বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অপুষ্টিতে ভোগা শিশু রয়েছে ভারতেই, সামনে এল চমকে দেওয়া সরকারি রিপোর্ট
সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশু রয়েছে এদেশেই। এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট সামনে এসেছে।
ভারতের আর্থিক অগ্রগতি সারা বিশ্বের কাছে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। আমরা চাঁদ, মঙ্গলে পৌঁছে যাচ্ছি, সারা দেশে খাদ্য সুরক্ষা আইন বলবৎ করছি, অথচ শিশুদের অপুষ্টি সাব সাহারন আফ্রিকার দেশগুলিকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে ভারত। সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশু রয়েছে এদেশেই। এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট সামনে এসেছে।
ক্ষুধা সূচকে ভারত নিচে
দেশের নানা প্রান্তে এখনও বহু মানুষ দুবেলা পেট ভরে খেতে পান না। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকেও ভারত অনেকটা নিচে রয়েছে। আর শিশুদের অপুষ্টিতে সবার আগে। সবচেয়ে বেশি অপুষ্টিতে ভোগে ভারতের শিশুরাই।
গ্রামীণ ভারতে অপুষ্টি
গতবছরে জাতীয় পুষ্টি পর্যবেক্ষণ ব্যুরোর রিপোর্টে বলা হয়েছিল, দেশের গ্রামীণ জনসংখ্যা ভয়ানকভাবে অপুষ্টিতে ডুবে রয়েছে। এখনও জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামেই বসবাস করেন। ফলে সেখানেই সিংহভাগ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে মানে দেশের তিন-চতুর্থাংশ শিশু বিপদের মধ্যে রয়েছে। সরকারি তথ্যই এই হিসাব পেশ করেছে।
গ্রামীণ ভারতের উন্নতি
নাগরিক সমাজের উন্নতি করতে গেলে, সমাজজীবনে পরিবর্তন আনতে গেলে তা যে গ্রাম থেকেই শুরু করতে হবে তার খেয়ালই রাখেন না আইন প্রণেতারা। সেদিকে ফোকাস করেই অ্যাসোচেম ও ইওয়াই ব্যাখ্যা করেছে, ভারতের শহুরে জনসংখ্যা অত্যধিক পুষ্টির চ্যালেঞ্জ সামলাতে ব্যস্ত, এদিকে গ্রামের মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে।
অর্ধেক শিশু অপুষ্টিতে
গত একদশকে ভারতে শিশু মৃত্যু, পাঁচ বছরের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার অনেক কমেছে। তা সত্ত্বেও বিশ্বের অর্ধেক অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ভারতের বাসিন্দা। পাশাপাশি রিপোর্ট এটাও বলছে যে দেশের মোট শিশুর অন্তত ৪০ শতাংশই অপুষ্টিতে ভুগছে।
ডায়বেটিস রাজধানী ভারত
মুদ্রার উল্টো পিঠও রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের পর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্থূলকায় মানুষ এদেশেই বাস করেন। শুধু তাই নয়, বিশ্বের ডায়বেটিস রাজধানী বলা হয় ভারতকে। হু-র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫ সালে ভারতে ৭ কোটি মানুষ ডায়বেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
ওজন-উচ্চতা কম
রিপোর্ট বলছে, ভারতের পাঁচ বছরের কমবয়সী ৩৭ শতাংশ শিশুর ওজন কম। ৩৯ শতাংশের বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম, ২১ শতাংশের উচ্চতা কম হওয়ায় ওজন কম ও ৮ শতাংশ মাত্রাতিরিক্ত হারে অপুষ্টিতে ভুগছে।
পরিস্থিতি বিপদজনক
ওজন কম এমন শিশুর হার শহরে ২৯ শতাংশ ও গ্রামে ৩৮ শতাংশ। দেশের মাত্র ১০ শতাংশ শিশু যাদের বয়স ৬ মাস থেকে ২৩ মাসের মধ্যে, তারা সঠিক পুষ্টি পায়। পাঁচবছরের কম এমন শিশুর ওজন কমের অবস্থা আগে ৪৮ শতাংশ থেকে বর্তমানে ৩৯ শতাংশ নেমে এসেছে। পাশাপাশি বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম এমন শিশুর সংখ্যা ১৯.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২১ শতাংশ হয়েছে।
ঝাড়খণ্ড সবচেয়ে বেশি অপুষ্টিতে
এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, সেই সংখ্যা ঝাড়খণ্ডে ৪২ শতাংশ। তারপরে রয়েছে বিহার (৩৭ %), মধ্যপ্রদেশ (৩৬%) ও উত্তরপ্রদেশ (৩৪.১%)।
নীতি পরিবর্তনের সুপারিশ
সরকারি রিপোর্ট বলছে, ভারতীয় শিশুদের মুখে খাবার তুলে দেওয়াই যেখানে চ্যালেঞ্জ, সেখানে যারা খাবার পাচ্ছে এবং যে খাবার খাওয়ানো হচ্ছে তার পুষ্টিগুণ কম। যার ফলে খেতে পেলেও ভারতীয় শিশুদের পুষ্টি অসম্পূর্ণ রয়ে যাচ্ছে। সেদিকে মাথায় রেখে সরকারি নীতি পরিবর্তন করে সামাজিক সাম্য স্থাপন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির কথা সুপারিশ করা হয়েছে।