হিন্দি বলয়ে মোদী-ম্যাজিকে বঙ্গ সিপিএমে কালো মেঘ
হিন্দি বলয়ে মোদী-ম্যাজিকের পর আশঙ্কার কালো মেঘ বঙ্গ সিপিএমেও। সাম্প্রতিক নির্বাচনে নিজেদের ফল নিয়ে যত না চিন্তা, তার থেকেও অধিকতর চিন্তা গ্রাস করেছে দলে ভাঙনের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায়।
হিন্দি বলয়ে মোদী-ম্যাজিকের পর আশঙ্কার কালো মেঘ বঙ্গ সিপিএমেও। সাম্প্রতিক নির্বাচনে নিজেদের ফল নিয়ে যত না চিন্তা, তার থেকেও অধিকতর চিন্তা গ্রাস করেছে দলে ভাঙনের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায়। বিশেষ করে বিজেপির বিপুল বিজয়ের পর নিচুতলার কর্মীরা লালাঝান্ডা ছেড়ে পদ্ম শিবিরে চলে যেতে পারে, এমন একটা আশঙ্কা আলিমুদ্দিনে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এই আশঙ্কার কালো মেঘে কীভাবে কাটানো যায়, তা জানা নেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের ধ্বজাধারীদের।
পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল নিয়ে পলিটব্যুরোর মন্তব্য, মানুষ যখন ভোট দিয়ে একটা দলকে জয়যুক্ত করেছেন, তখন তাকে মান্যতা দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। তবু বিজেপি-র এই জয় দেশের পক্ষে বিপজ্জনক হবে বলেই বর্ণনা করা হয়েছে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে। বলা হয়েছে, এই জয় গোটা দেশে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে উৎসাহ দেবে। বঙ্গ সিপিএমও এই মত পোষণ করে। তবে ১১ মার্চের ভোটের ফল প্রকাশের পর সিপিএম অদ্ভুতভাবে নীরবতা পালন করে চলেছে।
সিপিএম ও বামফ্রন্টের শরিক দলের নেতারা মনে করছে, বিজেপির এই বিশাল জয়ের ফলে পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া শিবিরের শক্তি বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হবে। বিজেপি-ত যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা বুমেরাং হতে পারে বামফ্রন্ট শিবিরের কাছে। সেই ভাঙনের পথ রোধ করতেই নয়া দাওয়াই খুঁজছে সিপিএম।
এই মুহূর্তে সিপিএমের পাখির চোখ পঞ্চায়েত নির্বাচন। ধরে নেওয়া যেতেই পারে পঞ্চায়েতে তৃণমূলই এক নম্বর দল হবে। সেক্ষেত্রে সিপিএম ও বিজেপির লড়াই দ্বিতীয় স্থানের দখল নিয়ে। কে হবে দ্বিতীয়? উত্তরপ্রদেশে বিপুল জয়ে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে এই মুহূর্তে উৎসাহ তুঙ্গে। সেই উৎসাহের জোয়ারে ভর করে অবশ্যই অ্যাডভান্টেজ বিজেপি। সিপিএম যদি এই যুদ্ধে বিজেপি-র কাছে হার মানে তাহলে ফিরে আসার স্বপ্ন দূরস্ত হয়ে যাবে একেবারে। ২০১৯ হোক হা ২০২১, সিপিএম বা বামফ্রন্টের কফিনে শেষ পেরেক পোতা হয়ে যাবে এই পঞ্চায়েতেই।
আর বিজেপি যদি আসন্ন পঞ্চায়েত সিপিএমকে একটা ঝটকা দিতে পারে, তবে ২০২১-এ তৃণমূলের চ্যালেঞ্জার হবে তারাই। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে যে কোনও মূল্যে দলের ভাঙন রুখে বিজেপিকে ঠোকানোর চ্যালেঞ্জ সর্বাগ্রে নিতে হবে সিপিএমকেই। নইলে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি-কে ঠেকাবে, আর সেদিকে তাকিয়ে প্রহর গুণবে সিপিএম, এখনও যদি সেই গতানুগতিক পন্থা নিয়েই বসে থাকেন নেতা-কর্মীরা, তাহলে ভরাডুবি নিশ্চিত।
উত্তরপ্রদেশসহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল নিয়ে দায়সারা বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত থেকেছে কেন্দ্রীয় সিপিএম নেতৃত্ব। পাঁচ রাজ্যে বাম শক্তিগুলি বেশ কিছু আসনে লড়েছিল। কিন্তু কল্কে পায়নি। মণিপুর ছাড়া বামেরা জমানত জব্দ হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে নোটা থেকেও কম ভোট পেয়েছে বাম দলগুলি। তার উপর মণিপুরে তৃণমূলের ফুল ফোটায় কাটাঘায়ে নুনের ছিটে পড়েছে আলিমুদ্দিনের।
কিন্তু সিপিএমের কাছে এখন সেটা জ্বালার কারণ নয়, তাদের চিন্তায় পদ্ম শিবির। এ রাজ্যে বিজেপি বাম ভোট ব্যাঙ্ক ফের প্রত্যাঘাত করলেও সর্বনাশ। বিজেপির পালে নতুন করে হাওয়া তৈরির সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। তা রাজ্য সিপিএম নেতৃত্বের চিন্তা বেশি বাড়িয়েছে। কারণ তাদের আশঙ্কা, বিগত নির্বাচনগুলির পর যেভাবে দল ও বামফ্রন্টের নিচুতলার কর্মীরা পদ্মশিবিরে গিয়ে ভিড়েছিল, এবারও তেমন কিছু হতে পারে।