কাস্ত্রোর স্মৃতিকে হাতিয়ার করে চিন কি আসলে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করল?
ঠিক যখন বেজিং লাতিন আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে ব্যস্ত, ঠিক তখনি কিউবান নেতার মৃত্যু কূটনৈতিক সুবিধা করে দেয় বইকি
কিউবার কিংবদন্তি রাষ্ট্রনায়ক ফিদেল ক্যাস্ত্রোর মৃত্যুর পরে চিনের সরকারি সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করে একটি সম্পাদকীয়তে। শনিবার (নভেম্বর ২৬) প্রকাশিত 'ফিদেল ক্যাস্ট্রোজ লাস্টিং লিগ্যাসি' শীর্ষক ওই লেখাটিতে বলা হয় বিংশ শতাব্দীর বিপ্লবী এই নেতা কিউবা তো বটেই, সমস্ত লাতিন আমেরিকার ইতিহাসেই বড় প্রভাব ফেলেছিলেন।
"কিউবা তো বটেই, লাতিন আমেরিকার অন্যান্য বহু দেশের মানুষের কাছেও ফিদেল ছিলেন একজন জাতীয়তাবাদী নায়ক। প্রথমে নিজের পারিবারিক সত্ত্বার বিরুদ্ধে বিপ্লব, তারপরে কিউবার হয়ে লড়াই এবং সেখানে সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা এবং শেষ বয়েসে বাজার অর্থনীতির দিকে কিউবার অগ্রসরের সিদ্ধান্তকে সমর্থন -- কিউবার স্বার্থে তিনি কখনওই আপোস করেননি," জানিয়েছে গ্লোবাল টাইমস।
ক্যাস্ত্রোকে স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে দেখানোর জন্যে চিনা সংবাদপত্রটি একহাত নেয় পশ্চিমি দুনিয়াকেও। তাতে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন কিউবার উপরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপায়, তখন ক্যাস্ত্রো লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের সমর্থন জোগাড় করেন। লাতিন আমেরিকার কাছে কাস্ত্রো ছিলেন একজন রোল মডেল। তাঁকে লাতিন আমেরিকান মহাদেশের প্রতীক বললেও কম বলা হয় না। আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিলতা সত্ত্বেও চিনের সঙ্গে কিউবার সম্পর্ক উন্নত করতে ক্যাস্ত্রোর অবদানের কথাও মনে করিয়ে দেয় সম্পাদকীয়টি।
প্রয়াত ক্যাস্ত্রোর প্রতি চিনের সংবাদমাধ্যমের এই স্তুতি আশ্চর্যের কিছু নয়। বিশ্ব সমাজতন্ত্র এবং কমিউনিজম-এর ধারার কথা মনে রাখলে এই ভ্রাতৃত্ববোধ স্বাভাবিক। কিনতু, ঠিক যেই সময়ে চিনের রাষ্ট্রপতি জি জিনপিং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে সফর করছেন এবং বেজিং ওই মহাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে নানা প্রয়াস চালাচ্ছে, ঠিক তখনি ক্যাস্ত্রোর মৃত্যু যেন চিনের সামনে এক বড় সুযোগ করে দিয়েছে লাতিন দেশগুলির কাছাকাছি যাওয়ার।
এখানে উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (নভেম্বর ২৪) চিনের সরকার তার লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি নীতিপত্র প্রকাশিত করে। লাতিন আমেরিকার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার কোথাও বলা হয়েছে তাতে। রাষ্ট্রপতি জিনপিংও সম্প্রতি লাতিন আমেরিকার তিনটি দেশ (একুয়াডোর, পেরু এবং চিলি) সফর শেষ করলেন।
সব মিলিয়ে, ভাবী মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যু থেকে ওয়াশিংটনকে সরিয়ে বিচ্ছিন্নতার পথে হাঁটার সংত দিচ্ছেন, সেখানে চিনের এই পাল্টা আমেরিকা মহাদেশের নানা রাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর এই উদ্যোগ আগামী দিনের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে নতুন মোড় আনতে চলেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।