দক্ষিণের অনেক দলই কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছে; কেসিআর-এর দক্ষিণী তৃতীয় ফ্রন্ট সফল হলেই তা অবাক করবে
চলতি লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোবে আগামী ২৩ মে। সব দল ও জোটই অনুকূল পরিবেশের আশায় বসে রয়েছে এবং একথা চোখ বুঝে বলা চলে যে অনেক দলই নির্বাচন-পরবর্তী জোটের দিকে ঝুঁকবে ফলাফলের উপরে ভিত্তি করে।
চলতি লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোবে আগামী ২৩ মে। সব দল ও জোটই অনুকূল পরিবেশের আশায় বসে রয়েছে এবং একথা চোখ বুঝে বলা চলে যে অনেক দলই নির্বাচন-পরবর্তী জোটের দিকে ঝুঁকবে ফলাফলের উপরে ভিত্তি করে।
তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও বা কেসিআর এমনই একজন আঞ্চলিক নেতা যিনিও ঝোপ বুঝে কোপ মারার সুযোগটি খুঁজছেন। কেসিআর নিজের রাজ্যের নির্বাচন কয়েক মাস এগিয়ে নিয়ে আসেন গত ডিসেম্বরে এবং একপেশেভাবে জিতে ফের ক্ষমতায় আসেন। তেলাঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি বা টিআরএস প্রধানের পরিকল্পনার মধ্যে যে এবারে জাতীয় স্তরে কিছু করার, তা বুঝতে অসুবিধে হয় না। কিন্তু কেসিআর এগোবার পথ নিরূপণ করতে বিশেষ সুবিধে করে উঠতে পারছেন না।
কেসিআর-এর পরিকল্পনা বিশ বাওঁ জলেই
ভোটের অনেক আগে থেকেই কেসিআর বিভিন্ন নেতা-নেত্রীর সঙ্গে দেখা করছেন তাঁর বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে। প্রথমে দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক নেতৃত্বকে নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার কথা ভাবলেও কেসিআর বিশেষ কল্কে পাননি। তখন তিনি দক্ষিণী আবেগকে কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করলেন ফের যদি একটি বিকল্প মঞ্চ তৈরী করা যায় অ-বিজেপি ও অ-কংগ্রেসি দলগুলিকে নিয়ে। গত সোমবার চেন্নাইতে কেসিআর ডিএমকে সুপ্রিমো এমকে স্ট্যালিনের সঙ্গে দেখা করেন; লক্ষ্য ছিল একটি তৃতীয় ফ্রন্ট জাতীয় জোট তৈরী করার যার নেতৃত্বে থাকবে দক্ষিণ ভারতীয় দলগুলি। কিন্তু তাঁর সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেন স্ট্যালিন; বলেন এবারের নির্বাচনে তৃতীয় ফ্রন্টের বিশেষ সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না আর সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ভোটের ফলাফলের পরেই বিবেচনা করা যেতে পারে।
অনেকের মতে, কেসিআর বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছেন না কারণ তাঁর রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে সন্দিহান অনেক দলই। কেসিআর এমন একজন নেতা যিনি ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন বিজেপি এবং আসাদুদ্দিন ওআইসির এমআইএম-��র সঙ্গেও। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, অবস্থা অনুকূল দেখলে রাজ্যের দায়িত্ব পুত্র কেটিআরকে দিয়ে তিনি নিজে একটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপদেও চলে যেতে পারেন। আর তাঁর পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কোনদিকে যেতে পারে সেই নিয়ে নিশ্চিত নয় কোনও দলই আর তাঁকে আশ্বাস দিতে রাজি নয় কেউই।
তেলাঙ্গানার মতো ছোট রাজ্যের নেতা হয়ে কেসিআর কতটা কী করবেন?
কেসিআর-এর সফল না হওয়ার ব্যাপারে কয়েকটি অন্য কারণও রয়েছে। দক্ষিণ ভারতের সবক'টি রাজ্যের মধ্যে তেলাঙ্গানা সবচেয়ে ছোট; লোকসভায় তার সাংসদ সদস্যপদ মাত্র ১৭টি। তাই জাতীয় রাজনীতিতে খুব সহজে কেসিআর-এর পক্ষে কিছু করা মুশকিল। তাঁকে এক বড় জোটের সন্ধান করতেই হবে যদি তিনি সত্যি সত্যি কংগ্রেস ও বিজেপি দুই দলের থেকেই দূরে থাকতে চান কিন্তু তাঁর মোদীর সঙ্গে ভালো সম্পর্কের জেরে সেই মিশন সফল হওয়া কঠিন।
জেডিএস, ডিএমকে, টিডিপি সবাই কংগ্রেসের সঙ্গে বা তাদের দিকে ঝুঁকে রয়েছে
দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ ভারতের বেশ কয়েকটি বড় দল কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছে। যেমন, কর্ণাটকের জনতা দল (সেকুলার) বা অন্ধ্রপ্রদেশের তেলুগু দেশম পার্টি যারা গত তেলাঙ্গানা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটও বেঁধেছিল। তামিলনাড়ুর ডিএমকেও ইতিমধ্যেই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে। অন্যদিকে, তামিলনাড়ুর অন্য দল এডিএমকে বিজেপির জোটসঙ্গী। অন্ধ্রপ্রদেশের অপর গুরুত্বপূর্ণ দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস তাদের সমর্থনেই রয়েছে বলে টিআরএস দাবি জানালেও জগন্মোহন রেড্ডি তা খারিজ করে দিয়েছেন। এক কেরালার বামেরা রয়েছে কিন্তু প্রায় অস্তিত্বহীন এবং প্রবল দলতন্ত্রদ্বারা পরিচালিত বামেদের উপরে ঠিক কতটা ভরসা করতে পারবেন কেসিআর? তিনি কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে দেখা করেছেন কিন্তু তাঁদের কথা কদ্দূর সফল হয়েছে তা বলা মুশকিল।
ফলাফল বেরোনোর পরে কেসিআর কী করেন সেটাই দেখার
যদি এবারের নির্বাচনের ফলাফলে বড় কিছু অনটন ঘটে কেন্দ্রে তাহলে কেসিআর-এর অবস্থান নিতে হয়তো ততটা অসুবিধে হবে না। কারণ কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার কেন্দ্রে এলে সেই নৌকায় উঠে পড়লে তাঁকে কেউ দুষবেন না বিশেষ। কিন্তু যদি মোদীই ফের ক্ষমতায় আসেন এবং নিজের রাজ্যের স্বার্থে বিজেপির নেওটা তাঁকে হতে হয়, তখন কেসিআর কীভাবে ভারসাম্যের খেলা সামাল দেন, সেটাই দেখার। কারণ কেন্দ্রে বিজেপির দিকে ঝুঁকলে রাজ্যে সংখ্যালঘু আবেগকে চটিয়ে কংগ্রেসের ফেরার পথ তৈরী করে দিতে পারেন খোদ কেসিআরই।