আফগানিস্তানে পাঁকে পড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কতটা দিশা দেখাতে পারবেন ট্রাম্প?
বিন লাদেন খতম হয়েছে বহুদিন; কিন্তু তাও আফগানিস্তান থেকে সম্পূর্ণভাবে সেনাবাহিনী সরাতে এখনও সফল নয় আমেরিকা
দেড় দশক হয়ে গেল মার্কিন সেনা আফগানিস্তানের মাটিতে ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাত করেছিল ৯/১১-র বদলা নিতে। লাদেনকে বছর পাঁচেক আগে ওবামা প্রশাসন নিকেশও করে কিন্তু আফগানিস্তানের ভূমি থেকে আজও আমেরিকা তার সৈন্যবাহিনীকে সম্পূর্ণ সরাতে পারেনি।
ইতিমধ্যে ওয়াশিংটনে আরও একবার ক্ষমতা হস্তান্তর ঘটে গেল কিন্তু আফগানিস্তান নীতিতে এখনও নতুন কিছু করে দেখাতে ব্যর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ২০০১-এ মার্কিন হানার পরে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও এশিয়ার দেশটিতে আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে তালিবান শক্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে তার আফগানিস্তান যুদ্ধে ১১৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করার পাশাপাশি হারিয়েছে প্রায় ২,০০০ সৈনিক। আহত হয়েছে ২০,০০০-এরও বেশি সেনা।
কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও দু'দুজন রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও আফগানিস্তানে মার্কিন প্রশাসন যে পাঁকে পড়েছিল, তাতেই রয়ে গিয়েছে। উল্টে আফগানিস্তানে হানার পক্ষে যাঁরা এতদিন কথা বলছিলেন, তাঁরাও এখন আশা হারিয়ে ফেলছেন।
আর আফগানিস্তানে হামলার ১৫ বছর পরে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে একটি বড় প্রশ্ন উঠে আসতে চলেছে। কি করবে এবার মার্কিন প্রশাসন? কাবুলে আরও সৈন্য পাঠাবে? আরও পয়সা খরচ করবে? নাকি সেখান থেকে সমস্ত মার্কিন সেনাকে নিমেষে ফিরিয়ে আনবে?
যদিও এই বিষয় নিয়ে এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারের সময়ে কোনও আলোচনাই করেনি কোনওপক্ষ। আর তাতেই বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন ধোয়াঁশার মধ্যে আফগানিস্তানের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অবস্থান নিয়ে। এটুকু পরিষ্কার যে ট্রাম্প প্রশাসন যে নীতিই নিক, তার বাস্তবায়ন সহজ হবে না।
আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে তালিবান এবং অন্যান্য জঙ্গিদের পুনরুত্থান ঘটছে বেশ দ্রুত। অন্যদিকে, মার্কিন সহায়তায় সে-দেশে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব স্থাপন করার উদ্যোগটিও যে দারুন সফল হয়েছে, তা বলা যাবে না। আর তাই শেষ পর্যন্ত আবার মার্কিন সামরিক বাহিনীর ঘাড়েই দায়িত্ব বর্তাবে কী না, সংশয় দেখা দিয়েছে তাই নিয়ে।
আফগানিস্তানের নিজস্ব বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে সেখানে এখনও ৭,০০০ মার্কিন সেনা রয়েছে। এছাড়াও, জঙ্গি কার্যকলাপের মোকাবিলা করতে রয়েছে আরও ৬,০০০ জন সেনা। কিনতু মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে যে জঙ্গি আক্রমণ ঘটেই চলেছে, সে বিষয়ে ওয়াশিংটন যে খুব স্বস্তিতে থাকবে না, সেটা বুঝতে অসুবিধে হয় না। গত সপ্তাহেও বাগ্রামে আফগানিস্তানের প্রধান মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে একটি আত্মঘাতী হামলায় দুই আমেরিকান সৈনিক সহ চার মার্কিনির মৃত্যু হয়।
এবারের নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প যেখানে বারবার বিদেশের মাটিতে মার্কিন অভিযানের বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছেন, সেখানে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে তিনি কী কৌশল নেন, সেটাই এখন দেখার।
২০১২ সালেও ট্রাম্প ওবামা প্রশাসনকে একহাত নিয়েছিলেন আফগানিস্তানের প্রসঙ্গে। নিজেদের দেশের উন্নতি না করে আফগানিস্তানে পয়সা খরচ করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ট্রাম্পের কাজ খুব একটা সহজ হবে না। কারণ, আফগানিস্তানের নিরাপত্তার দায়ভার এখনও মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপরেই বর্তায়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে হাজার হাজার নাগরিক এখনও তাঁদের জীবনের দৈনন্দিন চাহিদা মেটান মার্কিন সেনাবাহিনীর ভরসাতেই। তাই এই বাহিনীকে যদি আচমকা ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে আফগানিস্তান যে ফের অন্ধকারে তলিয়ে যাবে, সে ব্যাপারে খুব সন্দেহের অবকাশ নেই।