ফিরদৌসকে ভোটের প্রচারে নামানো তৃণমূল কংগ্রেসের সেমসাইড গোল
পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে এবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে দুই বাংলাদেশী অভিনেতার যোগদান চারদিকে শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে এবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে দুই বাংলাদেশী অভিনেতার যোগদান চারদিকে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। একদিকে ফিরদৌস রায়গঞ্জে আসনে তৃণমূলের প্রার্থীর প্রচারে অংশ নেন, অপরদিকে গাজী আব্দুন নূর নামে আরেক অভিনেতা কলকাতার দমদম কেন্দ্রে শাসকদলের প্রার্থীর হয়ে প্রচার জমাতে গিয়ে বিরোধীদের রোষানলে পড়েন। ফেরদৌসকে ভারত সরকারের তরফ থেকে অবিলম্বে দেশ ছাড়ার কথা বলা হয়, তাঁর ভিসাও বাতিল হয়।
বাংলাদেশী শরণার্থীদের নিয়ে যেখানে প্রবল হৈচৈ, সেখানে এমন কাণ্ড বাঞ্চনীয় নয়
তবে প্রক্রিয়াগত সমস্যা থেকেও যেটা বড়, তা হল হিন্দুত্ববাদী বিজেপি এর মধ্যে বড় রাজনৈতিক রসদ খুঁজে পায়। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন প্রধান রাহুল সিনহা, যিনি এবারের নির্বাচন লড়ছেন কলকাতা উত্তর কেন্দ্র থেকে, তিনি প্রবল দাপটের সঙ্গে বিরোধিতা করে বলেন যে বাংলাদেশী অভিনেতাদের এই প্রচারে যোগদান আসলে "রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ"।
আর এখানেই গেরুয়াবাহিনীর সবচেয়ে বড় জয় এই বিষয়টিতে।
তৃণমূল কংগ্রেসের কে বা কারা এই পরিকল্পনার পিছনে ছিলেন তা জানা নেই, কিন্তু কাজটি যে অত্যন্ত কাঁচা হয়ে গিয়েছে, তা বুঝতে অসুবিধে হয় না।
ফিরদৌস বা নূর-এর উদ্দেশ্য খারাপ নয় কিন্তু তাঁরা বিষয়ের গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ
ফিরদৌস বা নূর-এর উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। এপার বাংলায় তাঁদের, বিশেষ করে ফিরদৌসের শিল্পীসুলভ জনপ্রিয়তার নিরিখে তাঁরা ভালো মনেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন প্রচারে সামিল হওয়ার জন্যে। কিন্তু বিজেপির রণনেতারা জানেন যে ভোটের রুক্ষ লড়াইয়ের ভূমিতে শিল্পী-শিল্পের সহজ ভাবানুভূতি বেশি কার্যকর নয়, বিশেষ করে এই সময়ে যখন এক আগ্রাসী হিন্দু জাতীয়তাবাদের মোড়কে রাজনীতি পরিবেশিত হচ্ছে। রাহুল সিনহার "রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ" কথাটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ। যেহেতু বিজেপি নাগরিকপঞ্জী নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে তুমুল লড়াই করছে আর সেই সুবাদে জাতীয় সুরক্ষা একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীরা এই তর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন, তাই ওই দেশ থেকে কয়েকজন অভিনেতা ভারতের নির্বাচনে পরোক্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি বিজেপির এজেন্ডাকেই চাঙ্গা করেছে।
[আরও পড়ুন:LIVE লোকসভার দ্বিতীয় দফার মহারণ ৯৫টি কেন্দ্রে]
সেলেব্রিটির ভিড়ের মধ্যে তৃণমূলের বোধহয় মাথাতেই আসেনি কী হতে পারে
তৃণমূল এই দিকটিকে বোধহয় ধর্তব্যের মধ্যেই আনেনি। রাজ্যের শাসকদল যেহেতু নির্বাচনের আঙিনায় অভিনেতা-সেলেব্রিটিদের নামাতে দু'বার ভাবে না, ফিরদৌস এবং নূর-এর কথাও তারা হয়তো তলিয়ে ভাবেনি; ভেবে দেখেনি যে বাংলাদেশ থেকে আগত ওই দুই অতিথি এদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনওভাবে জড়িয়ে পড়লে তা তাদের সম্পর্কেই নেতিবাচক বার্তা পাঠাবে ভোটারদের কাছে। এই ঘটনা নিয়ে শোরগোল শুরু হলে তৃণমূলও দায় সেরে ফেলার চেষ্টা করলেও ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ব্যাপারটা দেশের সুরক্ষা সহ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে; ক্ষুণ্ণ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি।
এবারের অতি-জাতীয়তাবাদী সময়ে এই নির্বাচনে এপার বাংলা-ওপার বাংলার ভাব-ভালোবাসার সুড়সুড়িতে কাজ হওয়া মুশকিল। উল্টে তৃণমূলকে এমন ন্যারেটিভ সাজাতে হবে যাতে তারা বোঝায় যে দেশের সুরক্ষার বিষয়ে কোনও সমঝোতা করে না। কিন্তু ফিরদৌস-নূর বিতর্ক দেখাল যে যে পথে হাঁটার কথা, তৃণমূল হেঁটেছে ঠিক তার বিপরীত দিকে।
[আরও পড়ুন:পশ্চিমবঙ্গ লোকসভা নির্বাচন ২০১৯-এর সব রকমের আপডেট পেতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে]