চিন্তা এবং উৎকন্ঠার সঙ্গে বিশ্বকাপের আবহে দিন কাটাচ্ছেন কাতারে বসবাসকারী সমপ্রেমী মানুষেরা
চিন্তা এবং উৎকন্ঠার সঙ্গে বিশ্বকাপের আবহে দিন কাটাচ্ছেন কাতারে বসবাসকারী সমপ্রেমী মানুষেরা
কাতারের একধিক বিষয় খোলাখুলি সমালোচিত হয়েছে উন্নত বিশ্বে তার মধ্যে অন্যতম সমপ্রেম। উন্নতশীল এবং উন্নত দেশগুলিতে যেখানে সমপ্রেম বৈধতা পেয়েছে এবং বহু গণতান্ত্রিক দেশে সমপ্রেমকে মান্যতা দেওয়ার জন্য একজোট হয়ে আন্দোলন করছেন সমপ্রেমীরা, সেখানে কাতারে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ সমপ্রেম। কাতারের আইন এবং রীতিনীতি এতটাই কঠিন এবং একপেশে যে এই বিষয়ে মুখ খোলারও সাহস পান না সেই দেশে বসবাসকারী সমপ্রেমীরা।
বিশ্বকাপের সময়ে কাতারের সমপ্রেমকে কঠোর হাতে দমন করার যে নিয়ম তা নিন্দিত হয়েছে সর্বোত্র। কিন্তু এই আবহে নিজেদের সুদিন ফিরবে বলে মনে করেন না কাতারের সমপ্রেমী মানুষেরা, বরং তাঁদের অধিকাংশই ভয় পাচ্ছেন, বিশ্বকাপ মিটে যাওয়ার পর গোটা বিশ্বের নজর সরে যাবে কাতার থেকে, সেখানে সমপ্রেমকে দমন করার জন্য আরও কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারে সেখানকার প্রশাসন এবং তার প্রভাব পড়তে পারে সমপ্রেমীদের উপর।
গত সপ্তাহে কয়েক জন বন্ধু দোহায় একটি রেস্তোরায় এক সঙ্গে ককটেল সহযোগী আড্ডা দিচ্ছিলেন। টিন্ডার, গ্রিন্ডারের বিভিন্ন প্রোফাইল দেখতে দেখতে বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মতামত দিচ্ছিলেন। এমন সময় তাঁদের মধ্যেই এক জনের ফোনে একটি বার্তা আসে এবং সে লাফিয়ে নিজের ডেটের সঙ্গে দেখা করতে চলে যান। এই বন্ধুরা যারা বিশ্বকাপের আগের সপ্তাহে আড্ডা দিচ্ছেন তাঁরা আসলে দোহায় বসবাসকারী কিছু সমপ্রেমী এবং দেশের কড়া চোখরাঙানির মধ্যেই যতটা সম্ভব নিজেদের মত করে মনের মানুষের সঙ্গে দিন কাটানোর চেষ্টা করে চলেছেন। কাতারে সমরপ্রেম অবৈধ এবং ধরা পড়লে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
দোহায় বসবাসকারী পশ্চিমের এক সমপ্রেমী সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলছিলেন, "আমরা এক সঙ্গে দেখা করি, ডিনারে যাই, পার্টিতে যাই, সমুদ্র সৈকতে যাই।" এক দশকের বেশি সময়ে অর্থবান দেশটিতে বসবাসকারী সেই মানুষটি আরও বলেন, "আমরা নিজেদের বয়ফ্রেন্ডকে সঙ্গে নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে যাই না কিংবা রামধনুর পতাকা ওড়াই না, কিন্তু এর জন্য নিজেদের আওয়াজকেও সংকচিত করিনি।"
রয়টার্স পশ্চিমের এই সমপ্রেমী মানুষটি ছাড়াও আরও তিন জনের সঙ্গে কথা বলেছে যাঁদের মধ্যে দুই জন কাতারি এবং এক জন আরবি। প্রত্যেকেই নাম না প্রকাশের শর্তে কথা বলতে রাজি হন কারণ নাম প্রকাশিত হলে কঠিন শাস্তির অত্যন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। এই চার জনই জানিয়েছেন, বিভিন্ন প্রাইভেট পার্টিতে তাঁরা দেখা করতে পারেন মনের মানউষের সঙ্গে। এ ছাড়া ডেটিং অ্যাপেও তবে সেটা ভিপিএন ব্যবহার করে কারণ এমনিতে ডেটিং অ্যাপ নিষিদ্ধ কাতারে।
দোহায় প্রায় দশ বছর ধরে বসবাস করা আরবের মানুষটি বলছিলেন, "প্রত্যেকেই যে সাফার করছে বিষয়টা কিন্তু তেমনটা নয়।" বরং তাঁরা চিন্তিত বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে সমপ্রেম নিয়ে কাতারের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে সমালোচনা হচ্ছে তা নিয়ে। তাঁরা ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে এক বার বিশ্বকাপের মতো মেগা ইভেন্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পর তাঁদের মতো সমপ্রেমীদের বিরুদ্ধে রোষ উগড়ে দেবে সাধারণ মানুষ এবং তাঁরা বর্তমানে যেটুকু স্বাধীনতা উপভোগ করেন সেটাও আর থাকবে না। ওই ব্যক্তিটি বলছিলেন, "আমাদের কী হবে, যারা দশ বছর ধরে দোহায় বসবাস করছে? বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কী হবে? এতটা যে অধিকার নিয়ে কথা হচ্ছে তা কি বন্ধ হয়ে যাবে?"
এই মানুষগুলি কাতারের সমপ্রেমী মানুষদের মাত্র একটি চিত্র তুলে ধরেছে। কাতারে বসবাসকারী একদল মানুষ যখন আশঙ্কা করছেন গোটা বিশ্বের সমালোচনার প্রভাবের ফলে তাঁদের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসবে এবং এর প্রতিফলন তাদের জন্য ভাল হবে না, সেখানে এক কাতারি চিকিৎসক যিনি সমপ্রেমী এবং আমেরিকায় বসবাস করেন তিনি কাতারে মানুষের অধিকার নিয়ে বিশ্বের মানুষের নজর পরার বিষয়টাকে স্বাগত জানিয়েছেন।