দুর্গাপুজো স্পেশাল গল্প : আশ্রয়
মায়ের ওষুধটা কিনে দোকান থেকে বেরিয়ে যুথিকা শিয়ালদা স্টেশনের ঘড়িতে দেখলো রাত ৯টা! রাত ৯.০৫-এর বনগাঁ লোকালটা না ধরলে সমস্যায় পড়ে যাবে সে।
মায়ের ওষুধটা কিনে দোকান থেকে বেরিয়ে যুথিকা শিয়ালদা স্টেশনের ঘড়িতে দেখলো রাত ৯টা! রাত ৯.০৫-এর বনগাঁ লোকালটা না ধরলে সমস্যায় পড়ে যাবে সে। ভিড়ভাট্টা ঠেলে স্টেশনের সিঁড়িতে পা রাখল যখন ডিসপ্লে বোর্ড দেখাল ৯.০৪ বাজে। বনগাঁ ছাড়বে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে। দৌড়-দৌড়-দৌড়। গার্ড হর্ণ বাজালেন। সমস্ত শক্তি ও ইচ্ছাকে এক করে প্রচণ্ড গতিতে দৌড়ালো যুথি। আর একটু। ড্রাইভারও হর্ণ বাজিয়ে দিয়েছেন। ট্রেনও চলতে শুরু করেছে। চারপাশের 'যাবেন না, যাবেন না' আওয়াজ যুথির কানে পৌঁছলো না। গার্ড গেটে দাঁড়িয়ে দেখছেন দুঃসাহসী ওই মেয়েটার কাণ্ড।
আর একটু- ড্রাইভারের কামরাটা পেরিয়ে শেষ বগির হ্যান্ডেলটা প্রায় ধরে ফেলেছে যুথি। ট্রেনও স্পিড নিয়ে নিয়েছে। ট্রেনের ভিতর থেকে 'ছেড়ে দিন, ছেড়ে দিন' আওয়াজ। হ্যান্ডালটা ধরে নিয়েছে সে। ট্রেনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে এবার বোধহয় হুমড়ি খেয়ে পড়বে যুথি। শরীরে আর শক্তি নেই। এমন সময় একটা বলিষ্ঠ হাত টেনে ওপরে তুলে নিলো যুথিকে। মেয়েটি কাঁপছে- লোকটা তখনও সোজা ধরে রেখেছে তাকে। যুথি কামরার পার্টিশানটায় ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। এতক্ষণে লোকটাকে বলতে পারলো- থ্যাঙ্ক ইউ। লোকটা মাথাটা ঝাঁকিয়ে একটু সরে দাঁড়ালেন।
কামরার নানা দিক থেকে মন্তব্য ভেসে আসছে। যার কোনওটাই যুথিকে ছুঁয়ে যাচ্ছে না। 'কেন এভাবে রিস্ক নিলেন', 'প্রাণটাতো আগে', 'পরের ট্রেনটা ধরলে কী হতো' ধরনের সংলাপ শোনা গেলেও কেউ তাকে একটু জায়গা ছেড়ে দিল না। যুথি তখন হাঁপাচ্ছে। শীতের রাতেও ঘাম ঝরছে যুথির শরীর থেকে। কম্পার্টমেন্টের জানলা-দরজা বন্ধ। কেউ চাদর, কেউ সোয়েটার মাফলারে নিজেকে মুড়ে নিয়েছে। মুখগুলোও দেখা যাচ্ছে না। যে লোকটা যুথিকে টেনে তুলেছিল তার মুখও মাফলারে ঢাকা। তার ওপর অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। যুথির দিকে চতুর্পাশ থেকে নানা মন্তব্য ভেসে এলেও ওই ব্যক্তি কিন্তু একটিও মন্তব্য করেননি।
একটু দম নিয়ে যুথি মুখোমুখি সিটের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো। কাঁধের ব্যাগটিকে বাংকের ওপর রেখে সে একটু হালকা হল। যুথি বুঝতে পারল অনেকগুলো চোখ তখনও চিড়িয়াখানার জন্তু-জানোয়ার দেখার মতো তাকে দেখছে। চোখ ঘুরিয়ে লোকটাকে দেখতে পেল যুথি। উল্টো দিকের চ্যানেলটায় দাঁড়িয়ে একটা বই বের করে পড়ছেন তিনি। সামনের সিটে বসা এক প্রবীণ ব্যক্তি যুথির গন্তব্য জানতে চাইলেন। যুথি বললো, মছলন্দপুর। ওড়না দিয়ে কান ঢাকলো সে।
- মছলন্দপুরেই থাকো? প্রবীণ ভদ্রলোকের গলায় স্নেহের টান পেল যুথি।
যুথি ঘাড় নাড়লো। বললো, না ওখান থেকে টোটো করে আটঘরার দিকে মিনিট পঁচিশ গেলে বিষ্ণুপুর। যুথি বুঝতে পারলো যে সেই লোকটা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকেই দেখছেন। প্রবীণ ব্যক্তি সমর্থন সূচক ভঙ্গিতে বললো- তাহলে তো এই ট্রেনটা না পেলে বিপদেই পড়তে তুমি। পরের ট্রেনটা তো অনেক রাতে পৌঁছতো। মছলন্দপুর থেকে অত রাতে...
- আসলে আমি গোবরডাঙা লোকালেই বাড়ি ফিরি। আজ ডিউটি থেকে বেরোতে দেরি হয়ে গেল, বলল যুথি।
আলাপ চলতে থাকে। ট্রেনের বাকিদের কোনও আগ্রহই নেই ওই আলাপচারিতায়। অনেকে ঝিমোচ্ছেন। কেউ বন্ধ জানলা দিয়েই এক দৃষ্টে বাইরে ঠায় তাকিয়ে আছেন। বাকিরা যেন দেখেও দেখছেন না। যুথির সিক্স সেন্স কিন্তু বলছে যে তাকে ট্রেনের কামরায় টেনে তোলা লোকটা কিন্তু তাকে মাঝে মাঝেই দেখছেন। পরক্ষণে সে মনে মনে বলে, দেখুক গে। লোকটা তো তার উপকারই করেছেন।
ট্রেন বারাসত পৌঁছলো। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে যুথি দেখে রাত দশটা বাজে। লেট রান করছে ট্রেনটা। বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন- এবার তুমি একটু বসো মা। আমি না হয় দাঁড়াচ্ছি। এতক্ষণ তো বসেই এলাম!
- না না, আপনি বসুন। আপনি কোথায় নামবেন? যুথি প্রশ্ন করল।
- দত্তপুকুর। জানালেন প্রবীণ।
-
ঠিক
আছে,
আমি
দত্তপুকুরেই
বসবো,
বলল
যুথি।
ইতিমধ্যেই
সেই
উপকারি
লোকটার
সামনের
একটা
সিট
খালি
হয়েছে।
তিনি
যুথিকে
ডেকে
বললেন-
শুনুন
আপত্তি
না
থাকলে
এই
সিটটায়
আপনি
বসতে
পারেন।
আমি
না
হয়
দত্তপুকুর
এলে
ওনার
সিটে
বসবো।
প্রবীণ ব্যক্তি বললেন- যাও মা, গিয়ে বসো ওখানে। ও না হয় এখানে আসুক।
দুজনে ঠাঁই বদল করলো। এতক্ষণে লোকটার গলার আওয়াজটা শুনলো যুথি। কথার টানটা যেন চেনা চেনা।
এখন ট্রেনে ওঠার থেকে নামার লোকের সংখ্যা বাড়ছে। ট্রেন একটু একটু করে ফাঁকা হচ্ছে। মছলন্দপুরে বেশ কিছু লোক নামলেন। যুথির সঙ্গে নামলো সেই লোকটাও। ঘড়িতে তখন দশটা পঞ্চাশ মিনিট। অনেকটাই লেট করলো ট্রেনটা। সহযাত্রীরা সাইকেল-স্কুটার-বাইক নিয়ে হাওয়ার গতিতে পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। টোটো-অটো-মোটরভ্যান কিছুই তো নেই। সর্বনাশ! কী হবে তবে? ভাবতে থাকে যুথি। তাকে টেনে ট্রেনে তোলা সেই লোকটা অদূরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর কোনও উদ্বেগ আছে বলে মনে হল না। এখন কী করবে সে, ভাবতে থাকে যুথি। বাড়িতে অসুস্থ মায়ের জন্য সে ওষুধ নিয়ে ফিরছে। এতটা রাস্তা। চারিদিকে শুনসান। লোকটা যুথির দিকে এগিয়ে এলো। একটু ঘাবড়ে গেল মেয়েটি। তোতলাতে শুরু করলো।
- কী করবেন ভাবছেন? কমিউনিকেশন কিছু আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। বললেন লোকটি।
একটু সাহস পেল যুথি। হ্যাঁ। কী করি বলুন তো?
- এদিকে আশে পাশে কোনও আশ্রয় আছে? মানে কোনও আত্মীয়-পরিজনের বাড়ি? প্রশ্ন করলেন ওই ব্যক্তি।
হ্যাঁ আছে। কিন্তু মায়ের ওষুধ আমার ব্যাগে। রাতে না খাওয়ালে- মা তো একা। বলল যুথি।
- কেন বাড়িতে আর কেউ নেই? প্রশ্ন করলেন ভদ্রলোক।
- না। যুথির মনে হলো যে লোকটার কণ্ঠস্বর তার পরিচিত, কিন্তু কিছুতেই চিনতে পারছে না।
লোকটি বললেন- ওহ! তাহলে ভেবে নিন কী করবেন? আমি কিন্তু হাঁটা জুড়বো। তারপর আপনি কিন্তু একা। যুথিকে বললেন লোকটি।
- ভাবতে পারছি না। আপনি একটু সাহায্য করুন না। নিবেদন করলো যুথি।
- কীসের সাহায্য? অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন ভদ্রলোক।
- ভাবার। উত্তর দিল যুথি।
- দেখুন, আমি আপনাদের দিকেই হাঁটবো। আপনি আমায় আশ্রয় করতে পারেন।
লোকটির কথা শুনে চমকে উঠলো যুথি। এরকম একটা কথা কবে, কোথায় যেন শুনেছিল সে।
লোকটি বললেন, মানে আপনি আমার সঙ্গে হাঁটতে পারেন। রাস্তায় কোনও ভ্যান-ট্যান পেলে বেরিয়ে যাবেন। একটু দ্বিধা করে যুথিকা। কী করবে বুঝে উঠতে সে বড্ড বেশি সময় নেয়।
- দ্বিধা সংকোচ থাকলে যাওয়ার দরকার নেই। বললেন লোকটি।
- না না দ্বিধা কেন? চলুন হাঁটি। বলল যুথি।
- আজ বোধহয় ত্রয়োদশী। চাঁদের আলোয় ঘুমন্ত পৃথিবী কেমন মোহময়ী হয়ে উঠেছে। এই কথা শুনে আবার ধাক্কা খেলো যুথি। কোথায় যেন শুনেছে কথাটা।
- চাকরি করেন। যুথিকে প্রশ্ন করেন ওই ব্যক্তি।
- হ্যাঁ, একটা গারমেন্টস কারখানার সুপারভাইজার। জানাল যুথিকা।
- এত রাতে ফিরতে হয়? অবাক হয়ে বললেন লোকটি।
যুথিকা বলল, না আসলে আগের গোবরডাঙা লোকালে সে ফেরে। আজ বড় একটা অর্ডারের কাজ শেষ করাতে হল। তার ওপর মায়ের ওষুধ কিনতে গিয়ে পরের ট্রেনটাও মিস হয়ে যাচ্ছিল। তিনি টেনে না তুললে...
যুথির কথা শেষ হওয়ার আগেই ওই ব্যক্তি বলেন, তিনি না তুললে অন্য কেউ তুলতেন। খানিকক্ষণ চুপচাপ পথ চলল দুজনে। দূরে কোথাও একটা কুকুর ডেকে উঠলো। নীরবতা ভেঙে লোকটাই প্রশ্ন করলেন, বাড়িতে কী শুধুই মা?
- হ্যাঁ। বাবা গত বছর চলে গেছেন। জানাল যুথি।
- হুম। বিয়ে থা? ফের প্রশ্ন করলেন লোকটি।
যুথি বলল, বৃদ্ধা মাকে ছেড়ে বিয়ে করে পালাই কী করে বলুন? আর আপনি? মানে...
আবারও যুথির কথা মাঝপথে কেটে ম্লান হেসে ওই ব্যক্তি বললেন, 'কী দরকার? আর হয়তো আধ ঘণ্টা আমরা একসঙ্গে পথ চলবো। তারপর দুজন দুদিকে।'
- জানেন আপনার কথার টানটা আমার বেশ পরিচিত লাগছে। বলল যুথি।
কথাটা 'হবে হয়তো' বলে উড়িয়ে দেন লোকটি। উল্টে বলেন, বিয়ে করেননি বুঝলাম। কিন্তু-
- সম্পর্কের কথা বলছেন? প্রশ্ন করে যুথি। আমতা আমতা করতে থাকেন লোকটি। যুথি জানায়, হয়েছিল। হৃদয়ে হৃদয়ে মিলন বলতে যা বোঝায় তাই। অরিত্র মার রক্তে-মজ্জায়-অস্থিতে.... তারপর একদিন সে হারিয়ে গেল জানেন। অস্ফূটে বলে উঠল যুথি। জানাল, অরিত্রকে হারিয়েছে সে নিজেই।
অরিত্র ও যুথি একই কলেজে পড়ত। অভাবের সংসার টানতে এরপর পড়াশোনা ছেড়ে চাকরিতে প্রবেশ করে যুথিকা। তার বাবাও প্যারালিসিস হয়ে শয্যাশায়ী হন। তখন সংসারের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন যুথি। ইতিমধ্যে অরিত্রও চাকরি পায়। যুথিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সে। বাবা-মায়ের কথা ভেবে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় যুথি। সেসব বলতে গিয়ে তার গলা ধরে আসে।
-
কেন
রিফিউজ
করলেন?
যুথিকাকে
প্রশ্ন
করলেন
ওই
ব্যক্তি।
যুথি
বলল,
অরিত্রের
বাবা-মা
ছিলেন।
ঘাড়ের
ওপর
বিবাহযোগ্যা
বোন।
এরপর
আমাদের
দায়িত্ব
নিলে
অরিত্র
বিপদে
পড়ত।
অরিত্র
সুখি
হোক,
সে
সেটাই
চেয়ে
এসেছে
বলে
জানাল
যুথিকা।
প্রিন্সেপ
ঘাটে
শেষ
সাক্ষাৎকারে
অরিত্রকে
অনেক
কুৎসিত
কথা
বলেছিল
যুথি।
সেসব
সে
নিজেকে
দূরে
সরিয়ে
নিয়ে
যাওয়ার
জন্য
করেছিল
বলে
জানাল
যুথি।
সেদিন
অরিত্রকে
প্রথম
হাউ
হাউ
করে
কাঁদতে
দেখেছিল
যুথি।
তার
বুকটা
সেদিন
ভেঙে
চৌচির
হয়ে
গিয়েছিল।
তবু
তার
কিছু
করার
ছিল
না
বলেই
ধরা
গলায়
জানাল
যুথিকা।
ওড়ানায়
চোখ
মুছে
ফের
চলতে
শুরু
করে
সে।
পাশাপাশি
হেঁটে
চলে
লোকটিও।
যুথিকে
সান্তনা
দেওয়ার
চেষ্টা
করেও
ব্যর্থ
হন
তিনি।
- তারপর কী হল? যুথিকে প্রশ্ন করেন অজানা ব্যক্তি।
- অরিত্রকে মুছে ফেলার গ্লানি বুকে বয়ে বেড়াচ্ছি। বলল যুথি। এরপর ওই লোকটির পরিচয় জানতে চাইল সে।
উত্তরে ওই ব্যক্তি জানালেন, আটঘরায় একটা অনাথ আশ্রম চালান তিনি। অনেকগুলো বাচ্চা নিয়ে তাঁর দিন কেটে যায়। বাবা-মা গত হয়েছেন। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আর স্ত্রী? প্রশ্ন করে যুথিকা।
- না, হলো না। মানে সেরকম কাউকে খুঁজেই পেলাম না। জানালেন ওই ব্যক্তি। তবে একজনকে যে তিনিও ভালোবাসতেন, তা তাঁর মুখ ফুটে বেরিয়ে আসে। এরই মধ্যে বাড়ির সামনে এসে হাজির হয় যুথি। লোকটি তার মায়ের সঙ্গে দেখা করে ফেরার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন।
- কিছুটা কুণ্ঠা নিয়ে যুথি বলে, আসুন। শীতের রাতে এক কাপ চা খেয়ে যেতে হবে কিন্তু। তবে লোকটি তাতে রাজি হয় না। হালকা হেসে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় যুথি। পিছনে ওই ব্যক্তি। আচমকাই তিনি যুথিকে দাঁড়াতে বলেন।
যুথি ঘুরে দাঁড়াতেই ওই ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, অরিত্রর সঙ্গে কখনও দেখা হলে কী বলবেন আপনি? যুথি বলে যে সে ক্ষমা চাইবে না। কারণ কর্তব্য তাঁকে নিষ্ঠুর করেছে। তাঁর ভালোবাসাকে পদদলিত করেছে। অরিত্র হয়তো ঘর বেঁধেছে, বাঁধাই উচিত, মনে করে যুথি।
- আর যদি অরিত্র আপনার প্রতীক্ষায় বসে থাকে? ওই ব্যক্তির কথা শুনে থমকে দাঁড়ায় যুথি। বলে, আবার কোনও দিন অরিত্রকে খুঁজে পেলে সে তার কাছে আশ্রয় চাইবে। বলতে বলতেই ডুকরে কেঁদে ওঠে যুথিকা। কান্না শুনে দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন যুথির মা।
যুথির মায়ের দিকে এগিয়ে যান লোকটি। প্রণাম করে বলেন, 'মাসিমা চিনতে পারছেন, আমি অরিত্র।' শুনে বুকভাঙা আর্তনাদ বেরিয়ে আসে যুথির মুখ থেকে। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে। এতক্ষণ ধরে চেনা মনে হওয়া ওই ব্যক্তিকে অবশেষে খুঁজে পেয়ে আনন্দ আত্মহারা হয় যুথি।
- এ কথা আগে বলোনি কেন? সে প্রশ্ন করে।
প্রেমিক বলে, আগে জানালে যুথি অরিত্রের কাছে আশ্রয় চাইত না। অকপটে মনের কথা বলতে পারতো না। অনাথ শিশুদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে গিয়ে সে কখন নিজেই আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে, তা টেরই পায়নি অরিত্র। তাই সে আরও একবার যুথির কাছে আশ্রয় পেতে চায়। সে কথা যুথির মাকে কোনও দ্বিধা না রেখেই জানায় অরিত্র। ত্রয়োদশীর চাঁদটা যেন বেশি মাত্রায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।