ব্রাজিলের বিরুদ্ধে পাঁচ গোল হজম ভারতের, তবুও পেলের দেশের বিরুদ্ধে মেয়েদের লড়াই মনে থাকবে দীর্ঘ দিন
ব্রাজিলের বিরুদ্ধে পাঁচ গোল হজম ভারতের, তবুও পেলের দেশের বিরুদ্ধে মেয়েদের লড়াই মনে থাকবে দীর্ঘ দিন
ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে শেষ হল ভারতের সফর। শেষ ম্যাচে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দল ০-৫ গোলে পরাজিত হলেও এই হারে কোনও লজ্জা নেই। বরং অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস, প্রত্যয় এবং বোঝাপড়ার নিদর্শন ছিল এ দিন ভারতের খেলায়। যে গোলগুলো ভারত হজম করেছে তা অধিকাংশ গোলরক্ষকের উচ্চতার অভাবে।
খেলায় জেতা-হারা থাকেই, কিন্তু পরাজিত দল যদি অদম্য লড়াই দেয় তা হলে সেই দলের হারের থেকেও তাদের লড়াইকে মনে রাখেন ফুটবলপ্রেমীরা। ভারতের এই ম্যাচটাও ছিল সেই রকম। ম্যাচ প্রতি ম্যাচ এই দলটা যে উন্নতি করছে তা বেশ ভাল মতো বোঝা গেল সোমবার কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে। ভারতের খেলা এ দিন ছিল অনেক বেশি গোছানো। মাঝমাঠ এবং ডিফেন্সের সঙ্ঘবদ্ধ ভাবটা চোখে পড়েছে বেশ ভাল মতো। ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল লক্ষ্যণীয়। প্রথম দিন আমেরিকার বিরুদ্ধে ম্যাচ দেখে যেখানে মনে হয়েছিল দলের একে অপরকে চেনেন না, সেখানে মাত্র ৬ দিনের ব্যবধানে বোঝা গেল ঠিক লোকের হাতেই রয়েছে ভারতীয় মহিলা দলের ভবিষ্যৎ। শুধু বোঝাপড়াটাই এই ক'দিনে সঠিক ভাবে গড়ে তোলেননি ডেননার্বি, দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাসটাও ফিরিয়ে এনেছেন। রাতারাতি কোনও কিছুই বদলে দেওয়া যায় না, দুর্বলতাগুলিকে মেরামত করার চেষ্টা করা যায়, সেটাই করেছেন ডেননার্বি। এত কম সময়ে আকাশছোঁয়া পরিবর্তন আশা করাটা কখনওই ঠিক নয়। তবে, দলের মানসিকতার পরিবর্তন যে আসছে তা নিশ্চিত।
আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ৮ গোল হজম করা কাজল-অষ্টমদের খেলার সঙ্গে মরক্কো বা ব্রাজিল ম্যাচে খেলা অষ্টম ওঁরাওয়ের দলের ফুটবলারদের অনেক তফাৎ রয়েছে। ফারাকটা মরক্কো ম্যাচ থেকেই চোখে পড়ছিল, যা আরও বেশি প্রকোট হয় ব্রাজিলের বিরুদ্ধে। মরক্কোর বিরুদ্ধে ভারতের ডিফেন্সের অটুট ভাবটা দেখেছিল বিশ্ব ফুটবল, ব্রাজিলেরক বিরুদ্ধেও ভারতীয় ডিফেন্স গঠনটা ঠিক মতোই রেখেছিল কিন্তু টেকনিক্যাল ত্রুটি এবং গোলরক্ষকের উচ্চতার অভাবে গোল হজম করতে হয় ভারতকে। দু'টি ক্ষেত্রে এ দিন গোল রক্ষক ঠিক জায়গায় ঝাঁপালেও তাঁর আঙুলে টোকা লেগে বল জালে জড়িয়ে যায়।
এ দিন অনেক বেশি পাস খেলেছে ভারত। মাঝমাঠে এবং রক্ষণভাগে ব্লকিংটাও হয়েছে ঠিক মতো। এ দিনের ম্যাচে প্রথমার্ধেই আসে দুই গোল। ম্যাচের প্রথম কোয়ার্টের ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন গাবি বারচো। ১১ মিনিটে এলিনের পাস থেকে গোল করে পেলের দেশের অনূর্ধ্ব-১৭ মহিলা দলকে এগিয়ে দেন গাবি। ৪০ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি পায় ব্রাজিল। এই গোলটি করেন প্রথম গোলের স্থপতি এলিনে, গোলের পাসটি বাড়ান আনা ফ্লাভিয়া। ম্যাচের তৃতীয় গোলটি ভারত হজম করে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে। ৫১ মিনিটে নিজের্ দ্বিতীয় গোলটি করে ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে এগিয়ে দেন এলিনে। আমেরিকার বিরুদ্ধে একের পর এক গোল হজম করে নিজেদের খেলাটাই ঘেঁটে ফেলেছিলেন অনীতা কুমারী -শুভাঙ্গি সিং'রা তেমনটা এই ম্যাচে হয়নি। বরং প্রতিআক্রমণে একাধিক সুযোগ তৈরি করেছিল ভারত। নেহা একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যদিও পরে সহকারী রেফারি জানান তিনি এফ সাইড ছিলেন। এর আগে ৩০ মিনিটে বক্সের বাইরে শট নেন নেহা। যা লক্ষ্য়ে থাকলেও অভিজ্ঞতা অভাবে সুযোগটা হাতছাড়া করেন তিনি। বল নিয়ে এগনোর সুযোগ থাকলেও তাড়াহুড়ো করে ফেলেন তিনি। ম্যাচের ৮৬ মিনিটে ব্রাজিলের হয়ে চতুর্থ গোলটি করেন লারা। ১৭ নম্বর জার্সিধারী এই ফুটবলার মাঠে নামার পর অনেকটাই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে ব্রাজিল। অতিরিক্ত সময়ে লারা নিজের দ্বিতীয় গোলটি করে ব্রাজিলের জয়ের ব্যবধান বাড়িয়ে ৫-০ করেন।
ভারত বনাম ব্রাজিল ম্যাচের সাক্ষী থাকতে কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়েছিলেন ৮৭৬৫ জন সরর্থক, তাঁরা ভারতের জয় দেখতে না পেরেলেও একটা প্রতিদ্বন্দ্বীতা মূলক ম্যাচ অবশ্যই দেখলেন। ভারতের সিনিয়র দল যেখানে খেলে সেখানেই সমর্থনের জন্য যান ব্লু পিলগ্রিম। ভারতীয় দলের সমর্থকদের একটা গ্রুপ এটি। এ দিন কলিঙ্গতেও তরুণ মেয়েদের সমর্থনে উপস্থিত ছিলেন ব্লু পিলগ্রিম।
এই গ্রুপের অপর খেলায়, গোয়ায় মরক্কোর অনূর্ধ্ব-১৭ দলকে আমেরিকার যুব মেয়েরা পরাজিত করে ৪-০ ব্যবধানে। যার ফলে গ্রুপ 'এ'-এর শীর্ষে থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেল আমেরিকা এবং দ্বিতীয় স্থানে থেকে পরবর্তী রাউন্ডে গেল ব্রাজিল। কোয়ার্টার ফাইনালে নাইজেরিয়ার মুখোমুখি হবে আমেরিকা এবং ব্রাজিল সেমিফাইনালের টিকিট অর্জনের লক্ষ্যে খেলবে জার্মানির বিরুদ্ধে।
শ্রীলঙ্কায় বাড়ছে চিনা ফৌজ, উদ্বেগে তামিলনাড়ু, সতর্কতা জারি জলসীমান্তে