কংগ্রেস দুর্বল হলে দোষ তৃণমূলের নয়, মমতার সর্বাত্মক বিজেপি বিরোধিতায় তাই ভুল কিছু নেই
কংগ্রেস দুর্বল হলে দোষ তৃণমূলের নয়, মমতার সর্বাত্মক বিজেপি বিরোধিতায় তাই ভুল কিছু নেই
তৃণমূল কংগ্রেস সারাদেশে ছড়িয়ে যেতে চাইছে এটা তাদের ঘোষিত নীতি। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করেই তৃণমূল ডালপালা মেলতে চাইছে। ত্রিপুরা, অসম, মেঘালয়, গোয়া, কেরল - এই সব জায়গাতেই তৃণমূল কংগ্রেস তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। প্রধান বিরোধী হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তবে এর মধ্যে কয়েকটি বিষয় অবশ্যই রয়েছে যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ মমতাই
আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এগোতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে যদি সারা দেশে কেউ থেকে থাকেন লড়াই দেওয়ার মতো তা একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনটাই মনে করছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দল হওয়ার চেষ্টা করছে।
কংগ্রেস ক্রমেই হীনবল
এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার কারণ, কংগ্রেস ক্রমেই হীনবল হয়ে পড়েছে। একদিকে সংগঠনের দুর্বলতা, অন্যদিকে শীর্ষ নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা, দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে। যার ফলে বিজেপি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ২০১৪ এবং ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন কংগ্রেসকে যেন দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে দিয়েছে। তাদের উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকু যেন হারিয়ে গিয়েছে।
এগিয়ে এসেছেন মমতা
এই অবস্থায় এগিয়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সামনে থেকে দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বিরোধী জোটকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। সারাদেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক দলগুলির দিকে তাকালে দেখা যাবে, এই মুহূর্তে বিজেপি বিরোধিতায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর কাউকে সেভাবে সামনে দেখা যাচ্ছে না।
বিজেপির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে লড়াইয়ে মমতাই সেরা মুখ, ধারেকাছে আর কেউ নেই
বিরোধী জোট কেমন হবে!
একটা মহল থেকে বলার চেষ্টা হচ্ছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে তৃণমূলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তাতে দুটো জিনিস হচ্ছে। প্রথমত, বিরোধী শক্তি আরও দুর্বল হচ্ছে। এবং দ্বিতীয়ত, বিজেপি এর ফলে অ্যাডভান্টেজ পাচ্ছে। কারণ অনেকের মতেই, সারা দেশের প্রেক্ষাপটে বিরোধী ঐক্য যদি তৈরি করতে হয় বিজেপির বিরুদ্ধে, তাহলে কংগ্রেসকে ছাড়া উপায় নেই। কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই পথ চলতে হবে। এই অবস্থায় কংগ্রেসকে ছেড়ে এগিয়ে যাওয়ার মানে বিরোধী ঐক্য দুর্বল হওয়া। পাশাপাশি যদি কংগ্রেসকে ছাড়া বিরোধী জোট তৈরি হয়, তাহলে আদতে তা বিজেপিকে সুবিধা দেবে। এবং ভোট কাটাকুটির বাজারে বিজেপি ফের একবার সরকার গড়ে ফেলবে।
কংগ্রেস দুর্বল হলে দোষ তৃণমূলের নয়
একটা অংশ মনে করছে কংগ্রেস যে সমস্ত জায়গায় দুর্বল হয়েছে সেই সমস্ত জায়গাতেই টার্গেট করে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের শক্তি বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এর আগের সবকটি দিল্লি সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন, বিরোধী জোট বা বিরোধী ঐক্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে এবারে তাঁকে সেসব কিছু করতে দেখা যায়নি।
কংগ্রেস কার্যত ব্যাকফুটে
উল্টে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে কার্যত কংগ্রেসের অপদার্থতার কারণেই তৃণমূলকে সারাদেশে টর্চ ধরার কাজটা করতে হচ্ছে। যাতে বিজেপিকে আর বাড়তে না দেওয়া যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুদিন আগে নিজেই জানিয়েছিলেন, কংগ্রেসের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বিজেপির এতবার বাড়বাড়ন্ত। শুধুমাত্র ভোট সামনে এলেই কংগ্রেস-বিজেপি বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়, বাকি সময় তাদের মাঠে-ঘাটে, জনতার মাঝে দেখা যায় না। তাই তৃণমুলকেই এগিয়ে আসতে হয়েছে। তৃণমূলের এগিয়ে আসায় খারাপ কিছু নেই। সংসদীয় রাজনীতিতে এভাবেই ওঠানামা চলতে থাকে। তবে তার ফলাফল কী হয় তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।