কলকাতার বুকেই এতগুলি রথের মেলা! শহরতলী থেকে জেলার রথের মেলার তালিকা একনজরে
বাঙালির মেলা সংস্কৃতিতে সর্বাগ্রে স্থান পায় রথের মেলা। পুজোর ক্ষেত্রে যদি মেগা-শো-এর ট্যাগ জুড়ে থাকে দুর্গাপুজোর সঙ্গে। মেলার ক্ষেত্রে এই মেগা ট্যাগের অধিকারী রথের মেলা।
বাঙালির মেলা সংস্কৃতিতে সর্বাগ্রে স্থান পায় রথের মেলা। পুজোর ক্ষেত্রে যদি মেগা-শো-এর ট্যাগ জুড়ে থাকে দুর্গাপুজোর সঙ্গে। মেলার ক্ষেত্রে এই মেগা ট্যাগের অধিকারী রথের মেলা। কারণ এর বিশাল আয়োজন, কাঠের রথ। আর অবশ্যই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাদের ব্রাদার অ্যান্ড সিস্টার-এর পারিবারিক প্রেজেন্স। রথের মেলার মেগা শো-তে বাঙালির অন্যতম আকর্ষণের।
আরও একটি জিনিস অবশ্য রয়েছে, বঙ্গে যত মেলা চালু আছে তাতে রথের মেলাতেই আট থেকে আশি-সব বয়সের সকলেই সমানভাবে মেতে ওঠে। মেলার এই মানবিক উচ্ছ্বাসের উন্মাদনায় বাড়তি মাত্রা যোগ করে রথের রশিতে টান দেওয়া থেকে শুরু করে জিলিপি ভাজা, পাপড় ভাজা, নাগরদোলার দল।
রথের মেলা উপলক্ষে এখন ফেসবুকে তুমুল হট্টগোল। সবচেয়ে বড় আলোচনা কলকাতা বা শহরতলিতে কতগুলি রথের মেলা হয়? পূর্ণেন্দু ফাড়িকার নামে এক ব্যক্তি এক বিশাল তালিকা মেলে দিয়েছেন। সেই তালিকায় চোখ বোলালেই মোটামুটি কলকাতা এবং তার শহরতলীতে রথের মেলার সংখ্যা নিয়ে স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যাবে।
পূর্ণেন্দু তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন-- কলকাতার বুকে রথের মেলা হয়-
- ১। কসবাতে রথতলা মিনিবাস স্ট্যান্ডের কাছে পনেরো দিন ধরে রথের মেলা হয়।
- ২। রুবির কাছে ও এক মাস ধরে মেলা হয়।
- ৩। মুকুন্দপুরে পনেরো দিন ধরে মেলা হয়।
- ৫। শ্যামবাজার থেকে ডানলপ মোড়ের দিকে যেতে বিটি রোডের উপর চিড়িয়া মোড়ে কাছে রাস্তার দু'দিকে মেলা হয়। কেবলমাত্র রথের দিন এই মেলা হয়।
- ৬। সল্টলেক করুণাময়ী পনেরো দিন ধরে মেলা হয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই বছর ১৩-ই জুলাই থেকে রথের মেলা শুরু হচ্ছে।
- ৭। গড়িয়াতে ৬ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে নাকতলা পর্যন্ত মেলা বসে। এখন নাকতলা গীতাঞ্জলি মেট্রার সামনে বড় করে রথের মেলা বসে। আগে এক মাস ধরে এই মেলা হতো। এখন শুধু রথের দিন ও উল্টো রথের দিন মেলা হয় । বহু বছরের পুরনো এই মেলা। মূলত গাছ বিক্রি হলেও অন্যান্য জিনিসও পাওয়া যায়।
- ৮। কলকাতার পার্ক স্ট্রিট ময়দানে ইসকন রথটি রাখা থাকে উল্টো রথ পর্যন্ত। এই উপলক্ষে ইসকন একটা মেলার আয়োজন করে থাকে। প্রতিদিন ভোগ প্রসাদও বিতরণ করা হয়।
- ৯। কলকাতায় সাতান্ন নম্বর ওয়ার্ডের ধাপা মাঠপুকুর-এ রথের মেলা হয়।
- ১০। বড়িশা শখের বাজারে পূজা কমিটি সামান্য দক্ষিণার বিনিময়ে রথের দিন সুন্দর ভোগ বিতরণ করে সাধারণের মধ্যে। এই উপলক্ষে সেখানে মেলা বসে।
- ১১। টালীগঞ্জের কবরডাঙ্গাতে অনেক বছর ধরে রথের সময় মেলা বসে। ১৫ দিন ধরে এই মেলা চলে।
- ১২। ঠাকুরপুকুর বাজারের কাছে রথ উপলক্ষে মেলা বসে। ১৫ দিনের বেশি এই মেলা চলে। এছাড়াও ঠাকুরপুকুর ছাড়িয়ে বিদ্যানগর, বিবিরহাট, রায়পুরের দিকে গেলে বা ওদিকে ডায়মন্ডহারবারের দিকে যাওয়া গেলেও রাস্তার ধারে ধারে রথ উপলক্ষে বহু বহু পুরনো মেলার চল আছে।
- ১৩। বেলঘড়িয়াতে বিটি রোডের উপর রথতলার মোড়ে কেবলমাত্র রথের দিন মেলা হয়। রাস্তার দুই পাশে মেলা বসে।
- ১৪। নাগেরবাজার মোড় থেকে ডায়মন্ড সিটি পর্যন্ত যশোর রোডের দুইপাশে মেলা বসে। কেবলমাত্র রথের দিন মেলা হয়।
- ১৫। বেলঘড়িয়ার ২৩৪ বাসস্ট্যান্ডের কাছে দেওয়ান পাড়ার মাঠে একটা নতুন মেলা গত বছর থেকে শুরু হয়েছে। চলবে ১০ দিন। এছাড়াও বেলঘড়িয়া দেশপ্রিয় নগরে একটি রথের মেলা ইদানিং শুরু হয়েছে।
- ১৬। বিরাটির মহাজাতি নগরে বড় করে রথের মেলা হয়। চলে প্রায় এক মাস। মহাজাতি নগর বিরাটি স্টেশন এবং বিরাটি মোড়ের মাঝামাঝি জায়গা।
- ১৭। দক্ষিণ কলকাতায় ঢাকুরিয়া ব্রিজের কাছে রথের দিন এবং উল্টো রথের দিন মেলা হয়।4
- ১৮। আগে রাসবিহারী মোড়ে যে মেলা হতো সেটা যানবাহনের অসুবিধার জন্য সরানো হয়েছে। এখন চেতলাতে এই মেলা বসে। চেতলা ব্রিজ এর নিচে আদি গঙ্গার ধারে চলে এসেছে । মেলা চলে ১৫ দিন ধরে।
- ১৯। এয়ারপোর্ট ১ নম্বর-এর কাছেও একটা রথের মেলা হয়। দমদম গোড়াবাজার থেকে মিলন সংঘ ক্লাব-এর কাছে সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি পর্যন্ত এই রথ টানা হয়।
- ২০। মধ্যমগ্রামের দুর্গানগর স্পোর্টিং ক্লাব-এর মাঠে একটা বড় রথের মেলা হয়।
- ২১। মধ্যামগ্রামে কালিবাড়ীর পাশে রথের মেলা বসে।
- ২২। বেলঘড়িয়া স্টেশনের কাছে সাতের পল্লিতে ইসকন-এর মেলা হয় ৭ দিন ধরে। রোজ ভোগ প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
- ২৩। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজপুরের কাছে হরিনাভীতে বেশ বড় করে একটা মেলা হয়। এটা অনেক পুরানো মেলা। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দক্ষিণ দিকে ১০ মিনিট গেলে এই মেলাটি দেখা যায়।
- ২৪। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে চৌধুরীদের জমিদার বাড়িতে রথযাত্রা উৎসব হয় । এই উপলক্ষে মেলা হয়। মেলা চলে রথের দিন থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত।
এতো গেল কলকাতা ও তার শহরতলীতে রথের মেলার একটা তালিকা। এবার দেখে নেওয়া যাক জেলার তালিকাটা- যা পূর্ণেন্দু তার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন-
- ১। হাওড়া জেলায় আন্দুলে একটা বড় রথের মেলা হয়। আগে ১৫ দিন ধরে চললেও এখন ১০ দিন মেলা চলে।
- ২। হৃদয়পুর এক বড় মেলা ৭ দিন চলে। হৃদয়পুর এর মেলাটা বারাসাত এর ডাক বাংলো-র কাছে রথতলায় বসে।
- ৩। বারাসাত-এর সরজিনী পল্লী, হেলাবরতলা,- তে একটি রথের মেলার আয়োজন হয়।
- ৪। হুগলী জেলায় গুপ্তিপাড়া স্টেশনের কাছে রথের মেলা বিখ্যাত। হাওড়া থেকে কাটোয়াগামী ট্রেনে চেপে যাওয়া যায়। লোকাল ট্রেনে যেতে সময় লাগে ১ ঘন্টা 40 মিনিটের মত সময় লাগে। মেলা ৭ দিন ধরে চলে।
পূর্ণেন্দুর দেওয়া এই তালিকার বাইরে রয়েছে বিখ্যাত মাহেশের রথ। যা ৬২২ বছরের পুরনো। মহিষাদল রাজবাড়ির রথযাত্রা। যা এককালে আড়ম্বরে বাংলার রথের মেলা ঐতিহ্যের তালিকায় উপরের দিকেই স্থান পেত। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানেও একাধিক রথের মেলা হয়। এঁদের মধ্যে যেমন উল্লেখযোগ্য বালুরঘাটের রথের মেলা। এখানে চকভবানী অঞ্চলের রথতলার রথের মেলা এককালে জেলার সবচেয়ে বড় মেলা ছিল। কিন্তু, চট্টোপাধ্যায় পরিবারের এই মেলা এখন আকারে অনেকটাই ছোট হয়ে গিয়েছে। যে বিশাল মাঠের উপরে আগে এই মেলা হত তা চট্টোপাধ্যায় পরিবার বাস্তুজমি হিসাবে বিক্রি করে দিয়েছে। তবু, দীর্ঘ এক ঐতিহ্যের টানে এখনও প্রচুর মানুষ এখানে রথের মেলা দেখতে ভীড় করেন। মালদহের মকদমপুরেও রয়েছে বিশাল ঐতিহ্যবাহী রথের মেলা।