আপনি কি জানেন বিষণ্ণতার অন্যতম কারণ ফেসবুক, মুরগীর মাংস ?
ডিপ্রেশনের
বাংলা
নাকি
নিম্নচাপ
?
বৃষ্টি
এল।
সঙ্গে
কফি
এক-দু'
কাপ
নামছে
বিকেল,
অল্প
ভিজে
রাস্তাঘাট
ছাতার
নীচে
মিইয়ে
গেল
পাপড়ি
চাট
বন্ধুরা
সব
ফিরছে
বাড়ি
দূর
থেকে...
কেন
যে
আজ
হিংসে
হল
তাই
দেখে,
দেখতে
গিয়ে
সন্ধ্যে
হল
জানলাতেই
আগের
মত
মেঘ
করেছে
...
কান্না
নেই
কেবল
মুঠোয়
বন্দি
কফির
একলা
কাপ
ডিপ্রেশনের
বাংলা
জানি
।
মনখারাপ
।
-শ্রীজাত
এই প্রতিবেদনটি শুরু করার ক্ষেত্রে শ্রীজাতর এই কবিতাটি অত্যন্ত যথাযথ। তাই শুরু করলাম এই কবিতাটিকে সামনে রেখেই। 'ডিপ্রেশন' বা বিষণ্ণতা আজকাল অত্যন্ত সাধারণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরে ঘরে বিষণ্ণতায় ভুগছেন এমন রোগীর সন্ধান মেলে। শুধু প্রাপ্তবয়স্কই নয় আজকাল ছোটেদের মধ্যেও এই রোগের প্রভাব দেখা যায় বহুল পরিমাণে।
বিষণ্ণতার ফলে মানুষের সাধরণ জীবনযাপন ব্যহত হয়। এটি একটি মনোরোগ। এই রোগ মনের উপর এতটাই ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে যে মানুষ ক্রমশ নিরাশাবাদী হয়ে ওঠেন। এমনকী এই বিষণ্ণতা থেকেই অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নেন।
সাধারণভাবে মানুষের ধারণা সম্পর্কের ইতি, খুব কাছের মানুষের মৃত্যু, অপূর্ণ চাহিদা এর থেকেই বিষণ্ণতার অন্ধকারে ঢেকে যায় মানুষের মন। হ্যাঁ। তা তো কিছুটা বটেই। তবে শুধু তাই নয়। এছাড়াও আরও এমন কতগুলি বিষয় রয়েছে যা আপনার দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িত, অথচ তা যে আপনাকে 'ডিপ্রেশনের রোগী' বানিয়ে ফেলতে পারে সেকথা হয়তো আপনি জানেনই না।
১. ওষুধ
যে ওষুধ রোগ নিরাময় করে তা আপনার শরীরের জন্য কখনও কখনও হানিকরও হতে পারে। বহু ওযুধের ক্ষেত্রেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে তা কম বেশি আমাদের সকলেরই জানা। মূলত, অ্যাসিডিটি, ঘুমের ওযুধ এই ধরণের ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম বেশি থেকেই থাকে। আর এই ধরণের ওষুধ বেশি সেবনের ফলে বিষণ্ণতার জন্ম হতে পারে।
২. মুরগীর মাংস
মুরগীর মাংস আমিষাশীদের ক্ষেত্রে প্রায় রোজকার খাদ্য তালিকাতেই থাকে। এমনকী ডায়েট করার ক্ষেত্রেও অনেকে চিকেন স্যালাড, চিকেন স্টু জাতীয় খাবার খান। যাতে তেল মশলা কম খাওয়া হয়, আবার খাওয়ার ক্ষেত্রে যেন বিস্বাদ না লাগে। ক্রমেই বাড়ছে মুরগীর মাংসের চাহিদা। আর তাই মুরগী বিক্রেতারা অনেকসময়ই কৃত্রিম পদ্ধতিতে লেজার বাল্ব ও ওযুধের মাধ্যমে মুরগীর বেড়ে ওঠার সময় ত্বরান্বিত করেন। আমরা যখন সেই মুরগীর মাংস খাই তার প্রভাব আমাদের শরীরেও পড়ে। আর তার ফলে বিষণ্ণতা তৈরি হতে পারে।
৩. ঘুমের অভ্যাস
ঘুমের অভ্যাস বিষণ্ণতার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাতে ঘুম, সকালে কাজ। এই প্রাকৃতিক নিয়ম মেনেই তৈরি আমাদের শরীর। রাতে ঘুম হলে তবেই আমাদের শরীর সবচেয়ে বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে পারে সারাদিনের জন্য। আর রাতের নিস্তব্ধতায় গভীর ঘুম সম্ভবও হয়। কিন্তু আজকালকার জীবনধারায় অনেকেই আছেন যাঁরা কাজের জন্য বা নাইট-ক্লাব পার্টির জেরে সারারাত জেগে থাকেন এবং ভোরের সময় ঘুমতে যান। দিনের অধিকাংশ সময় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেন। এর ফলে আমাদের শরীর স্বাভাবিক জীবনচক্র ব্যহত হয়। যা বিষণ্ণতার অন্যতম কারণ হতে পারে।
৪. ফেসবুক
মানুষ আজকাল এতটাই ফেসবুক নির্ভর হয়ে পড়েছেন যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল জগতের জন্য তাঁদের সামাজিক জীবন বলেই আর কিছু থাকছে না। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যাঁরা অতিরিক্ত ফেসবুক করেন বা ফেসবুকের মতো অন্যান্য সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আকৃষ্ট হন একটা সময়ের পর গিয়ে তাঁরা একাকীত্বে ভোগেন। আর সেখান থেকেই শুরু হয় বিষণ্ণতার।
৫. খুব কাছের মানুষের মৃত্যু
আপনার চারিপাশ সুন্দর হলে পছন্দের মানুষ থাকলে তবেই আপনার জীবনও রঙিন হয়ে ওঠে। বন্ধু-আত্মীয়-পরিজন যাঁরা আপনার খুব কাছের, তাঁদের অসময়ে চলে যাওয়াটা অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। মৃত্যুর রূঢ় বাস্তবকে গ্রহণ করতে না পেরে বিষণ্ণতার অন্ধকারে তলিয়ে যান অনেকে।
৬. অপূর্ণ প্রত্যাশা
কথায় আছে যাঁদের প্রত্যাশা কম তারা বাকিদের চেয়ে অনেক বেশি খুশি। কারণ বেশি প্রত্যাশা করলে অনেকসময় তা ভাঙার মুখোমুখিও হতে হয় আপনাকে। কারোর থেকে আমরা যখন কিছু প্রত্যাশা করি তখন নিজের অজান্তেই সেই ব্যক্তিকে আমরা আমাদের আঘাত করার কর্তৃত্ব দিয়ে দিই। আর আঘাত পেলেই সেখান থেকে শুরু হয় মন খারাপের। অনেকসময় আমরা নিজেদের ক্ষমতা না বুঝেই নিজের থেকেই মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশা করে ফেলি। আর তা পূরণ না হলেই খারাপ লাগা। যা জন্ম দেয় বিষণ্ণতার।
৭. সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া
প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া বা প্রেমে প্রত্যাখিত হওয়া অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। যে মানুষটিকে নিজের জীবন ভাবতে শুরু করেন আপনি যদি জানতে পারেন তিনি আপনার জন্য একই মনোভাব রাখেন না। বা আপনার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে চায়। সেক্ষেত্রে তৈরি হয় একাকীত্ব। আর তার পরিণতি বিষণ্ণতায়।
৮. শরীর খারাপ
জীবনের স্বাদ নিতে গেলে আপনার সুস্থ থাকাটা একান্ত প্রয়োজন। তবে অনেকসময় দুরারোগ্য অসুখের কারণে মানুষ নিজের সাধারণ জীবনযাপন করতে পারেন না। আর তা থেকেই নিরাশার জন্ম। বিছানায় পড়ে থাকা, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে না পারাটাই ক্রমশ একজনকে বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশনের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
৯. রূপের কমতি
অনেকেই ভাবতে পারেন রূপটাই কী শেষ কথা। না শেষ কথা নয় ঠিকই তবে আজকালকার প্রতিযোগীতামূলক জীবনযাত্রায় রূপের ঘাটতি অনেকাংশে আত্মবিশ্বাসকে ক্রমশ নিম্নমুখী করে। একটি মেয়ে বা ছেলে রূপসী বা হ্যান্ডসম হলে আশেপাশেপ লোকজনের দৃষ্টি আকর্যণ করে নিমেষেই। স্কুল-কেলজ হোক বা অফিস, পার্টি হোক যে কোনও অনুষ্ঠানেই আমরা জানতে অজান্তে অন্য়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। রূপের ঘাটতি থাকলে অত সহজে তা সম্ভব হয় না। আর এর থেকেই আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে এসে ঠেকে। বিশেষ করে তরুণ সমাজের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়। আর তা থেকেই শুরু হয় বিষণ্ণতা।
১০. পছন্দের কাজ করতে না পারা
আজকের প্রতিযোগিতার বাজারে টাকা রোজগারের জন্য পছন্দের পেশা বেছে নিতে পারেন না। কারণ ঝুঁকি থেকে যায়। কেউ হয়তো লেখক হতে চান অথচ বাড়ির চাপে ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিক্যাল পড়তে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ অভিনয় করতে চান অথচ সংসার চালানোর জন্য তাঁকে কেরানির কাজ করতে হচ্ছে। এমন উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি। কাজের প্রতি ভালবাসা বা টান না থাকায় কাজে নিজের ১০০ শতাংশ দিতে পারছেন না। ফলে কাজে সাফল্যও পাচ্ছেন না। কাজ করতে না পারায় বসের ধমকানি উপরি পাওনা। এদিকে ভাল না লাগা সত্ত্বেও যন্ত্রের মতো একই কাজ করে যেতে হচ্ছে। এই দোটানার থেকে শুরু হয় বিষণ্ণতা