সারদা কাণ্ড : 'বিক্ষিপ্ত স্মৃতিভ্রংশ'-এ ভুগছেন মদন মিত্র
মদনবাবুকে শুক্রবার দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয়। তারপর সন্তোষজনক উত্তর না মেলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। মদনবাবুকে জেরার দায়িত্বে ছিলেন সিবিআই-এর একেবারে দুঁদে অফিসাররা। যদিও সেদিন একই ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছিলেন মদন। সিবিআই-এর জেরায় মদন স্পষ্ট জানিয়েছিলেন তিনি সুদীপ্ত সেনকে নাকি চেনেনই না। মদনের সামনে প্রমাণ ছুঁড়ে দেওয়া সত্ত্বেও সেই একই কথা বলতে থাকেন তিনি।
তৃণমূলের জনসভার জন্যও টাকা দিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন?
মদন মিত্রকে যে প্রশ্নগুলি করা হয়েছে, তার মধ্যে মুখ্য একটি প্রশ্ন হল, তৃণমূলের জনসভার জন্য কী সুদীপ্ত সেন টাকা ঢেলেছিলেন? মদন মিত্রর বিরুদ্ধে এও অভিযোগ ছিল যে বড় বড় রাজনৈতিক জনসভাগুলিতে যেখানে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, সেই টাকা নাকি দিয়েছেন সুদীপ্ত সেন। এবং মদন মিত্র সেক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় কাজ করেছেন মদন মিত্র।
আরও পড়ুন : মদন মিত্র জেলে যাবেন সে ভবিষ্যদ্বাণী হয়েছিল ২০ বছর আগেই!
সিবিআই-এর তরফে মদনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সুদীপ্ত সেনের মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে গিয়ে একাধিকবার সারদা কর্তার সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। সিবিআই-এর ওই আধিকারিকের কথায়, এই সব বৈঠক নিয়ে মদনবাবুর বিরুদ্ধে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সারদাকর্তার মুখোমুখি বসিয়ে মদনবাবুকে জেরা করা হবে। এই সমস্ত বৈঠকে তৃণমূলের অন্যান্য কারা ছিলেন সে বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মন্ত্রীকে। তবে নিজের সহকর্মীদের বিষয়ে মদনবাবু অত্যন্ত রক্ষণশীল, বলেই মুচকি হাসলেন ওই তদন্তকারি অফিসার।
মদন মিত্রর যোগ
সিবিআই-এর তরফে জানানো হয়েছে, সারদা কাণ্ডে ৫ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মদন মিত্রর যোগ নিয়ে মুখ খুলেছে। প্রথম নামটি অবশ্যই কুণাল ঘোষ। মদনবাবুর বিরুদ্ধে মামলা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও এনেছেন তিনি।
সুদীপ্ত সেন ঘণিষ্ঠ দেবযানী মুখোপাধ্যায়ও সিবিআই-এর কাছে মদন মিত্রর যোগ স্বীকার করেছেন। একাধিকবার মদনবাবু যে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে দেখা করেছেন সে বিষয়টি দেবযানী জানিয়েছে সিবিআইকে। বাপি করিম এবং অজিতেশ ভট্টাচার্যও এবিষয়ে সিবিআইকে জানিয়েছে যে মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে ৫ বারের বেশি বৈঠক করেছেন মদনবাবু।
বিক্ষিপ্ত স্মৃতিভ্রংশ
সিবিআই আধিকারিকদের কথায়, এই সারদা মামলায় মদন বাবুর মুখ থেকে কথা বের করাটা এখনওপর্যন্ত জেরাগুলির মধ্যে সবথেকে কঠিন কাজ। মদনবাবুর প্রচন্ড চাহিদা এবং জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যেই মাঝে মাঝে বলছিলেন তাঁর খুব ঘুম পাচ্ছে। সত্যি কথা বলতে, তাঁকে প্রয়োজনীয় বিশ্রামের সময় দিয়েছি আমরা। এমনকী যতটা তিনি চান। প্রথমে তো আমরা যাই ওনাকে জিজ্ঞাসা করছি তাই অস্বীকার করে দিচ্ছিলেন তিনি। শুক্রবার তিনি বলে যাচ্ছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। তারপরে যখন একই প্রশ্নমালা তাঁর সামনে তুলে ধরা হয় তিনি বলেন তাঁর কিছুই মনে পড়ছে না।
সিবিআই-তদন্তকারী আধিকারিকদের কথায়, যে কোনও অভিযুক্তের ক্ষেত্রেই এটা একটা বড় যুদ্ধকৌশল। প্রথমে সবকিছু অস্বীকার কর তারপর ঘুরে গিয়ে বল যে আমার কিছু মনে নেই।
যোগাযোগ সেই ২০০৯ সাল থেকে
২০০৮ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থেকে পথচলা শুরু করেছিল সারদা গোষ্ঠী। ২০০৯ সালে এই বিষ্ণুপুর থেকেই উপ-নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন মদনবাবু। তখন বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় থাকলেও মদনবাবুর দাপটে কুঁকড়ে থাকত প্রশাসন। সেই সময় সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে মদনবাবু অনেক সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। ২০১১ সালে পালাবদলের সেই ঐতিহাসিক ভোটে কামারহাটি আসন থেকে জেতেন মদন মিত্র। মন্ত্রীও হন। তার পরও তিনি প্রত্যক্ষভাবে সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতেন। সারদা এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন তিনি।