পশ্চিমমুখী এই মন্দিরে দেবী পূজিত হন বালিকা রূপে
পশ্চিমমুখী এই মন্দিরে দেবী পূজিত হন বালিকা রূপে
বাঙালি চিরকালই কালী ভক্ত, তাই দুগ্গা ভাসাবার পর সমগ্র উচ্ছ্বাস একাগ্রচিত্তে শ্যামা মায়ের পায়ে সঁপে দিতে না পারলে আত্মা শুদ্ধ হয় না কোন বঙ্গপ্রাণীরই। অতএব, সেখান থেকেই রক্তজবার আসন পেতে তন্ত্র সাধনার শুরু। মানুষ যেখানেই যায় ছায়ার মতন সঙ্গী হয় তার ধর্ম। তাই ধর্ম কখন ব্যবসা হয়েছে আর ব্যবসা কখন ধর্মের নবরূপ সৃষ্টি করেছে তার হিসেব মেলাতে মেলাতেই গড়ে উঠেছে আরও একটা নতুন কালী মন্দির।
পশ্চিমমুখী এক মন্দির
কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত গঙ্গার পশ্চিমমুখী এক মন্দিরের কথা। এই মন্দিরে আজও দেবী পূজিত হন বালিকা রূপেই। কলকাতা আজ যাঁদের জমিদারির ওপর ভিত্তি করে নাগরিকত্ব পেয়েছে, সেই সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের একটি আদি মন্দির হল করুণাময়ী কালী মন্দির। আদি গঙ্গার পার ধরে যেতে যেতে যে রাস্তাটা সিধে বেহালার দিকে মিশছে, তার ঠিক মাঝখানে বয়ে গেছে টালির নালা অর্থাৎ আজকের টালিগঞ্জ। সেই টালিগঞ্জেরই পশ্চিম পুটিয়ারির রাস্তার শেষে আজকের মহাত্মা গান্ধী রোডের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই মন্দির।
আদি যুগ
তখন ব্রিটিশ রাজের আদি যুগ। বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী বাড়ির নন্দদুলাল মহাশয় তিন পুত্র সন্তান নিয়ে জমিদারি সামলাচ্ছেন, অথচ মনে মনে ইচ্ছা এক বালিকাকে আনার। একদিন সে ইচ্ছাও পূর্ণ হল জমিদার মশায়ের। মেয়ের নাম রাখলেন করুণা। তবে ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, সে সন্তান মাত্র সাত বছর বয়সে চিরবিদায় নিল। এমতাবস্থায় শোকাতুর পিতার বেদনা লাঘব করতে একদিন স্বপ্নে দেখা দিলেন তাঁর কন্যা। ব্যথাতুর হৃদয়ে স্নেহের পরশ রেখে আদেশ দিলেন তাঁর কন্যাকে ফিরে পেতে তাকেই মহামায়া রূপে পুজো করতে হবে। সেই আদেশ মেনে পরদিন ঊষালগ্নে নন্দদুলাল বাবু গঙ্গার ঘাটে বটবৃক্ষের তলায় পড়ে থাকা একটি কষ্টিপাথরকে ভেঙে গড়ে তুললেন এক চতুর্ভূজা দক্ষিণা কালী। সেই কষ্টিপাথরেই প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হল কন্যা করুনার। সেই থেকেই মূর্তির আড়ালে বাড়ির মেয়ের আরাধনা চলল করুণাসম করুণাময়ী কালী মন্দিরে। ১৭৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কন্যাসহ বিগ্রহটিকে কেন্দ্র করেই একসময় এই গড়ে উঠল নবরত্ন স্থাপত্য রীতির আদলে মন্দির। সেই সময়ে নবরত্ন মন্দির কলকাতায় তো বটেই, জেলাতেও হাতেগোনা কয়েকটি ছিল।
মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং রানী রাসমণিও।
তাই এমন মন্দিরের স্থাপত্য শৈলী দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং রানী রাসমণিও। কোন একদিন আদি গঙ্গার ধার ঘেঁষে যাবার সময় করুণাময়ী মন্দিরের গঠন আর বিগ্রহ দেখার পরই সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণীর মন্দির গড়ে তোলার। আজ সেই ভাবনারই বাস্তবিক রূপ গোটা বিশ্বের মানুষ দেখতে পান দক্ষিণেশ্বরের কালী বাড়িতে। করুনাময়ীর মন্দিরে মূল বিগ্রহের সঙ্গে রয়েছে দ্বাদশ শিব মন্দির এবং দেবীর মতো শিবলিঙ্গও এখানে কৃষ্ণকায়।
কন্যা রূপে
যেহেতু কন্যা রূপে পূজিত হন, তাই বেনারসি ও গহনা সজ্জিত এই বালিকার আরাধনাতে কুমারী পুজো এখনো নিয়ম করে পালন করা হয়। শুধু তাই নয় এর সাথে করুণাময়ী বাজারে আসা সমস্ত রকম মাছও নিবেদন করা হয় দেবীকে।
ডোবা থেকে উঠে আসেন কালী, পূজিতা হন এই গ্রামের মন্দিরে