পুজো স্পেশ্যাল: ফিরে দেখা কলকাতা, নস্ট্যালজিয়া ফিরছে ৬৬-র ৬৬ পল্লিতে
মনে পড়ে যাবে সেদিনের কথা। সেই যে 'ইটের টোপর মাথায় পরা শহর কলকাতা, অটল হয়ে বসে আছে- ইটের আসন পাতা।' যেখানে কলকাতা চলে যায় নড়িতে নড়িতে। আবার তন্দ্রা ভাঙলেই দেখা যায় কলকাতা আছে কলকাতাতেই।
ফিরে দেখা কলকাতা। সাড়ে ৩০০ বছরের প্রাচীন একটা শহরের লেন্সবন্দি ইতিহাস। এক ঝলকে। এবার মাতৃবন্দনায় পুরনো কলকাতার সেই নস্ট্যালজিয়া ফিরিয়ে আনছে '৬৬ পল্লি'। নিধুবাবুর টপ্পা গান থেকে শুরু করে টানা রিকশার টুং-টাং শব্দ। কিংবা ফেরিওয়ালার সেই হৃদয়বিদারী ডাক বা আকাশবাণীর প্রভাতী সুর- সবই মজুত ৬৬ পল্লির ৬৬তম বছরেরশারদ-ভাণ্ডারে।
ফিরে যেতেই হবে আপনার অতীতে। হয়তো হারিয়েও যাবেন মুহূর্তের জন্য। আবেগে ভেসে যাবেন মনের অবগাহনে। মনে মনে গেঁথে ফেলবেন স্মৃতির মালিকা। যখন জাগবেন, দেখবেন কলকাতা আছে কলকাতাতেই। আর এ প্রজন্মও আবেগতাড়িত হতে বাধ্য। তাঁরাও ভাববেন গল্পটা তা হলে সত্যিই। কলকাতার অলি-গলি-তস্য গলিতে ছড়িয়ে থাকা নিদর্শন গুলো শুধুই গল্পকথা নয়।
৬৬ পল্লি পা দিয়েছে ৬৬-তে। একটা স্পেশ্যাল কিছু তো থাকবে। হেভিওয়েট পুজো মণ্ডপ বলে কথা। একটা সাক্ষর তো রেখে যেতেই হবে। অনেক ভেবে তাই কলকাতার নস্ট্যালজিয়াতে দর্শনার্থীদের আবিষ্ট করতেই এই পুজো কমিটি থিম ভাবনায় তুলে ধরেছে সাড়ে তিনশো বছরের সুপ্রাচীন ইতিহাসকে। হাওড়া ব্রিজ, মনুমেন্ট, কালীঘাট মন্দির, ময়দান, ভিক্টোরিয়া- কী নেই তিলোত্তমার ঐতিহাসিক স্থানের তালিকায়। পুরো শহরটাকেই উঠে এসেছে একটা ভাবনার মোড়কে।
একসঙ্গে এক জায়গায় বসেই দেখা যাবে 'সিটি অফ জয়' কলকাতাকে৷ এ সৃষ্টি কি মুখের কথা। কিন্তু ৬৬ পল্লির সৌজন্যে সেই কঠিন কাজটাই অবলীলায় সম্পূর্ণ হয়েছে। কীভাবে সম্পূর্ণ হল এই অসম্ভব? আসলে কলকাতা মানেই একটা আবেগের নাম। কলকাতা মানেই প্যাশন। কলকাতা মানেই ইতিহাসের ঘনঘটা। কলকাতা মানেই জব চার্নক। কলকাতা মানেই হাওড়া ব্রিজ। কলকাতা মানেই ট্রাম গাড়ি।
কলকাতা মানেই মনুমেন্ট, ভিক্টোরিয়া, টানা রিকশা। এক কথায় কলকাতা মানেই তন্দ্রা ভেঙে তাকিয়ে দেখা কলকাতা আছে কলকাতাতেই। সেই সূত্রটাকেই দুর্গোৎসবের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করেছেন এই পুজো উদ্যোক্তারা। তাঁরা সফল হয়েছেন বিনি সুতির মালা গাঁথতে।
শিল্পী পূর্ণেন্দু দে-র কথায় কলকাতার সমস্ত দর্শনীয় স্থানকে থ্রি-ডি পেন্টিং-এর মাধ্যমে পুজো মণ্ডপে তুলে ধরা হবে৷ পুজোর মণ্ডপ হচ্ছে বনেদি বাড়ির ঠাকুর দালানের আদলে। গড়ে তোলা হয়েছে ঠাকুরদালান। সেখানেই অধিষ্ঠান একচালার দুর্গাপ্রতিমার। মূলত প্লাইউড দিয়েই তৈরি হয়েছে ঠাকুর দালান।
আলোর ব্যবহারেও থাকছে প্রাচীনের পরশ৷ জমিদার বাড়িতে ঠিক যেমনভাবে ঝাড়বাতি জ্বলে, তেমনভাবেই সজ্জিত আলোর রোশনাই। জমিদার বাড়ির লন্ঠন থেকে সেকেলের গৃহস্থের লম্ফও রয়েছে এই আলোকসজ্জায়। এমনকী পুরনো দিনে রাস্তায় জ্বলা গ্যাস লাইটও ব্যবহার করা হয়েছে মণ্ডপে৷