আর কতদিন ধর্মনিরপেক্ষতার ঢাক বাজাবে কংগ্রেস?
আপনারা মানে, রাজনীতির সেই দালালরা, যাঁরা ঢাক পিটিয়ে মানুষকে বোঝাতে চান, কংগ্রেস একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল!
কোকিলকণ্ঠী শুধু বলেছিলেন, তিনি নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর তখতে দেখতে চান। তাতেই নাকি ভারতের 'দীর্ঘলালিত যত্নচর্চিত' ধর্মনিরপেক্ষতা রসাতলে গেল! মুম্বইয়ের দাপুটে কংগ্রেস নেতা জনার্দন চন্দুরকর সঙ্গীতশিল্পীর ভারতরত্ন কেড়ে নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করলেন! লক্ষণীয়, কংগ্রেস এর সমর্থনে বিবৃতি যেমন দেয়নি, তেমনই বিষয়টির বিরোধিতাও করেনি।
মৌনতাকে সম্মতির লক্ষণ ধরে নিলে বলা যায়, ১) কংগ্রেস নিজেদের দলের নেতাদের বক্তব্য সমর্থন করছে; ২) অর্থাৎ কংগ্রেস নিশ্চিতভাবেই মনে করে বিজেপি সাম্প্রদায়িক; ৩) আর তাই কংগ্রেস নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষতার রক্ষক ভাবে। তাই এই ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি কখনও শোনা যায় রাহুল গান্ধীর মুখে, কখনও বা দিগ্বিজয় সিংয়ের মুখে। আবার কখনও বা তুলনামূলকভাবে একটু খাটো নেতা জনার্দন চন্দুরকরের মুখে। এটা কোনও একক ব্যক্তির ভাবনাচিন্তা নয়, এটা একটা সমসাময়িক ভাবনার ধারা বা 'কনটেম্পোরারি ওয়ে অফ থিঙ্কিং'।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখে নেওয়া যাক, কংগ্রেসের তথাকথিক ধর্মনিরপেক্ষতার নমুনা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তখন ক্ষমতা হস্তান্তর পর্বের দিকে এগোচ্ছে ভারত। ঠিক হল, দেশ ভাগ হবে। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে। অর্থাৎ ভারতে হিন্দু ও মুসলিম, দু'টি জাতি। এরা একই দেশে পাশাপাশি শান্তিতে থাকতে পারবে না। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদের আলাদা আলাদা ভূখণ্ড দরকার। এটাই হল দ্বিজাতি তত্ত্বের মূল কথা। এর জন্য মহম্মদ আলি জিন্নাকে দায়ী করা হয়। কিন্তু, জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেলের কথা বলা হয় কী? প্রথম জীবনে জিন্না ছিলেন উদার, ধর্মনিরপেক্ষ। তাই রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই মুসলিম লিগে গিয়ে ঢোকেননি। এসেছিলেন কংগ্রেসে। ১৯১৬ সালে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে যে লখনউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তার কারিগর ছিলেন জিন্না। শুধু কংগ্রেস নেতাদের উগ্র ধর্মান্ধতা আর ক্ষমতার নির্লজ্জ লোভ 'উদার' জিন্নাকে 'ক্ষুব্ধ' জিন্নায় পরিণত করে। 'ধর্মান্ধ' শব্দের পরিবর্তে 'ক্ষুব্ধ' শব্দটা লিখলাম, কারণ পাকিস্তান তৈরি হওয়ার পর মহম্মদ আলি জিন্না বলেছিলেন, এই দেশে সবাই সমান। ধর্মের ভিত্তিতে কোনও বিভেদ করা হবে না। ধর্মীয় সাম্যই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি। মহম্মদ আলি জিন্না কীভাবে খলনায়ক হয়ে উঠলেন বা তাঁকে খলনায়ক করা হল, তা জানতে উৎসাহী পাঠকরা পড়ে দেখতে পারেন মৃণালকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'জাতীয়তাবাদী জিন্না' বইটি। এমনকী, জিন্নার গুণমুগ্ধ ভক্ত মহম্মদ ইকবাল, যিনি একদা লিখেছিলেন 'সারে জাঁহা সে আচ্ছা হিন্দুস্তাঁ হামারা', সেই তিনিও ক্রমশ হয়ে উঠেছিলেন পাকিস্তানের কট্টর সমর্থক!
এখানেই শেষ নয়। ১৯৪৮ সালে নিজামের হায়দরাবাদের যখন দখল নেয় ভারত, তখন অন্তত দু'লক্ষ মুসলমানকে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। চাপে পড়ে জওহরলাল নেহরু গঠন করেন সুন্দরলাল কমিটি। কমিটি তদন্ত করে রিপোর্টও জমা দেয়। কিন্তু আজও সেই রিপোর্ট জনসমক্ষে আসেনি।
শাহবানু মামলায় (১৯৮৫) সুপ্রিম কোর্ট নিপীড়িত মুসলিম মেয়েদের পক্ষে রায় দিলেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর উদ্যোগে সংসদে একটি আইন পাশ করে ওই রায়কে অতিক্রম করা হয়। এর ফলে সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারায় বর্ণিত সাম্যের অধিকার নির্লজ্জভাবে লঙ্ঘন করা হয় শুধু মোল্লাতন্ত্রকে খুশি করতে।
অযোধ্যা-কাণ্ডটাই দেখুন। রামলালার দরজা খুলে দিয়ে গোলমালের সূত্রপাত কিন্তু ঘটিয়েছিলেন রাজীব গান্ধী। যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হল, তখন আগাম খবর ছিল কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাওয়ের কাছে। ফল? সবাই জানে কী হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর কংগ্রেসের প্রত্যক্ষ মদতে কীভাবে নিরীহ শিখদের খুন করা হয়েছিল সারা দেশে, তাও মানুষ দেখেছেন। যদি গুজরাতে মুসলিম নিধনের কারণে নরেন্দ্র মোদী আর বিজেপি-কে দায়ী করা হয়, তবে হায়দরাবাদে মুসলিম নিধন বা ভারত জুড়ে শিখ নিধনের কারণে কেন কংগ্রেস আর তার নেতাদের কাঠগড়ায় তোলা হবে না?
এবার আবার বর্তমানে ফিরি চলুন। ভারত সরকার (পড়ুন কেন্দ্রের ইউপিএ তথা কংগ্রেস সরকার) তালিবান নেতা মোল্লা আবদুল সালাম জইফকে ভিসা দিচ্ছে। আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার এখন বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী যুদ্ধের শরিক। মানবতা রক্ষার কথা বলে। অথচ তালিবানরা একটি জঙ্গি সংগঠন, মানতবতার শত্রু। পাছে এঁকে ভিসা না দিলে মোল্লারা রেগে যান, ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব পড়ে, তাই আর কী...!
তবুও বলতে হবে কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষ দল !! অথচ নরেন্দ্র মোদীই শুধু সাম্প্রদায়িক! সত্যি, কী বিচিত্র এই দেশ!