রাজীবকে আক্রমণ মোদীর : মরা মানুষকে গালিগালাজ করা দেশের প্রধানমন্ত্রীকে শোভা পায় না
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে কংগ্রেসকে লাগাতার আক্রমণ করে যাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক কৌশল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে কংগ্রেসকে লাগাতার আক্রমণ করে যাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক কৌশল। যেহেতু তিনি এমন একটি রাজ্য থেকে উঠে এসেছেন যেখানকার মূল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হচ্ছে কংগ্রেস এবং বিজেপি এবং কেন্দ্রেও কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের কবরের উপরেই তাঁর উত্থান, তাই ক্রমাগত কংগ্রেসকে আক্রমণ না করতে থাকলে মোদীর এবং তাঁর দলের রাজনৈতিক মাইলেজ কমে যাওয়ার আশু সম্ভাবনা। সারা ভারতের প্রেক্ষিতেও কংগ্রেসকে বিজেপির দরকার। কারণ রাষ্ট্রীয় দল হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে গেলে প্রাচীন দলটির সম্পূর্ণ বিকল্প হিসেবে বিজেপির প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। বিভিন্ন রাজ্যে তাই আঞ্চলিক দলের কাছে বিজেপি এখন পরাজেয় হলেও তার প্রধান চিন্তা হচ্ছে 'কংগ্রেস-মুক্ত' ভারত। যদিও সত্যি সত্যিই ভারত কংগ্রেস-মুক্ত হলে তাতে বিজেপির কতটা সুবিধে হবে, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
শালীনতার সমস্ত মাত্রা ছাড়ালেন মোদী
কিন্তু কংগ্রেসকে মুহুর্মুহু আক্রমণ করলেও এবারে মোদী যেটা করলেন, তা সত্যিই বিস্মিত করে। গত শনিবার, ৪ মে, উত্তরপ্রদেশের একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেনজিরভাবে আক্রমণ করলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে। পরোক্ষে রাজীবের সময়কার বোফোর্স কেলেঙ্কারির ইঙ্গিত করে বললেন যে 'মিস্টার ক্লিন' হিসেবে শুরু করলেও রাজীবের জীবন সাঙ্গ হয়েছিল 'পয়লা নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত' হিসেবে। এছাড়াও রাজীবকে "অহংকারী"ও বলেন মোদী।
মোদীর পরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বিজেপির এনডিএ জোটসঙ্গী শিরোমণি অকালি দলও।চুরাশির দাঙ্গার প্রসঙ্গে তারা রাজীবকে আখ্যা দেয় দেশের সবচেয়ে বড় 'মানব ঘাতক' হিসেবে। বলে শিখদের বিরুদ্ধে দাঙ্গাবাজদের উস্কানো এবং তাদের আশ্রয় দেওয়া, দু'টো কাজই রাজীব করেছিলেন।
মোদী কংগ্রেস-বিরোধিতার জিগির জাগিয়ে রাখতে চান যাতে জনগণ খেপে থাকে
মোদী চেয়েছিলেন ঠিক এই পথেই গল্পটা যাতে এগোয়। যত কংগ্রেসকে তুলোধোনা করতে থাকেনবেন তিনি, তত সাধারণ মানুষ তাঁর পক্ষেই কথা বলতে থাকবে। তবে একই সঙ্গে, এই লম্বা নির্বাচনী মরশুমে লাগাতার কংগ্রেস বিরোধিতা চালিয়ে যেতে হলে শালীনতার মাত্রাও বজায় যে আর থাকবে না, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু আর পাঁচজন চুন-পুঁটি নেতা যা বলবে, একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখে সেই একই আক্রমণ কেন শোনা যাবে? আর বার বার নির্বাচন কমিশনের নিশানায় এসেও প্রধানমন্ত্রীর ভাষা প্রয়োগে কোনও পরিবর্তন নেই কেন?
প্রয়াত মানুষের সম্পর্কে এমন কথা কেন? যা বিচার করার আদালত করেছে
প্রথমত, একজন প্রয়াত ব্যক্তির সম্পর্কে এমন বক্তব্য খুবই অসমীচীন। আর আদালত যেখানে রাজীবকে মাফ করে দিয়েছে, সেখানে এমন কথার কোন ও ভিত্তিই নেই। আর মোদীর এই আক্রমণের মূল কারণ যদি হয় রাজীব-পুত্র রাহুলের "চৌকিদার চোর হ্যায়" কটাক্ষ, তবে তার জন্যে তোমহামান্য শীর্ষ আদালত ইতিমধ্যেই কংগ্রেস সভাপতিকে ভর্ৎসনা করেছে। তবে পাল্টা "তোর বাপ চোর" বলা কেন? আর তিন দশক আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে নিয়ে নতুন করে কাদা ঘাঁটাঘাঁটি করেই বা কী লাভ হবে? দেশে কি আর ইস্যু নেই?
কংগ্রেসীরা বলছেন লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফা সোমবার, ৬ মে। ওই দিন উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেসের দুই গান্ধী কেন্দ্র রায়বারেলি ও আমেথিতে ভোটগ্রহণ। আর তার ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রীর এরকম মন্তব্য সাহায্য করবে তাঁদের দলকেই।
[আরও পড়ুন: আমেঠিতে বুথ দখলের নেপথ্যে খোদ রাহুল গান্ধী! অভিযোগ স্মৃতির ]
নির্বাচন নয়, মোদীর এই ভাষার প্রয়োগ বিচার্য হওয়া উচিত নৈতিকতার নিরিখে
কংগ্রেস মোদীর এই মন্তব্যে উপকৃত হবে কিনা, সেটা জানা যাবে ২৩ মে। কিন্তু ভোটের নিরিখে নয়, মোদীর এই অসমীচীন মন্তব্যের বিচার হওয়া দরকার তার নৈতিকতার নিরিখে। রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কা মোদীকে পাল্টা জবাব দিলেও রাহুল কিন্তু শান্তভাবে এর উত্তর দিয়েছেন এবং তার মধ্যে অনেকেই তাঁর পরিণতমনস্কতার ছাপ দেখতে পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষাতেও সেই পরিণতমনস্কতার ছোঁয়া দেখার প্রত্যাশা ছিল। সেটা না দেখতে পাওয়া একশো ত্রিশ কোটি ভারতবাসীর দুর্ভাগ্য।
[আরও পড়ুন:বাম-তৃণমূল-বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহারের বিভিন্ন বিষয়ের তুলনা একনজরে]