স্কুল খুললেও পড়ুয়া কই? ছাত্র খুঁজতে রাস্তায় নামলেন মাস্টারমশাইরা
'আছে ক্লাসরুম, আছে চক, আছে টিচারের বকবক' করোনা ভীতি কাটিয়ে প্রায় কুড়ি মাস পর খুলেছে স্কুল। তবে রাজ্যের প্রত্যেকটা স্কুলে হয়ত ছবিটা সমান নয়। কলকাতার নামী বিদ্যালয়গুলিতে যেখানে ক্লাস ভরে গিয়েছে ছাত্রছাত্রীতে। হুগলির গরলগাছা সুরবালা বিদ্যামন্দিরে পড়ুয়া সংখ্যা দশকের ঘরেও পৌঁছোয়নি।
কথা ছিল স্কুল খুলবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করবেন শিক্ষক-পড়ুয়ারা। সেই মতো প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল, ছাত্রদের কথা ভেবে নিয়ম মেনে গোটা স্কুলবাড়ি স্যানিটাইজ করা, মাস্কের বন্দোবস্ত করা, এমনকি দেওয়াল অবধি রঙ করিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু মঙ্গলবার পড়ুয়াদের দেখা মেলেনি৷ অগত্যা স্কুল খোলার প্রথমদিনে পড়ুয়া খুঁজতে এলাকায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছে মাষ্টারমশাইদের।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশোক কর্মকার বলেন, 'এর আগে হোয়াটসঅ্যাপ মারফৎ সমস্ত ছাত্রকে স্কুল খোলার বিষয়ে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তবু দেখা গিয়েছে, স্কুলে এসেছে মাত্র ছ'জন ছাত্র৷ তাই সিদ্ধান্ত নিই রাস্তায় বেরিয়ে পড়ার। যে সমস্ত এলাকায় আমাদের ছাত্রদের বসতি, সেখানে পৌঁছে অভিভাবকদের আশ্বস্ত করি। এতদিন অনলাইনে পড়াশোনা হলেও তা যথেষ্ট ছিল না। ২০ মাস বাদে এখন স্কুল খুলেছে, ক্লাস না করলে আগামী বার্ষিক পরীক্ষা, মাধ্যমিকে সমস্যায় পড়বে ছাত্রছাত্রীরা। তাছাড়া আমরা কোভিডবিধি মেনেই ক্লাস করাচ্ছি৷ তাই সংক্রমণের ভয় নেই। কোনও ছাত্র অসুস্থ হলে সেক্ষেত্রেও সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। অভিভাবকরা আমাদের কথা শুনেছেন, ওঁরা জানিয়েছেন যে বুধবার থেকেই সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন।'
কোভিডের জেরে স্কুলছুট ছাত্রদের সংখ্যা বেড়েছে বলেও জানান অশোক। তিনি বলেন, 'স্কুলছুট ছাত্র আমাদের স্কুলেও আছে। এ কথা অস্বীকার করার নয়। কিন্তু তাদের অভিভাবকদের কাছে গিয়ে অনুরোধ ব্যতীত আমরা কীই বা করতে পারি? তবু আশা ছাড়ছি না। নিশ্চয়ই ফের আগের মতো গমগম করবে স্কুল চত্বর। আমরা তো সেটাই চাই।'
শুধু সুরবালা গরলগাছা বিদ্যামন্দিরের এমন চিত্র নয়। একই চিত্র ধরা পড়েছে জঙ্গলমহলের একাধিক স্কুলে। সেখানেও তিন-চার জন ছাত্র এসেছে প্রথমদিন। কোভিডের আগে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে মেতে থাকা বিদ্যালয় যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা অবশ্য আশা ছাড়ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, প্রথম দিন বলেই হয়ত এত কম ছাত্র। আস্তে আস্তে সংখ্যাটা বাড়বেই।