ শতাংশ। তার মানে শহরে বস্তি এলাকায় ঝুঁকি বেশি। ভার্গভ এ ক্ষেত্রে বলেন, ‘তাই মানুষ-কেন্দ্রিক ও ঝুঁকি রয়েছে এমন শহুরে বস্তিগুলোর ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন এবং বয়স্ক ও কোমর্ডিটি রয়েছে এমন ব্যক্তিদের রক্ষা করতে হবে।'
আগামী পাঁচ মাস সতর্কতা অলম্বন করতে হবে
কোভিড টাস্ক ফোর্সের প্রধান নীতি আয়োগের সদস্য ভিকে পাল এ প্রসঙ্গে জানান, গত দু'মাসে করোনা টেস্ট বেড়ে যাওয়ার ফলে এই সমীক্ষয় উঠে এসেছে অগাস্টে প্রতি রিপোর্টে ৩২ জনের মধ্যে ২৬ জন আক্রান্ত, যা মে মাসে হওয়া প্রথম সেরো সার্ভে ৮১-১৩১-এর তুলনায় অনেক কম। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিস্তৃত মাত্রা রয়েছে। বিশেষ করে উপসর্গ বিহীন ব্যক্তিদের সংখ্যা অনেক বেশি। তিনি বলেন, ‘শীতকালে শ্বাস-প্রশ্বাসের এই সংক্রমণ দ্রুতগতিতে ছড়াবে। তাই আগামী পাঁচমাস সামাজিক দুরত্ব ও মাস্ক পরে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য এও বলছে যে ছোট ছোট দল করে এ বছর উৎসব পালন করা উচিত।'
দিল্লিতে বাড়ছে অপরাধের পরিমাণ, সর্বাধিক চিন্তা বাড়াচ্ছে চোরদের বাড়বাড়ন্ত, বলছে এনসিআরবি