সাবধান হও ব্রিকস সদস্যরা, নইলে সমূহ বিপদ, বলল চিনা পত্রিকা
ব্রিকস-এর সদস্য দেশগুলি যদি তাদের সমস্যাগুলি এখুনি সমাধান করার কথা না ভাবে, তাহলে তাদের সামনে ঘোর বিপর্যয়, বলল চিনা দৈনিক গ্লোবাল টাইমস।
ব্রিকস দেশগুলি তাদের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে নানা সাফল্য লাভ করলেও নিজেদের স্বার্থের খাতিরে তারা যদি এক না হতে পারে, তবে এই গোষ্ঠী ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে বলে জানিয়েছে চিনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা।
"ব্রিকস নিড টু এড্রেস চ্যালেঞ্জেস টু স্ট্রেনদেন টাইস" শীর্ষক একটি সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে ব্রিকস-এর সামনে মূলত তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে: স্বার্থের ঐক্য, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং বাহ্যিক চাপ। যদি ব্রিকস-এর সদস্য দেশগুলি এই বেলা সাবধান না হয় এই সমস্যাগুলি সম্বন্ধে, তবে তারা বড় সমস্যায় পড়বে বলে জানিয়েছে সম্পাদকীয়টি।
স্বার্থগত ঐক্যের অভাব
স্বার্থের ঐক্যের অভাবের কথা বলতে গিয়ে সম্পাদকীয়টি জানিয়েছে যে সম্পদ এবং বাজার ধরার এবং বিদেশী লগ্নিকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিযোগিতায় ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠেছে। ব্রিকস-এর পাঁচটি দেশই (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) রফতানি এবং বিদেশী লগ্নির উপর নির্ভর করে থাকার ফলে তাদের নিজেদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা বড় হয়ে উঠেছে।
পারস্পরিক অবিশ্বাস
পাশাপাশি, ব্রিকস-এর কয়েকটি দেশ --- যেমন ব্রাজিল, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা চিনের বিরুদ্ধে শস্তা পণ্য ঢুকিয়ে তাদের ঘরোয়া বাজারকে প্রভাবিত করার অভিযোগ আনে প্রায়ই। ভারত এবং ব্রাজিল ইতিমধ্যেই নিজেদের দেশে চিনের অর্থনৈতিক প্রভাব খর্ব করতে প্রভূত ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল টাইমস-এর সম্পাদকীয়টি। এর মধ্যে দিয়ে আরও একবার সামনে আসে হয় ব্রিকস-এর ঐক্যের অভাব।
ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত
এছাড়াও রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত। সম্পাদকীয়টিতে বলা হয়েছে ব্রিকস-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য ভারত এবং চিনের মধ্যে সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা এবং পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে ভারত এবং চিনের তরজাও ব্রিকস-এর পক্ষে ভালো বার্তা নয়।
সদস্য দেশগুলির ভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা
গ্লোবাল টাইমস এও বলে যে ব্রিকস দেশগুলির রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্য এক না হওয়াও এই গোষ্ঠীর এগোনোর পথে এক বড় বাধা। সম্পাদকীয়টিতে বলা হয়েছে যেখানে ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা চায় ব্রিকস-এর মধ্যে দিয়ে তাঁদের নিজস্ব আঞ্চলিক প্রভাব (রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে) বাড়াতে; রাশিয়া চায় এই মঞ্চটিকে পশ্চিমের সঙ্গে তার নিজের লড়াইয়ে রাজনৈতিক এবং কৌশলগত অর্থে ব্যবহার করতে।
পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি দেখিয়ে বাকি দুনিয়ার সঙ্গে জ্বালানি এবং অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার মঞ্চ হিসেবেই ব্রিকসকে কাজে লাগাতে চায় মস্কো।
প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা
ব্রিকস-এর এই মুহূর্তে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাও। যদিও শীর্ষ সম্মেলন এবং মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয় ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে, কিনতু তাদের মধ্যে এখনও কোনও প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। এর ফলে ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনওরকম সহযোগিতা প্রক্রিয়া গড়ে ওঠেনি। এখনও পর্যন্ত নেই কোনও সদর দফতর বা কার্যপ্রণালীর নির্দেশনামা।
এখনও পর্যন্ত, ব্রিকস-এ যা কথাবার্তা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা আলাপচারিতা-বৈঠকের মধ্যে দিয়েই। গ্লোবাল টাইমস-এর সম্পাদকীয়টির মতে, এর ফলে ব্রিকস-এর কাজকর্মে কোনওরকম নির্দিষ্ট দেখা যাচ্ছে না। সবটাই হচ্ছে ভাসা-ভাসা।
যদি কোনও একটি সদস্য দেশের নেতৃত্বে বদল আসে এবং ব্রিকস সম্পর্কে সেই নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যরকম হয়, তাহলে তা আখেরে অসুবিধা করতে পারে এই গোষ্ঠীরই, বলে জানিয়েছে গ্লোবাল টাইমস। তাছাড়া, ব্রিকস-এ নতুন কোনও সদস্য যোগ দিতে পারে কিনা বা এখনকার সদস্যদের মধ্যে কেউ বেরিয়ে যেতে পারে কিনা, সে সম্পর্কেও কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই।
পশ্চিমী দুনিয়ার চাপ
এছাড়া রয়েছে বাহ্যিক চাপ। সম্পাদকীয়টির মতে, ব্রিকস যাতে বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় উন্নত দেশগুলিকে কোনওরকম চ্যালেঞ্জের মুখে না ফেলতে পারে, তার জন্যে পশ্চিমি দুনিয়া আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে এই গোষ্ঠীটিকে ভেঙে ফেলতে।
অবশ্য, গ্লোবাল টাইমস শেষে আশাপ্রকাশ করে বলেছে যে ব্রিকস সদস্য দেশগুলির মধ্যে সংঘাত থাকলেও বৃহত্তর অর্থনৈতিক সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব।