ট্রাম্পের টুইট করা বন্ধ? এই হাস্যকর ব্যক্তি কিনা মার্কিন রাষ্ট্রপতি হওয়ার খোয়াব দেখেন?
শেষলগ্নে যাতে ট্রাম্প আবার কিছু কেলো না করে বসেন তার জন্য নাকি তাঁর টুইট করা বন্ধ করা হয়েছে; এই ব্যক্তি কিনা সামলাবেন আমেরিকার দায়িত্ব? ঠিক প্রশ্নই তুলেছেন ওবামা
নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে এসে বিতর্কিত রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটের ঘনঘটা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। যেই টুইটের মাধ্যমে নিউ ইয়র্কের এই ধনকুবের ব্যবসায়ী প্রার্থী অতীতে ঝড় তুলেছেন, নানা সময়ে লজ্জায় ফেলেছেন নিজের শিবিরকেই, নির্বাচনের ঠিক আগে সেই টুইটই তিনি আশ্চর্যরকমের নিশ্চুপ। টুইট যে তাঁর হ্যান্ডেল থেকে একটিও পোস্ট করা হচ্ছে না তা নয়, কিনতু অতীতের সেই ঝাঁঝ উধাও।
ব্যাপারটা কী?
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর একটি প্রতিবেদনের মতে, ট্রাম্পকে নিয়ে শেষবেলায় আর ঝুঁকি নিতে রাজি নন তাঁর শিবির। টুইটের মাধ্যমে ট্রাম্পের নানা জনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার সময়ে অসময়ে বিড়ম্বনায় ফেলেছে রিপাবলিকান নেতৃত্বকে (অসময়ে কারণ রাত তিনটের সময়েও ট্রাম্প ছাড়েননি টুইটারে প্রাক্তন এক বিশ্বসুন্দরীর বিষোদ্গার করতে) আর নির্বাচনের একদম আগে তাই তিনি কী না কী বলে বসেন, সেই ভয়ে তাঁর টুইট করাই বন্ধ করতে হয়েছে দলকে। গত কয়েকদিন যাবৎ ট্রাম্পের টুইটার একাউন্ট থেকে শুধুই বিভিন্ন রাজ্যের মানুষের প্রতি ধন্যবাদজ্ঞাপক পোস্ট করতে দেখা যাচ্ছে।
এই ঘটনায় ট্রাম্পকে বিঁধেছেন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামাও। গত রবিবার (নভেম্বর 6) ফ্লোরিডাতে ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের হয়ে প্রচার করতে গিয়ে ওবামা বলেন যদি সত্যি ট্রাম্পের টুইট করা বন্ধ হয়ে গিয়ে থাকে তবে বুঝুন প্রার্থীটিকে। যিনি নিজের টুইট একাউন্ট সামলাতে পারেন না, তিনি দেশের পরমাণু অস্ত্রের কোড কীভাবে সামলাবেন, কটাক্ষ ওবামার।
ট্রাম্পের টুইট একাউন্ট তাঁর নাগালের বাইরে রাখা হয়েছেন কিনা তা তিনি এবং তাঁর দলই জানে কিনতু এই ঘটনাটি সত্যিই উদ্বেগজনক। একজন প্রার্থী, যিনি কিনা বিশ্বের সবচেয়ে মহাশক্তিধর রাষ্ট্রের প্রধান হওয়ার খোয়াব দেখেন, তাঁকে যদি প্রতি পদে রাস্তা দেখিয়ে দিতে হয় তবে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, তামাম দুনিয়ার পক্ষেই এক বড় বিপদের সঙ্কেত বয়ে আনে।
ট্রাম্প যে নির্ভরযোগ্য নন, বুঝিয়ে দিল তাঁর নিজের দলই?
এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে এই সন্দেহও ঘনীভূত হয় যে রিপাবলিকানরা মেনে নিয়েছেন যে ট্রাম্প আদৌ রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্য নন। হিলারি ক্লিন্টন স্বর্গ থেকে মর্তে এসেছে ট্রাম্পকে কোনঠাসা করেছেন তা নয়। বরং ট্রাম্পই প্রবল দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো নিজের পায়ে নিজেই কুঠারটি মেরেছেন এবং এই শেষলগ্নে ড্যামেজ কন্ট্রোল করে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে নেমেছেন ছত্রভঙ্গ রিপাবলিকানরা।
এই ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হলে কে তাঁকে লাগাম পড়াবে?
কিনতু এখন না হয় তাঁর দল তাঁর রাশ টানছে, এই ট্রাম্প যদি দেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে যান তখন তো আর তাঁকে লাগাম পড়ানোর কেউ থাকবে না। তখন তাহলে আমেরিকার এবং বিশ্বের জনগণের সামনে বড় বিপদ দেখা দিলে কে বাঁচাবেন?
আসলে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের সেনাপতিরা এখন নির্বাচন-পরবর্তী সময়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। ট্রাম্পের আত্মসংযমহীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ যে পুরো রিপাবলিকান পার্টিরই সমূহ ক্ষতি করেছেন তা তাঁরা মেনে নিচ্ছেন এক বাক্যে আর এই শেষবেলায় যাতে ট্রাম্প এমন কিছু না করে বসেন যে তার খেসারত তাঁদেরও দিতে হয় নির্বাচনের পরে, সে ব্যাপারেই সাবধানতা অবলম্বন করে এগোচ্ছেন।
যে আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ট্রাম্পের উত্থান, তাকেই ধ্বংস করলেন তিনি
ট্রাম্প ছিলেন একটি আন্দোলনের প্রতীক -- রিপাবলিকান দলের সাদা রক্ষণশীল আদর্শ যে আন্দোলনের মূলে রয়েছে। কিনতু ব্যক্তি ট্রাম্পের বাড়াবাড়ি সেই রাজনৈতিক আদর্শটিকেই কবরে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন তাই টুইট করা বন্ধ করে অবস্থা সামাল দিতে হচ্ছে। কিনতু এখন বোধহয় অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।