২৪ বছর পরে কাছাকাছি এলেন মায়াবতী-মুলায়ম; কী হয়েছিল লখনৌয়ের সেই রাতটিতে?
দীর্ঘ ২৪ বছর পরে শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, উত্তরপ্রদেশের মৈনপুরীতে নির্বাচনী প্রচারে এক মঞ্চে দেখা দিলেন রাজ্যের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমাজবাদী পার্টির (এসপি) মুলায়ম সিং যাদব
দীর্ঘ ২৪ বছর পরে শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, উত্তরপ্রদেশের মৈনপুরীতে নির্বাচনী প্রচারে এক মঞ্চে দেখা দিলেন রাজ্যের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমাজবাদী পার্টির (এসপি) মুলায়ম সিং যাদব এবং বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) মায়াবতী| রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে এ এক বিরল দৃশ্য কারণ উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে মুলায়ম ও মায়াবতীর সম্পর্ক অহি-নকুলের। কিন্তু এবারে রাজ্যে বিজেপিকে হারানোর জন্যে এই দুই দল হাতে মেলানোর ফলে এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে। আর এই মিলনের পিছনে রাজ্যের আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও এসপি-র বর্তমান হোতা অখিলেশ যাদবের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। মুলায়ম নিজে এই জোটের পক্ষপাতী না থাকলেও তিনি এখন দলের অতীত শক্তি আর অখিলেশ মায়াবতীর সঙ্গে হাত মেলানোর পক্ষে।
কিন্তু মুলায়ম এবং মায়াবতীর এমনতর বৈরী কারণ কী? ভারতের রাজনীতিতে এমন বৈরীর উদাহরণ যে নেই, তা নয়। উত্তরপ্রদেশের প্রতিবেশী রাজ্য বিহারেও সেখানকার দুই ভূমিপুত্র নীতীশকুমার এবং লালুপ্রসাদের মধ্যে সম্পর্ক কী তা সবাই জানে। এমনকী, বিজেপি হারাতে ২০১৫ সালে তাঁরা হাত মেলালেও দু'বছরও সেইসখ্য টেঁকেনি। নীতীশ ফিরে গিয়েছেন বিজেপির কাছেই।
নব্বইয়ের শুরুরদিকেএসপি, বিএসপিএকসাথেহয়েছিলবিজেপিকেহারাতে
মায়াবতীও মুলায়মের মধ্যে প্রথমদিকের সখ্যও ছিল সেই একই কারণে, বিজেপিকে ঠেকাতে| নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে বাবরিকাণ্ড ইত্যাদির কারণে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ফুলে ফেঁপে ওঠে| লোকসভার পর ১৯৯৩ সালে বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি বৃহত্তম দল হিসেবে শেষ করে| তখন বিএসপির-র প্রতিষ্ঠাতা নেতা কাশীরাম-এর সঙ্গে এসপি-র (প্রতিষ্ঠা ১৯৯২ সালের অক্টোবরে) নেতা মুলায়ম হাত মেলান বিজেপিকে লখনৌ-এর তখত থেকে দূরে রাখতে| কংগ্রেসও তাদেরকে সমর্থন জানায়| অবিভক্ত উত্তরপ্রদেশের ৪২৫টি আসনে এসপি-বিএসপি মিলে ১৭৬টি আসন জেতে সেবার (বিজেপি পায় ১৭৭টি; কংগ্রেস ২৮টি)|
এই সখ্য টেকেনি দুইবছরও
কিন্তু এই জোট দুই বছরও টেকেনি| ১৯৯৫ সালের ২জুন জিতে যায় সেই ঘটনা যার ফলে এসপিও বিএসপি-র মধ্যে সূচনা হয় চিরশত্রুতা| এর কিছুদিন আগে থেকেই মায়াবতী মূলায়মকে অভিযুক্ত করেছিলেন তাঁদের দলের ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসানোর অভিযোগে| অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছিল এবং মায়াবতী শেষ পর্যন্ত জোটে ইতি ডাকেন| তারপর উক্ত তারিখের রাতে যখন মায়াবতী লখনৌয়ের একটি অতিথিশালায় বসে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসে রণকৌশল বানাচ্ছেন, তখনই সেখানে এসপি-র সমর্থকরা আক্রমণ চালায়| মায়াবতীকে স্রেফ গালিগালাজ নয়, তাঁর উপরে শারীরিক আক্রমণও করা হয়| পরে বিজেপি নেতা ব্রহ্ম দত্ত দ্বিবেদী, যাঁকে পরে এসপি-র এক বিধায়কের গুলিতে প্রাণ দিয়ে হয়, বিএসপি নেত্রীকে উদ্ধার করে সুরক্ষিত করেন|
এর ঠিক পরের দিন, অর্থাৎ ৩রা জুন, বিজেপির সমর্থন নিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন মায়াবতী এবং উত্তরপ্রদেশ তার প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী পায়| নতুন স্লোগান শোনা যায় : "ব্রাহ্মণ শঙ্খ বাজায়েগা, হাতি বঢ়তা জায়েগা"|
[আরও পড়ুন: একমঞ্চে মায়া-মুলায়ম, মোদী নন, আসল পিছিয়ে পড়া শ্রেণির নেতা হলেন মুলায়ম, দাবি মায়াবতীর ]
আজ মায়াবতী বলছেন অনগ্রসরদের আসল নেতা মুলায়মই
লখনৌয়ের সেই অতিথিশালার ঘটনার পর মায়াবতী প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে তিনি মূলায়মকে মাফ করে দিতে পারেন যদি তিনি প্রকাশ্যে তাঁর কাছে ক্ষমা চান| সরযূ-গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে তারপরে| কখনও ক্ষমতায় এসেছেন মায়াবতী, কখনও মুলায়ম কিন্তু সেই দূরত্ব ঘোচেনি| অবশেষে একজন, যাঁর নাম নরেন্দ্র মোদী, তাঁদের মেলালেন দীর্ঘ ২৪ বছর পরে, মৈনপুরীতে যেখানে মায়াবতী সরাসরিই বলে দিলেন যে মুলায়মই অনগ্রসর শ্রেণীর আসল নেতা, প্রধানমন্ত্রী সেখানে লোক দেখানো|
[আরও পড়ুন: একদিনে দলবদল, কংগ্রেস ছেড়ে শিবসেনায় যোগ দিয়ে এনডিএ শরিক প্রিয়াঙ্কা]