সাগরের দূষণ-বিষ দূর করতে জাহাজের নকসা বানাল ১২ বছরের বালক, কীর্তি দেখে হাঁ বিশ্ব
এ যেন এক বিষ্ময়। সচিন তেন্ডুলকরের মতো বিষ্ময় যে অন্য়ান্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান তা প্রমাণ করে দিল হাজিক কাজি। মাত্র ১২ বছর বয়সে হাজিক এমন এক জাহাজের নকসা তৈরি করেছে যা দিয়ে সাগরের আবর্জনা পরিস্কার হবে।
এ যেন এক বিষ্ময়। সচিন তেন্ডুলকরের মতো বিষ্ময় যে অন্য়ান্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান তা প্রমাণ করে দিল হাজিক কাজি। মাত্র ১২ বছর বয়সে হাজিক এমন এক জাহাজের নকসা তৈরি করেছে যা দিয়ে সাগরের আবর্জনা পরিস্কার হবে। আর দূষণ করবে সাগর-সহ এক বিশাল জীব জগতকে। হাজিকের সম্প্রতি সামনে এসেছে হাজিকের এই জাহাজ তৈরির কথা।
তথ্য বলছে দূষণের এই রমরমা বাজারে বিশ্বজুড়ে মহাসাগর ও সাগরের বুকে ভেসে বেড়ানো আবর্জনার পরিমাণ পাঁচ ট্রিলিয়ন। যা একটা মহাদেশের সমান। মহাসাগর ও সাগরের ১২ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত এই ব্যপ্তি এই আবর্জনার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আবর্জনা প্লাস্টিক। এই প্লাস্টিক মহাসাগর ও সাগরে যেমন দূষণ ছড়াচ্ছে তেমনি জীব জগতকেও দূষিত করে চলেছে। এমনকী এই দূষণের প্রভাব পড়ছে ডাঙায় বসবাসকারী মানুষদের মধ্যেও।
মগজাস্ত্রে শান পড়ল স্কুলের প্রজেক্টে
পুনের ইন্দাস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ে হাজিক। কিন্তু তার মাথা জুড়ে সারাক্ষণই চিন্তা লেগে থাকে কী ভাবে মহাসাগর ও সাগর থেকে আবর্জনা পরিস্কার করা যায় এবং জীব জগতের ভারসাম্য ঠিক রাখা যায়। স্কুলে একদিন এমনট প্রজেক্ট হাজিকের কাছে এল যা থেকে নিজের স্বপ্নের ভাবনায় কিছুটা অক্সিজেন দিল হাজিক। সে জানিয়েছে এই সময় সাগরে পড়ে থাকা প্লাস্টিক আবর্জনা নিয়ে বেশকিছু তথ্যচিত্র দেখেছিল। সেখান থেকেই সাগর থেকে কীভাবে আবর্জনা সরানো যায় তা নিয়ে একটা স্বচ্ছ ভাবনা তৈরি হচ্ছিল। ঠিক এই সময়েই স্কুলের প্রজেক্ট হাজিকের মস্তিষ্কের বাতিটাকে জ্বালিয়ে দেয়।
'ইউরেকা' মিলল বেসিনের নালার মুখে
স্কুলের প্রজেক্ট নিয়ে গভীর ভাবনায় মজে ছিল হাজিক। এমনই এক দিনে সকালে দাঁত মাজার সময় বেসিনের নালার মুখে নজর পড়ে তার। যে ভাবে নালার মুখে থাকা ঝাঁঝরির ফাঁক দিয়ে জল ঘূর্ণি-র মতো পাক খেতে খেতে হাওয়া হয়ে যাচ্ছিল আর পেস্টের ফেনাগুলো উপরে পড়ে থাকছিল তা দেখেই হাজিকের মাথায় 'ইউরেকা' খেলে যায়। সে জানিয়েছে ওখান থেকেই সে বুঝে নেয় এতদিন ধরে যে স্বপ্নের জাহাজ বানানোর নকসা সে ভেবে যাচ্ছিল তাতে কীভাবে প্রযুক্তি জুড়তে হবে।
জন্ম নিল 'এরভিস'
দেরি না করে এরপর হাজিক লেগে পড়েছিল তাঁর স্বপ্নের জাহাজের নকসা তৈরি করতে। ৯ বছর বয়স থেকে রোজই সে চেষ্টা করত এই জাহাজের নকসা তৈরি করার। হাজিক তাঁর দূষণ রোধের এই জাহাজের নাম রাখে 'এরভিস'। এই জাহাজের নকসার মোট তিনটি কার্যকারিতাকে যোগ করে সে। প্রথমটি হল সাগরের বুকে ভাসমান আবর্জনাকে এই জাহাজ তুলে নেবে। দ্বিতীয়- কী ধরনের আবর্জনা সংগ্রহ হয়েছে তা বিশ্লেষণ করবে জাহাজটি। তৃতীয়টি হল জাহাজটি যাতে সংগ্রহ করা আবর্জনাকে সমুদ্রে না ফেলে তার ব্যবস্থা করা।
'এরভিস'- এ পাঁচ ধরনের ফিল্টার
এই জাহাজের নকসায় ৫টি ফিল্টারের কথাও উল্লেখ করেছে হাজিক। জাহাজের পিছন ভাগ থেকে মধ্যভাগ পর্যন্ত এই ফিল্টারগুলো কাজ করবে। এতে আপাতত ৯ ধরনের কাজের কথা বলা হয়েছে। যেমন- ১। ওয়েল স্যামপ্লিং ২। ওয়েল স্টোরেজ কন্টেনার, ৩। লার্জ প্র্যাক্টিস স্যামপ্লিং ৪। মিডিয়ম প্র্যাক্টিস স্যামপ্লিং, ৫। স্মল পার্টিকল স্যামপ্লিং, ৬। মাইক্রো প্র্যাক্টিস স্যাম্পপ্লিং ৭। সেগ্রিগেটর, ৮। স্টোরেজ কমপার্টমেন্ট ৯। বায়ো ডিগ্রেডেবল স্টোরেজ।
বিশেষজ্ঞদের শলা-পরামর্শ
জাহাজের নকসা চূড়ান্ত করার আগে বেশ কিছু বিজ্ঞানী ও ৩ডি জিজাইনার-এর সঙ্গে কথাও বলেছিল হাজিক। এই আলাপচারিতাতেই নাকি 'ব্লিডিং এজ' মডেলের কথা তাঁর মাথায় আসে।
'এরভিস' কীভাবে কাজ করবে
এটা
জাহাজ
হলেও
দেখতে
অনেকটা
বিশালাকার
বোডের
মতো।
হাজিকের
পরিকল্পনা
অনুযায়ী
এটা
চলবে
হাইড্রোজেন
এবং
নানা
ধরনের
রিনিউয়েবেল
প্রাকৃতিক
গ্যাসে।
এই
জাহাজে
নিচে
বেশকিছু
সসার
লাগানো
থাকবে
যা
জলের
ভাসমান
কোনও
আবর্জনাকে
টেনে
তুলবে।
সসারের
মুখগুলো
একটা
জায়গায়
একসঙ্গে
মিশবে।
আবর্জনাগুলো
যেখানে
জমা
হবে।
এই
খানে
একাধিক
টিউবকে
জাহাজের
মধ্যে
থাকা
কয়েকটি
চেম্বারে
ঢুকিয়ে
দেওয়া
হয়।
এই
চেম্বারগুলোর
মধ্যে
রয়েছে
অয়েল
চেম্বার।
যার
কাজ
হল
তেল
সংগ্রহ
করা।
হাজিকের
স্বপ্নের
জাহাজ
সংগৃহীত
আবর্জনাকে
প্রথমে
বিশ্লেষণ
করবে।
এরপর
আবর্জনার
ধরন
দেখে
তাকে
নির্দিষ্ট
রিসাইক্লিং-এ
পাঠানো
হবে।
সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ
বছর ১২ হাজিকের প্রেরণা এলন মাস্ক। হাজিকের মতে সাগরের বুক থেকে আবর্জনা পরিস্কার করা চাট্টিখানি কথা নয়। ফি বছর সাগরের বুকে তেল দূষণের জন্য বিশ্ব জুড়ে ১ মিলিয়ন পাখি মারা যায়। এর মূলে রয়েছে প্লাস্টিক। অন্তত ৬৬% সামুদ্রিক মাছই প্লাস্টিক ভক্ষণ করে। এই প্লাস্টিক ভক্ষণ করা মাছ খেয়ে আবার মানুষের শরীর খারাপ হয়।
ইগনোরেন্সে ঘৃণা হাজিকের
হাজিক মনে করে ইগনোরেন্স এই বিশ্ব চরাচরের সবচেয়ে বড় সমস্যা। সে জানিয়েছে, 'আমরা এমন একটা বিশ্বে বসবাস করি যেখানে প্রতি নিয়ত আমরা পৃথিবী নামক গ্রহকে নোংরা করি। অথচ আমরা যদি একটু সজাগ হই তাহলে এই সমস্যা তৈরি হয় না। আমরা যদি একটু ভাবি তাহলে দেখব পৃথিবী বসবাসের জন্য আরও উন্নত হয়েছে। '