এবারের মার্কিন নির্বাচনে মুসলমান ভোট পেতে মরিয়া হিলারি এবং ট্রাম্প উভয়ই
মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন এতটাই উনিশ-বিশ যে সেদেশের এক শতাংশ মুসলমান ভোট পেতেও যান লড়িয়ে দিচ্ছেন হিলারি এবং ট্রাম্প দু'পক্ষই; তবে এই মুহূর্তে অ্যাডভান্টেজ হিলারি
মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পদপ্রাথী হিলারি ক্লিন্টনের ইমেল বিতর্ক নিয়ে এফবিআই প্রধান জেমস কোমে নতুনভাবে ঘৃতাহুতি দেওয়ার ফলে ফের জমে উঠেছে প্রাক-নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
গত রবিবার (অক্টোবর ৩০) প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে হিলারির ব্যবধান কমে এসেছে অনেকটাই এবং ভোটারদের পছন্দের তালিকায় দুই প্রার্থীর অবস্থা নেতিবাচক।
আর এই অবস্থায়, দুই পক্ষের কাছেই আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে মুসলমান ভোট। ওয়াশিংটনের পিউ রিসার্চ সেন্টার-এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৩৩ লক্ষ, যা সেদেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ।
অন্যান্য গোষ্ঠী যেমন ল্যাটিনো বা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় তা কম হলেও এবারে হিলারি-ট্রাম্প লড়াই এতটাই উনিশ-বিশ যে এই এক শতাংশ মুসলমান কাকে ভোট দেবেন, গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তাও। বিশেষ করে আমেরিকার যে সমস্ত 'সুইং' প্রদেশে যথেষ্ট সংখ্যক শহুরে মুসলমানের বাস, সেখানে ৮ই নভেম্বরের ফলাফল কোনদিকে যায় তার উপরে অনেকটাই নির্ভর করছে এবারের নির্বাচন।
ট্রাম্পের শিবির নিঃসন্দেহে মুসলমানদের বিশ্বাস পেতে ব্যর্থ হয়েছে প্রথমদিকে কারণ এবারের নির্বাচনী প্রচারে মুসলমানদের লক্ষ্য করে তিনি একবগ্গা আক্রমণ চালিয়ে গিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার পক্ষেও সওয়াল করেন।
জুলাই মাসে দলের কনভেনশনের সময়ে প্রয়াত মার্কিন মুসলমান সৈন্যের পিতা-মাতার সঙ্গেও তিনি বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন।
কিন্তু হিলারির সঙ্গে লড়াই যত কঠিন হয়েছে, তত ট্রাম্প শিবির ফের মুসলমানদের পাশে পেতে সচেষ্ট হয়েছে। এমনকী, মুসলমানদের আস্থাভাজন হতে রিপাবলিকানরা মুসলমান সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছে।
পাকিস্তানের প্রথম সারির দৈনিক 'ডন'-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সেই সমস্ত সংবাদমাধ্যমের তালিকায় তাঁদের নামও রয়েছে। মুসলমান দুনিয়ায় ব্যবসায়ী ট্রাম্পের বিচরণ যে প্রায়ই ঘটে থাকে, সেসব বলে তাঁদের মন জয় করার চেষ্টা করেছে রিপাবলিকান প্রচার দল।
অবশ্য, চুপ করে বসে নেই হিলারিও। ট্রাম্প মৃত মার্কিন সৈন্য ক্যাপ্টেন হুমায়ুন খানের পিতামাতা খিজর খান এবং মাতা জাবালা খানকে যেভাবে আক্রমণ করেছিলেন তার স্মৃতি উস্কে দিতে খিজরকে নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করে। তাতে ট্রাম্পের মুসলমান-বিরোধী কথাবার্তার সম্পর্কে খিজর খান বলেন যাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, তাঁদেরকেও ট্রাম্প ন্যূনতম শ্রদ্ধা দেখতে ব্যর্থ। বিভিন্ন 'সুইং' রাজ্যে ডেমোক্র্যাটরা এই ভিডিওটির প্রচার চালাচ্ছে যাতে মুসলমান ভোটাররা শেষ পর্যন্ত তাঁদের ঝুলিতেই নিজের ব্যালটটি দেন।
ডেমোক্র্যাটদের আশার কথা, দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস বলে একটি সংগঠন এই সপ্তাহে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করে যাতে বলা হয়েছে যে ৭২ শতাংশ মানুষ ক্লিন্টনকে ভোট দেওয়ার পক্ষে আর মাত্র ৪ শতাংশ ট্রাম্পের পক্ষে।
দল হিসেবেও ডেমোক্র্যাটরা এগিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে সমীক্ষাটি। তাতে বলা হয় যেখানে প্রতি পাঁচজন মুসলমানের মধ্যে তিনজন মনে করেন ডেমোক্র্যাটরা তাঁদের প্রতি বেশি বন্ধুভাবাপন্ন, সেখানে প্রতি দশজন মুসলমানের মধ্যে একজনও রিপাবলিকানদের প্রতি আস্থাশীল নন।
রিপোর্টটিতে এও বলা হয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৮৬ শতাংশ মুসলমান এবারে ভোট দেবেন বলেন ঠিক করেছেন। অর্থাৎ, তাঁরা তাঁদের 'বক্তব্য' পেশ করতে বদ্ধপরিকর।