রোজভ্যালির ১৫ হাজার কোটির দুর্নীতিতে চাঞ্চল্যকর মোড়, দেড় বছর পর গ্রেফতারি শুরু
সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর চিটফান্ড দুর্নীতিতে নাম উঠে আসে রোজভ্যালির। প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার এই দুর্নীতিতে এক সপ্তাহের মধ্যে ধরা পড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের দু'জন সাংসদ। জনপ্রিয় অভিনেতা-সাংসদ তাপস পালের পর গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
রোজভ্যালিকাণ্ডে এই দুই অগ্রগতিতেই রাজ্য-রাজনীতি উথালপাথাল। বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। লাগাতার আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূল। শুধু কলকাতা শহর বা শহরতলি নয়, সুদীপের গ্রেফতারির পর বিক্ষোভ-আগুনে জ্বলছে গোটা রাজ্য। দিল্লিতেও ধরনা কর্মসূচি নিয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দোশজুড়ে আন্দেলনের ডাক দিয়েছেন।

১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই চিটফাণ্ড কোম্পানি। কাজল কুণ্ডুর হাত ধরে যে কোম্পানি ডান মিলতে শুরু করেছিল, তাঁর মৃত্যুর পর ভাই গৌতম কুণ্ডু দায়িত্ব নেন। ২০১৩ সালে সারদা কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরে পড়ে সমস্ত চিটফান্ডগুলিই।
তদন্ত নেমে সিবিআই বা ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জানতে পারে, সারদার মতো দুর্নীতিতে যুক্ত রোজভ্যালিও। সারদায় জড়িয়ে যায় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বহু নেতা নেত্রীর নাম। রোজভ্যালিতেও উঠে আসে তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের নাম। কিন্তু ২০১৫ সালের মার্চ মাসে গোয়েন্দা-নজরে এলেও কোনও নেতা-নেত্রী গ্রেফতার হননি এর আগে।
- ২৫ মার্চ, ২০১৫। রোজভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুকে গ্রেফতার করে ইডি। প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। গ্রেফতারির আগে বার দশেক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
- রোজভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্তে শুরু করে তল্লাশি অভিযানে নামে সিবিআই। ২৬০০-র বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় ২৯৫ কোটি টাকা। রোজভ্যালির নানা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
- ১৯ জুন, ২০১৫। গ্রেফতার করা হল রোজভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুর ডান হাত বলে পরিচিত অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি রোজভ্যালি ইউনিয়নের মাথা ছিলেন। অমিতকে মাধ্যম করেই গৌতম কুণ্ডু বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
- ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫। রোজভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতার করা হয় সংস্থার এমডি শিবময় দত্তকে। সেইসঙ্গে আরও এক আধিকারিক অশোক সাহাকেও গ্রেফতার করা হয়। ত্রিপুরা সংস্থার সর্বময় কর্তা ছিলেন অশোক সাহা।
- দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৬-র শেষে ৩০ ডিসেম্বর রোজভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতার হলেন তৃণমূলের অভিনেতা সাংসদ তাপস পাল। এই প্রথম রোজভ্যালিকাণ্ডে গ্রেফতার করা হল তৃণমূলের কোনও নেতাকে।
- সবথেকে চাঞ্চল্যকর আপডেট তাপস পাল গ্রেফতারের চারদিন পরই মঙ্গলবার অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি গ্রেফতার হলেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। চাঞ্চল্যকর মোড় নিল রোজভ্যালি তদন্ত।