বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির রেলনেটওয়ার্ক রয়েছে কোন কোন দেশে, জানলে চমকে যাবেন
বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনগুলি কী নাম, কোথায় তা চলে ও তার বিশেষত্ব কী, তা দেখে নেওয়া যাক একনজরে।
ভারতে বুলেট ট্রেনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ঘিরে ব্যাপক উন্মাদনা চলছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একসঙ্গে ভারতে এই নেটওয়ার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। মুম্বই-আহমেদাবাদ রুটে এই ট্রেন আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে চালু হতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে। চালু হলে সেটাই হলে ভারতের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন। যদিও ভারতের জন্য এটা নতুন অভিজ্ঞতা হলেও একদশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাই স্পিড রেল নেটওয়ার্ক চলছে। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনগুলি কী নাম, কোথায় তা চলে ও তার বিশেষত্ব কী, তা দেখে নেওয়া যাক একনজরে।
টিএইচএসআর ৭০০টি, তাইওয়ান
তাইওয়ানের হাই স্পিড রেল ইউনিট ট্রেন বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতির ট্রেন বলে পরিচিত। এর সর্বোচ্চ গতি ১৮৬.৪ মাইল প্রতি ঘণ্টা। সাড়ে চার ঘণ্টার দূরত্ব এটি কমিয়ে দেড় ঘণ্টায় নামিয়ে আনতে পারে। এই ট্রেনে ১২টি কোচ রয়েছে। এছাড়া মাল্টি ইঞ্জিন সিস্টেম এর গতি বাড়াতে সাহায্য করে। জাপানে তৈরি এই ট্রেন ০ থেকে ১৮৬ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে পৌঁছতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় নেয়। ভিতরের ব্যবস্থা পুরোপুরি সাউন্ডপ্রুফ।
ইটিআর ৫০০ ফ্রেসিয়ারোসা ট্রেন, ইতালি
ইতালির সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন এই ইটিআর ৫০০ ফ্রেসিয়ারোসা। এই ট্রেনেরও সর্বোচ্চ গতি ১৮৬.৪ মাইল প্রতি ঘণ্টা। মিলান-রোম-ন্যাপলস রুটে এটি চলাচল করে। এই ট্রেনে স্ট্যান্ডার্ড ক্লাস, প্রিমিয়াম ক্লাস, বিজনেস ক্লাস ও এক্সিকিউটিভ ক্লাস কামরা রয়েছে। এটি সাউন্ড প্রুফ ও ভিতরে ওয়াইফাই এর সুবিধা রয়েছে।
এসএনসিএফ টিজিভি ডুপ্লেক্স, ফ্রান্স
টিজিভি ডুপ্লেক্স ফ্রান্সের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন। এর সর্বোচ্চ গতি ১৯৮.৮ মাইল প্রতি ঘণ্টা। ২০১১ সালে এই ট্রেন পরিষেবা শুরু হয়েছে। ডবল ডেকার এই ট্রেন ফ্রান্সের সমস্ত বড় শহরকে যুক্ত করেছে। সবমিলিয়ে এতে ৫০৮ জনের বসার জায়গা রয়েছে। এই ট্রেনে উঠলেই পানীয়, ফ্রি ওয়াই ফাই, খবরের কাগজ ও ম্যাগাজিন হাতে পাবেন আপনি।
অলস্টম ইউরোডুপ্লেক্স, ফ্রান্স
এই ট্রেন নেটওয়ার্ক ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ও লুক্সেমবার্গকে সংযুক্ত করেছে। এই ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ১৯৮.৮ মাইল প্রতি ঘণ্টা। এই ট্রেনে একসঙ্গে ১০২০ জন যাত্রী সফর করতে পারেন। ২০১১ সালে এর পরিষেবা শুরু হয়েছে।
শিনকানসেন হায়াবুসা, জাপান
ই৫ সিরিজের জাপানি শিনকানসেন হায়াবুসা ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ১৯৮.৮ মাইল প্রতি ঘণ্টা। জাপানে এই ট্রেনের গতিই সবচেয়ে বেশি। ২০১১ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। টোকিও থেকে আওমোরি পর্যন্ত এই ট্রেন চলাচল করে। ৪৪.২৮ মাইল রাস্তা এই ট্রেন মাত্র ২ ঘণ্টা ৫৬ মিনিটে পার করে। এতে মোট ১০টি বগি থাকে ও ৭৩১ জন একসঙ্গে সফর করতে পারে।
তালগো, স্পেন
তালগো ৩৫০ হাই-স্পিড ট্রেন চলে স্পেনে। এর সর্বোচ্চ গতি ২১৭.৪ মাইল প্রতি ঘণ্টা। মাদ্রিদ থেকে বার্সেলোনার মধ্যে এই ট্রেন চলে। এই ট্রেনকে স্পেনে পাতো বলে ডাকা হয়। এই ট্রেনে মোট চারটি ক্লাস রয়েছে। ক্লাব ক্লাস, ফার্স্ট ক্লাস, ব্রিস্তো ক্লাস ও কোচ ক্লাস। সব ট্রেনে রিসাইক্লিং সিট ও ফুট রেস্ট করার জায়গা রয়েছে।
সিমেন্স ভেলারো, স্পেন
ভেলারো ই হল ভেলারো ই-হাইস্পিড ট্রেনের স্প্যানিশ সংষ্করণ। এটিকে তৈরি করেছে জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সিমেন্স। এটিও বার্সেলোনা থেকে মাদ্রিদের মধ্যে চলাচল করে। এর সর্বোচ্চ গতি ২১৭.৪ মাইল প্রতি ঘণ্টা। ২০০৭ সালের জুন মাসে এই ট্রেন পরিষেবা শুরু হয়। এতে আটটি কোচ রয়েছে ও ৪০৪ জনের বসার জায়গা রয়েছে।
এজিভি ইতালো, ইতালি
ইউরোপের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন হল এজিভই ইতালো। এর গতিবেগ হল ২২৩.৬ মাইল প্রতি ঘণ্টা। তবে ট্রায়ালের সময় এর স্পিড উঠেছিল ৩৫৬.৬ মাইল প্রতি ঘণ্টায়। পরে তা বেঁধে দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে ইতালিতে এই ট্রেন পরিষেবা শুরু হয়। রোপ থেকে ন্যাপলসের মধ্যে এটি যাতায়াত করে। এই ট্রেনে ১১টি কোচ রয়েছে। তিনটি শ্রেণি রয়েছে- ক্লাব, প্রাইমা ও স্মার্ট। ট্রেনের ভিতরে টিভি, ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে।
হারমোনি, চিন
চায়না রেলওয়া হারমোনি ৩৮০এ হল বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন। এর সর্বোচ্চ গতি ২৩৬.১২ মাইল প্রতি ঘণ্টা। ২০১০ সাল থেকে সাংহাই-নানজিং রুটে এই ট্রেন পরিষেবা শুরু হয়েছে। এই ট্রেনে একসঙ্গে ৪৯৪ জন যাত্রী একসঙ্গে যাত্রা করতে পারেন। প্রত্যেক যাত্রীর জন্য আলাদা করে পাওয়ার পোর্ট, ইলেকট্রকনিক ডিসপ্লে-র সুবিধা রয়েছে।
সাংহাই মাগলেভ, চিন
সাংহাই মাগলেভ ট্রেন হল বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন। এর সর্বোচ্চ গতি ২৬৭.৮ মাইল প্রতি ঘণ্টা। এই ট্রেনের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে সাংহাই মাগলেভ ট্রান্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। এই ট্রেনের কোনও চাকা নেই। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্ষেত্র এই ট্রেনকে ট্র্যাকের উপরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। যার ফলে ট্রেন ও ট্র্যাকের মধ্যে কোনও যোগাযোগ থাকে না। অর্থাৎ ট্রেনটি ট্র্যাক থেকে সামান্য উপরে হাওয়ায় ভাসতে থাকে। ০ থেকে ২৬৭.৮ মাইল গতিতে পৌঁছতে এর সময় লাগে মাত্র ৪ মিনিট। ২০০৪ সালে এই ট্রেন পরিষেবা শুরু হয়। লং ইয়াং রোড থেকে পুডং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যে এটি যাতায়াত করে। এই ট্রেনে একসঙ্গে ৫৭৪ জন যাত্রী সফর করতে পারে।