ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন দীর্ঘ লড়াই ও জেরুজালেম নিয়ে টানাপোড়েনের ইতিহাস জানেন কি
জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী বলে ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘাতের ইতিহাস না জানলে এর প্রেক্ষাপট বোঝা সম্ভব নয়।
পশ্চিম এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্যালেস্তাইন ঐতিহাসিকভাবে সারা পৃথিবীর কাছে পরিচিত। প্রাচীন সভ্যতার বিকাশে এই অঞ্চলের অবদান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সহস্রবছর ধরেই বিভিন্ন ধর্মের মানুষের এই অঞ্চলে বসবাস ছিল। তবে মূলত মুসলমান ও খ্রিস্টানদের বসবাসই ছিল বেশি। পরে সেখানে ইহুদীদের বসবাস ক্রমেই বাড়তে থাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উৎসাহে। যার ফলে পরে শুধু হয় প্যালেস্তাইন ও ইজরায়েল সঙ্কট যা গত সাত দশক ধরে চলে আসছে। এরই মধ্যে এককদম এগিয়ে বিতর্কিত এলাকা জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী বলে ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। যা নিয়ে শুধু আরব বিশ্ব কেন, ইউরোপ, এশিয়াতে ঝড় বয়ে গিয়েছে। ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘাতের ইতিহাস না জানলে এর প্রেক্ষাপট বোঝা সম্ভব নয়।
প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড
প্যালেস্তাইন ভূখণ্ডের আয়তন ছিল ২৫০০ বর্গ কিলোমিটার। ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে মিশর, জর্ডন, সিরিয়া ও লেবাননের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ছিল এটি। খ্রিস্টপূর্বের অনেক আগে থেকে এই অঞ্চলে সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল লক্ষ্যণীয়ভাবে।
ইহুদীদের বিতাড়িত করা
রোমান সম্রাটদের আক্রমণের ফলে ইহুদীরা ইউরোপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে। প্যালেস্তাইনে ইহুদীদের প্রবেশ উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে। ওই সময়ই ইউরোপে ইদুদী-বিদ্বেষ দানা বাঁধতে শুরু করে। সেই কারণে ইহুদীদের মনে নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরির ভাবনা আসে।
প্যালেস্তাইনে ইহুদীদের আগমন
১৮৭৮ সালের একটি হিসাবে দেখা গিয়েছে, প্যালেস্তাইনে ইহুদীদের জনসংখ্যা ছিল একেবারে নগণ্য। ৯৬ শতাংশের বেশি জনসংখ্যা ছিল মুসলমান ও খ্রিস্টানদের। ইহুদী ছিল ৩ শতাংশের কিছু বেশি। তবে অবস্থার বদল হল তার পর থেকে। দলে দলে ইংরেজদের ডাকে ইহুদীরা ইউরোপ ছেড়ে প্যালেস্তাইনে এসে বসবাস করতে শুরু করে।
ব্রিটিশদের সুনজরে
জাহাজে চাপিয়ে হাজার হাজার ইহুদীকে প্যালেস্তাইনে আনা হয়। বাড়িঘর তৈরি করে দিয়ে জীবনযাপনের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থও দেওয়া হয়। ইহুদীদের স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে দেওয়া হবে বলে ব্রিটেন প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই প্যালেস্তাইন ভূখণ্ডে ইহুদীদের আনাগোনা শুরু হয়। ব্রিটিশদের সাহায্য নিয়ে প্যালেস্তানীয়দের এবার উৎখাত করা শুরু করে ইহুদীরা। শুরু হয় তীব্র সংঘাত।
ইজরায়েল গঠিত
কয়েকবছরের মধ্যে হাজার থেকে ইহুদীদের জনসংখ্যা কয়েক লক্ষে পৌঁছে যায়। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশরা ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদ থেকে এই অঞ্চলকে মুক্ত করে চলে গেলেও ততদিনে ইহুদীরা জাঁকিয়ে বসেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জও সেইসময়ে হস্তক্ষেপ করে প্যালেস্তাইনকে দুই ভাগে বিভক্ত করে দেয়। একটি অংশ ইজরায়েল নামে পরিচিত হয়। বলা হয়, জেরুজালেম রাষ্ট্রসংঘের দ্বারাই পরিচালিত হবে।
প্যালেস্তাইন স্বাধীনতা
দেশভাগ ও অধিকার নিয়ে দীর্ঘ বিবাদ চলার পরে ১৯৮৮ সালে প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন ও প্যালেস্তাইন জাতীয় পরিষদ প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। যদিও এই অংশের দেখভাল করছিল রাষ্ট্রপুঞ্জই। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি সাক্ষর করেন প্যালেস্তাইনের নেতা ইয়াসির আরাফত। যা তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কার এনে দিয়েছিল। তবে অভিযোগ, ওই এলাকায় প্যালেস্তানীয়দের উপরে অত্যাচার থামেনি।
প্যালেস্তানীয়দের দাবি
ঘটনা হল, ১৯৬৭ সালের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের আগে প্যালেস্তানীয়দের দখলে যতটুকু ভূখণ্ড ছিল সেই সীমারেখা অনুযায়ী প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে হবে। মেহমুদ আব্বাসও ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগের সীমান্তের ভিত্তিতে প্যালেস্তাইনকে জাতিসংঘের সদস্যপদ দেওয়ার আহ্বান জানান। যা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে সবসময়ই বিরোধিতা জানিয়ে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমনকী অনুদান বন্ধের হুমকিও দিয়েছে।
আমেরিকার সহযোগিতা
অন্যদিকে ইজরায়েলকে প্রথম থেকেই আমেরিকা আর্থিক দিক থেকে শুরু করে সবরকম সাহায্য করে আসছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থী হিসাবে প্রচারে বলেছিলেন ক্ষমতায় এলে জেরুজালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করবেন। সেই পথে হেঁটেই ফের একবার আরব বিশ্বে হইচই বাঁধিয়ে সেই ঘোষণা করেছেন তিনি। এখন দেখার আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এর কী প্রভাব পড়ে।