বাংলায় জোট ছাড়া আজ কংগ্রেসের অস্তিত্বরক্ষা প্রায় অসম্ভব; কিন্তু নাক-উঁচু বাবুরা তা বুঝছেন কই?
অবশেষে শুরু হল সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। ১১ এপ্রিল সারা দেশজুড়ে ৯১টি আসনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হচ্ছে যার মধ্যে দু'টি পশ্চিমবঙ্গে (কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার)।
অবশেষে শুরু হল সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। ১১ এপ্রিল সারা দেশজুড়ে ৯১টি আসনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হচ্ছে যার মধ্যে দু'টি পশ্চিমবঙ্গে (কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার)। দু'হাজার চোদ্দতে ওই দু'টি আসনেই জয়লাভ করে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।
এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে লড়াইটাই মুখ্য আকর্ষণ। তৃণমূলকে হারাতে না পারলেও পদ্মবাহিনী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে কতটা বেগ দিতে পারে, সেটাই দেখার।
তবে একদিকে যখন এই দু'টি দল লড়ছে, তখন বঙ্গের অন্যদুটি পুরোনো শক্তি -- বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের অবস্থা শোচনীয়। একসময়ে রাজ্যে দাপট দেখানো দু'টি দলই এখন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইতে ব্যস্ত। মাঝে জোটের উদ্যোগ এ যাত্রায় পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা করা হলেও তা মাঝপথেই মারা পড়েছে। নামে চতুর্মুখি লড়াই হলেও বাম এবং কংগ্রেস দুই শিবিরই জানে যে ২০১৯-এর নির্বাচন তাদের দু'জনের পক্ষেই কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
বাম এবং কংগ্রেসের মধ্যে কংগ্রেসের কথা বলা আরও জরুরি হয়ে পড়ে কারণ এই দলটিকে এখনও একটি জাতীয় দল হিসেবে ধরা হয়। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইতে এখনও বহু আঞ্চলিক শক্তি এখনও কংগ্রেসের উপরে ভরসা রাখে।
এহেন দলটির পশ্চিমবঙ্গে অবস্থা সঙ্গীন এবং খুব তাড়াতাড়ি তাদের কপাল ফিরবে বলে তাদের অতি বড় সমর্থকও মনে করে না।
একই দলের মধ্যে হাজারো দল, তার নাম পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস
পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দলটি বহু গোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং তাদের সবাইকে এক করা বোধকরি হাই কম্যান্ডেরও সাধ্যের বাইরে। তাই, যখন দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী দিল্লিতে বা জাতীয় স্তরে মমতার সমর্থনে কথা বলে রাজ্যে এসে তাঁরই বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান, বোঝা যায় দলের নীতিগত দুর্বলতা। বঙ্গীয় কংগ্রেসের অনেক নেতাই মমতাকে দুচক্ষে দেখতে পারেন না আর মনে করেন যে তাঁদের দলের আজকের অবস্থার জন্যে মমতা এবং শীর্ষ নেতৃত্বই দায়ী কারণ তৃণমূলের সঙ্গে জোট বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরা আখেরে কংগ্রেসকেই দুর্বল করেছেন।
বঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে গেলে কংগ্রেসকে ধরতে হবে তৃণমূলের হাত
কিন্তু আসলে ব্যাপারটা উল্টো। বঙ্গীয় কংগ্রেসের গোষ্ঠী নেতাদের কুপমণ্ডুকের আখ্যা দেওয়া বোধহয় ভুল হয় না। তাঁরা নিজেদের প্রভাবের এলাকার বাইরে আর কিছুকে গুরুত্ব দিতে নারাজ আর এই সংকীর্ণতার জন্যেই দলের আজকের এই ভরাডুবি।
কংগ্রেস যদি আজকেও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে চায়, তবে তাহলে তাকে তৃণমূলের হাত ধরতেই হবে (বামেদের হাত ধরা না ধরা সমান)। আর না হলে বসে বসে দেখতে হবে দলের মধ্যে ভাঙন কারণ রাজ্যের দলীয় নেতৃত্ব এখন এতটাই হতাশাব্যঞ্জক যে মমতার কোনও বিকল্প নিরুৎসাহ কর্মী-সমর্থক এমনকী মাঝারি নেতারাও দেখতে পান না। তাই একদিকে তৃণমূল থেকে যেমন দেখা যাচ্ছে অনেকে বিজেপিতে গিয়ে ভিড়ছেন, তেমনই কংগ্রেস এবং কিছুটা বাম শিবির থেকে চলছে তৃণমূলে ঢোকার হিড়িক।
কবে ঘি খেয়েছিলাম, সেই নস্টালজিয়ায় এখনও বিভোর কংগ্রেস
স্বাধীনতার পরে দু'দশকেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গে দাপট দেখানো কংগ্রেসের আজকের পরিণতির একটি বড় কারণ হচ্ছে জোটে অনীহা| এই অনীহা যে শুধুমাত্র মমতার প্রতি বিদ্বেষ থেকে তা নয়, এর একটি বড় কারণ হচ্ছে কংগ্রেস আজও নিজেকে দুর্বল ভাবতে রাজি নয়; মনে করে আজও বুঝি তারা আগের মতোই বড় শক্তি| দলের ছোট, মাঝারি থেকে বড় -- সবারই এই সমস্যা| এই নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একা লড়াই করে কংগ্রেস শুধু বিস্তর সময়ই নষ্ট করে চলেছে| আর এই চিন্তাভাবনায় আমূল পরিবর্তন না এলে পরিস্থিতি বদলানোর কোনও সম্ভাবনাই নেই, তা বঙ্গ হোক বা সারা দেশেই|
এই লোকসভা নির্বাচন কংগ্রেসের কাছে এক বড় লড়াই| আসন সংখ্যা তো তলানিতে ঠেকেছেই, পাশাপাশি শতকরা ভোটের হিসাব নেমে গিয়েছে হু-হু করে এবং ইতিহাসগতভাবে বাংলার যে অঞ্চলগুলিতে কংগ্রেস এখনও কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে, সেগুলিতেও এখন দেখা দিয়েছে ভাঙন| গতবারের মাত্র চারটি আসন থেকেও যদি এবারে কংগ্রেসের ঝুলি খালি হয়, তবে তা শতাব্দী-প্রাচীন দলটির পক্ষে এক দুঃসংবাদ হবে|