বঙ্গ বিজেপিতে যেভাবে বেনোজল ঢুকছে, তাতে পদ্মও না ভেসে যায়
লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরোতে না বেরোতেই পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের শিবিরে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন।
লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরোতে না বেরোতেই পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের শিবিরে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। সদস্য, কাউন্সিলর, বিধায়ক কেউই থেমে নেই বিজেপির দিকে পা বাড়ানো থেকে। বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক সময়ের সেনানী মুকুল রায়-এর জন্যই সম্ভব হয়েছে এই ভাঙন। কারণ তিনি সংগঠনের দিকটা চেনেন হাতের তালুর মতো। কিন্তু এই মুহূর্তে তৃণমূলের সংসার ভাঙ্গনের বিষয়টি বিজেপির কাছে বড় রাজনৈতিক জয় মনে হলেও দীর্ঘ মেয়াদে কি তা আদৌও লাভজনক হচ্ছে?
যে কেউ ঢুকে পড়ছে বিজেপিতে; ছাঁকনি লাগাবে কে?
প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে বীরভূমে তৃণমূলের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার পরে। বুধবার, ২৯ মে, দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন লাভপুরের এই বিধায়ক যিনি এক সময়ে বাম শিবিরে ছিলেন এবং পরে জেলার তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের হাত ধরে তৃণমূলে আসেন। মনিরুলের সঙ্গে এদিন গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন আরও কয়েকজন যাদের মধ্যে রয়েছেন নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা যুব সভাপতি গদাধর হাজরা, নিমাই দাস এবং জেলার যুব সংগঠনের সংখ্যালঘু মুখ মহম্মদ আসিফ ইকবাল।
মনিরুলের বিজেপিতে প্রবেশ নিয়ে বেশ বিরক্ত দলের নিচুতলার কর্মীরা। একে তো মনিরুলের বিরুদ্ধে গম্ভীর অভিযোগ রয়েছে যে তিনি অতীতে তিন সিপিএম সমর্থককে পায়ের তল দিয়ে মেরে ফেলেছিলেন। পাশাপাশি জেলার বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, তৃণমূলে থাকাকালীন মনিরুল যেভাবে বিজেপির সদস্যদের সঙ্গে ব্যবহার করেছেন তাতে তাঁর বিজেপিতে যোগদান তাঁরাও ভালো চোখে দেখছেন না। রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় যদিও বলেছেন যে বিজেপি যাকে তাকে দলে নেবে না, কিন্তু সংগঠন সেভাবে এখনও পোক্ত না হওয়া দলের মধ্যে ছাঁকনি লাগাবে কে?
সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত, যিনি এবারে বিজেপির হয়ে লড়েন হাওড়া কেন্দ্রে এবং পরাজিত হন তৃণমূলের প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে, তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মনিরুলের বিজেপিতে ঢোকা নিয়ে। পাশাপাশি এক হাত নেন অনুপম হাজরা, যিনি নিজেও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে এবারে যাদবপুর কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচন চলাকালীন অনুব্রতর সঙ্গে আলিঙ্গন এবং পরে আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেনের সঙ্গে ছবি তোলা ইত্যাদি বিষয়ে রন্তিদেব সমালোচনা করেন অনুপমের। মনিরুলকে বিজেপিতে ঢোকানোর পিছনেও অনুপমের হাত রয়েছে বলে রন্তিদেব মন্তব্য করেন। জানতে চান, অনুপমের পরিকল্পনায় আর কী কী আছে।
বিজেপি আপাতত আত্মহারা তৃণমূলের গড় ধসিয়ে কিন্তু...
বিষয়টি হচ্ছে বিজেপি একদিকে যেমন তৃণমূলের কৌশলেই তৃণমূলকে কোনঠাসা করতে চাইছে, অন্যদিকে সেই কৌশল একটি পর্যায়ের পরে যে বুমেরাং হতে পারে সেই খেয়াল রাখছে না। গেরুয়া শিবিরের মাথায় রাখা প্রয়োজন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন পোড়খাওয়া রাজনীতিকও কিন্তু তাঁর দলের সেই অন্য দল ভাঙিয়ে কলেবর বৃদ্ধির কৌশলের বুমেরাং ঠেকাতে পারছেন না আজকে। দলছুটদের নিয়ে তৈরী দল কিন্তু আগাগোড়াই আলগা থাকে এবং তার পতনও হয় অনিবার্য। আর পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির তো একটি মমতাও নেই; নেতৃত্ব এখনও মজবুত নয়। ভোট ও আসন বেড়েছে বলে যদি আত্মহারা হয়ে তারা ভাবতে শুরু করে যে বিজেপি ক্রমেই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বঙ্গের রাজনীতিতে, তবে তা ফের মমতারই মতো প্রকাণ্ড বুল ছাড়া আর কিছুই হবে না।
মনিরুলের বিজেপিতে যোগদান ইতিমধ্যেই নেতিবাচক সাড়া ফেলেছে। বেনোজল আটকানো না বন্ধ করলে কিন্তু সেই বেনোজলেই ভেসে যাবে পশ্চিমবঙ্গের পদ্ম।
[আরও পড়ুন: সরকারেও আছি, বিরোধিতাতেও আছি; মমতার নৈহাটি অভিযান বোঝাচ্ছে তৃণমূলের সঙ্কট কতটা গভীর]
[আরও পড়ুন:বারাণসীতে ঘরোয়া বৈঠকে মিলিত হবেন মোদী-জিনপিং]