তিন তালাকের রায় দেওয়া পাঁচ ধর্মের পাঁচ বিচারপতি সম্পর্কে জেনে নিন
তিন তালাককে আগামী ছয় মাসের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে আদালত। এই নির্দেশের পিছনে যে পাঁচ বিচারপতির রায় কাজ করেছে তাঁদের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক একনজরে।
তিনবার মুখে মুখে তালাক দিয়ে দিলেই সম্পর্ক শেষ করা যায় না। তা অসাংবিধানিক ও অন্যায়। এই ব্যাখ্যা করে তিন তালাককে আগামী ছয় মাসের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি রায় দিয়েছে তিন তালাক ইস্যুতে কেন্দ্রকে ছয় মাসের মধ্যে নতুন আইন তৈরি ও বলবৎ করতে হবে। অন্যথায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বহাল থাকবে। এই নির্দেশের পিছনে যে পাঁচ বিচারপতির রায় কাজ করেছে তাঁদের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক একনজরে।
বিচারপতি জেএস খেহর
সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর দেশের ৪৪তম মুখ্য বিচারপতি। শিখ সম্প্রদায় থেকে কেউ এই প্রথম দেশের প্রধান বিচারপতি হলেন। তিনি প্রধান বিচারপতি হিসাবে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন- এর নেতৃত্বে রয়েছেন। এদিন তিনি তিল তালাক বিলুপ্ত হোক, এই ভাবনার বিপক্ষে রায় দিয়েছেন। এর আগে তাঁর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকে দূরে সরিয়ে অরুণাচলপ্রদেশে কংগ্রেসের সরকারকে ফিরিয়ে এনেছে। এছাড়া তাঁর নেতৃত্বেই সাহারার মালিক সুব্রত রায়ের মামলা চলছে। তিনি ২৮ অগাস্ট ২০১৭-য় অবসর নিলে বেঞ্চে অন্য কোনও বিচারপতি নিযুক্ত হবেন।
বিচারপতি ক্যুরিয়েন জোসেফ
ক্যুরিয়েন জোসেফ তিন তালাক প্রথার অবসান চেয়েছেন। এর আগে তিনি কয়লা ব্লক বণ্টন কেলেঙ্কারি মামলার বিচারপতিদের বেঞ্চে ছিলেন। এছাড়া সংখ্যালঘু শিক্ষা সংক্রান্ত একটি মামলারও বিচার হয়েছে ক্যুরিয়েনের নেতৃত্বে। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন। আগামী বছরের নভেম্বরে তিনি অবসর নেবেন।
বিচারপতি রোহিংটন ফলি নরিম্যান
আরএফ নরিম্যান বিখ্যাত জুরি ফলি স্যাম নরিম্যানের পুত্র। তুলনামূলক ধর্মীয় পড়াশোনায় তিনি অত্যন্ত দক্ষ একজন মানুষ। বার থেকে সরাসরি তিনি ২০১৪ সালের জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পদে উত্তীর্ণ হন। নরিম্যান দেওয়ানী মামলা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। এই মামলা ছাড়াও গোপনীয়তা রক্ষা মৌলিক অধিকার কিনা সেই বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে চলা বিচারপতিদের বেঞ্চের তিনি সদস্য। পাশাপাশি বিতর্কিত ব্যবসায়ী বিজয় মালিয়ার মামলাতেও বিচারের দায়িত্বে তিনি রয়েছেন। ২০১২ সালের অগাস্ট মাস পর্যন্ত তিনি বিচারপতির দায়িত্ব সামলাবেন।
বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত
২০১৪ সালের জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন উমেশ ললিত। সুপ্রিম কোর্টের পাশাপাশি জেলা আদালত ও হাইকোর্টেও শুনানির সময়ে ভিডিও রেকর্ডিং তলার পক্ষে তিনি মত দিয়েছেন। পণ মামলায় ঘটনা বিচার না করে উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না বলে যে রায় হয়েছে তার নেপথ্যে ললিতের বেঞ্চ রয়েছে। ২০০০-২০১২ সাল পর্যন্ত ভারতীয় সেনা, অসম রাইফেলস ও মণিপুর পুলিশের বিরুদ্ধে যে মানুষ হত্যার অভিযোগ উঠেছে, সেই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়ার আগে ললিত সিবিআইয়ের হয়ে ২জি স্পেকট্রাম মামলায় আইনজীবী হয়ে লড়েছেন। আগামী ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
বিচারপতি আবদুল নাজির
এইবছরের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে কাজ শুরু করেন আবদুল নাজির। তিন তালাক ইস্যুতে বিচারপতিদের বেঞ্চে তিনিই একমাত্র মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। এই প্রথা থেকে যাওয়ার পক্ষে তিনি সওয়াল করেছেন। বিচারপতি নাজির বাবরি মসজিদ বনাম রাম জন্মভূমি মামলাতেও বিচারের দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া গোপনীয়তা রক্ষা মৌলিক অধিকার কিনা সেই বিষয়েও বিচারপতিদের বেঞ্চে তিনি রয়েছেন।