মিমি, নুসরতরা প্রচারে যে ভাষণ দিচ্ছেন, তার সারবস্তু শূন্য; সেলেব্রিটিদের ভোটে নামানোর অর্থ কী?
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে সেলেব্রিটিদের প্রার্থী করে এক কার্যকরী কৌশল নিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে সেলেব্রিটিদের প্রার্থী করে এক কার্যকরী কৌশল নিয়েছেন। তারকা প্রার্থী দাঁড় করানোর বেশ কিছু সুবিধে থাকে সংশ্লিষ্ট দলের নেতৃত্বের কাছে আর মমতার কাছেও তা অজানা নয়। সবসময় যে তারকা প্রার্থী দাঁড় করানোর চাল খেটে যায় তা নয়, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা সফল হয়।
দু'হাজার ঊনিশের নির্বাচনেও তৃণমূল নেত্রী দাঁড় করিয়েছেন দুই কমবয়সী অভিনেত্রীকে - মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান। প্রথমজন দাঁড়িয়েছেন যাদবপুর কেন্দ্র থেকে আর দ্বিতীয়জন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট থেকে। দু'টি কেন্দ্রই তৃণমূলের জেতা কিন্তু তাও এবছরে দুই জায়গা থেকেই প্রার্থীবদল করেছেন নেতৃত্ব।
অভিনেতা রাজনীতিক খারাপ তা নন, কিন্তু রাজনীতিতে আসার আগে হোমওয়ার্ক জরুরি
রাজনৈতিক দলগুলি কাকে ভোটের প্রার্থী করবে তা তাদের ব্যাপার। অভিনেতা-অভিনেত্রী মানেই যে রাজনীতিতে অচল সেটা ভাবারও কোনও কারণ নেই। প্রয়াত মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগনও আগে অভিনেতা ছিলেন কিন্তু রাজনৈতিক জীবনে তিনি খ্যাতি কম পাননি। সেভাবে দেখলে প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও আগে একজন ক্রিকেট-খেলিয়ে ছিলেন কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁকে সে-দেশের এক নম্বর রাজনীতিক বললে ভুল হয় না।
কিন্তু এই উত্থানের কাহিনীগুলির পিছনে এক অধ্যাবসায় রয়েছে; অনেক পরিশ্রম রয়েছে। আমাদের দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে যাঁদের ভোটে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা রাতারাতি দেশনেতা বনে যান দলগুলির দাক্ষিণ্যে আর এখানেই সমস্যার মূল।
মিমি, নুসরতরা একঘেয়ে শেখানো বুলি আউড়ে যাচ্ছেন প্রচারে
মিমি এবং নুসরতের কয়েকটি নির্বাচনী প্রচার দেখছিলাম গত কয়েকদিনে। তাঁরা যে বক্তব্য রাখছিলেন তাতে গভীরতার ও বুদ্ধিমত্তার ছাপ রয়েছে, তা তাঁদের অতি বড় সমর্থকরাও প্রকাশ্যে বলবেন না। ওই চর্বিতচর্বণ "আমি দিদির লোক", "আপনাদের জন্যে কাজ করতে এসেছি" বা "ভোটের পরেও আমাকে দেখতে পাবেন" ইত্যাদি বুলি। মিমিকে একটি প্রচারে দেখা গেল মেজাজ হারাতেও; নুসরত আবার আক্রমণ করে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে, বললেন তিনি "ঢপের চপ" ছাড়া কিছুই দেননি।
মোদীকে আক্রমন করে বসছেন রাজনীতির নবাগতা; শুধু হাততালির জন্যে?
তোতাপাখির মতো শেখানো বুলি যে এই তারকা প্রার্থীরা ক্রমাগত আউড়ে চলেছেন তা একটি শিশুও বুঝবে। আর জনপ্রতিনিধিত্বের বিপদ এখানেই। রাজনীতিতে সবেমাত্র পা রাখা (তাও সক্রিয়ও নয়, স্রেফ প্রতিনিধিত্বমূলক) এই কন্যারা যেভাবে কথা বলছেন, তাতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে তাঁদের কোনও হোমওয়ার্ক বা পরিকল্পনা কিছুই নেই। জেতা আসন ধরে রাখার জন্যে যেটুকু করা প্রয়োজন, দলের ঘাড়ে পা রেখে সেটুকু করতে পারলেই তাঁরা কৃতার্থ। কিন্তু রাজনীতির এই বিনোদনকরণের মধ্যে আসল ইস্যুগুলির দিকেই কারও নজর নেই।
নুসরতের মোদীকে কটাক্ষ করাটা বেশ দৃষ্টিকটু লাগল। মোদী ভালো করেছেন না খারাপ, সে হিসেবে গণকে করতে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আর মমতার মুখে মোদীর বা মোদীর মুখে মমতার কটাক্ষ শুনতেঅবাক লাগে না কারণ তাঁরা পুরোনো রাজনৈতিক বৈরী। কিন্তু নবাগতরা যেভাবে এসেই প্রধানমন্ত্রী কিছুই করেননি ধরনের উক্তি ছুঁড়ে দিচ্ছেন স্রেফ সস্তা হাততালি কুড়োবেন বলে, তাতে পুরো চিত্রটিই আরও রঙ্গময় হয়ে ওঠে।