অযোধ্যা নয়, গোরক্ষপুরই যোগী আদিত্যনাথের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আসন
বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল আসন্ন উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে অযোধ্যা থেকে ভোটে লড়বেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ। রাজ্যের প্রায় সমস্ত সংবাদমাধ্যম ফলাও করে এই সংবাদ প্রচার করেছিল। কারণ বলা হচ্ছিল, এই মুহূর্তে অযোধ্যা আসনটি হল বিজেপির জন্য সবচেয়ে সুরক্ষিত আসন। তবে এমনটা হয়নি। এবং শেষপর্যন্ত যোগী আদিত্যনাথ গোরক্ষপুর আসন থেকেই ভোটে লড়বেন। যদি নিজের জায়গা সহজে ছেড়ে দিয়ে যোগী অযোধ্যা চলে যেতেন, তাহলে তা তাঁর জন্য খুব একটা ভালো বিজ্ঞাপন হতো না।
যোগী আদিত্যনাথকে উত্তরপ্রদেশ তথা সারা ভারতের হিন্দু রাজনীতির পোস্টার বয় বলা হয়। মাঝখানে খবর রটেছিল যোগী অযোধ্যা থেকে ভোটে লড়বেন বলে আগেভাগেই সেখানে লোক পাঠিয়ে জমি শক্ত করার চেষ্টা করছেন। এবং একইসঙ্গে তিনি বারবার অযোধ্যা যাচ্ছেন, যাতে ভোটের প্রচারের আগেই নিজের সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ভাবনা তৈরি করা যায়। এমনকী এটা রটে গিয়েছিল যে যোগী আদিত্যনাথ অযোধ্যায় তাঁর কাছের লোকদের দিয়ে স্মার্টফোন বিলি করিয়েছেন, যাতে ভোটযুদ্ধে জিততে অসুবিধে না হয়। তবে শেষ অবধি এই রটনা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
কারণ যোগী আদিত্যনাথ বরাবরই সকলের থেকে আলাদা। তিনি এমন একজন যিনি নরেন্দ্র মোদীর পছন্দকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, গুরুত্ব নাও দিতে পারেন। একে শর্মার উদাহরণ আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে। প্রচণ্ড চাপ থাকা সত্বেও নিজের মন্ত্রিসভায় শর্মাকে জায়গা দেননি যোগী। তাঁকে কার্যত হাতের পুতুল বানিয়ে রাখা হয়েছে। খুব বেশি হলে তিনি নরেন্দ্র মোদীর বারাণসী এলাকায় দেখভালের দায়িত্বে থাকেন। তার বেশি তাঁর কোনও ক্ষমতা নেই।
যোগী আদিত্যনাথ বরাবর আরএসএসের চোখের মণি। একসময় শোনা গিয়েছিল তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে নতুন কাউকে আনা হবে। কিন্তু সেই ঝুঁকি বিজেপি নিতে পারেনি। কারণ যোগীর যা প্রভাব তাতে এমন কিছু করলে হিতে বিপরীত হতে পারত বিজেপির জন্য। ফলে তেমন কিছু হয়নি। এবং যোগী নিজের মতো করেই রাজ্যপাট সামলেছেন।
তার সবচেয়ে বড় কারণ হল, যোগী আদিত্যনাথ শুধু একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তা নন, তিনি একজন ধর্মীয় প্রধান। খুব কম বয়সে তিনি সন্ন্যাসী হয়েছেন। বাড়ি ছেড়ে গোরক্ষপুর আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর গুরু ছিলেন মহন্ত অদ্বৈতনাথ। তাঁর প্রয়াণের পরে গোরক্ষপীঠ বা গোরক্ষনাথ মন্দিরের প্রধান হয়েছেন এই যোগী আদিত্যনাথ। ফলে যোগী আদিত্যনাথের শুধু রাজনৈতিক নয়, ধর্মীয় প্রভাব রয়েছে। যা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। সেই কারণেই তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের খুব কাছের মানুষ।
যে নিন্দুকেরা বলে আসছিলেন গোরক্ষপুর থেকে দাঁড়িয়ে যোগী আদিত্যনাথ জিততে পারবেন না, তা কোনওভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিজেপির জন্য উত্তরপ্রদেশে সবচেয়ে সুরক্ষিত কেন্দ্র হল এই গোরক্ষপুর। বিজেপির সবচেয়ে খারাপ সময়েও দুহাত ভরে যোগী আদিত্যনাথকে ভোট এবং ভালোবাসা দিয়েছেন এখানকার মানুষ। তাই যোগী আদিত্যনাথ এইখানে খুব সহজেই জিতবেন। ভোটের ফলাফলেই তা স্পষ্ট হবে।