ভারতীয় দলে খেলা প্রথম বাঙালি ক্রিকেটার যিনি স্যার ব্র্যাডম্যানকে স্টাম্প করেছিলেন!
ক্রিকেট বলতেই বাঙালিদের চোখের সামনে যেই মানুষটি ভেসে ওঠেন, তিনি নিঃসন্দেহে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে তিনি তো মাত্র এই আগের প্রজন্মের ক্রিকেটার। আর ভারতে তো ক্রিকেটের পত্তন হয়েছে এক শতকেরও আগে। তবে কী কোনও বাঙালি আর ভারতীয় ক্রিকেটে দাগ কাঁটার মতো অবদান রাখেননি? নিশ্চিই রেখেছেন। সৌরভেরও আগে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম নাম করা ওপেনার ছিলেন পঙ্কজ রয়। হালে ঋদ্ধিমান শাহাও বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তাঁর উইকেটের পিছনের দক্ষতার জন্য। তবে ঋদ্ধির আগেও একজন বাঙালি কিপার ছিলেন যিনি ভারতীয় ক্রিকেটে নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন। নাম, প্রবীর সেন।
ভারতের হয়ে খেলা প্রথম বাঙালি
ক্রিকেটের ইতিহাসে যাঁরা উৎসাহী, তাঁরা প্রবীর সেনকে চেনেন একমাত্র ভারতীয় কিপার হিসাবে যিনি স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে স্টাম্প করেছিলেন। তবে শুধু মাত্র বাঙালি আবেগের দিক দিয়ে দেখতে গেলে, তিনি প্রথম বাঙালি ক্রিকেটার যিনি ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছিলেন।
উইকেটরক্ষকদের লড়াই
প্রবীর যখন ভারতের জাতীয় দলে ঢোকেন, উইকেটের পেছনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে তখন কঠিন প্রতিযোগিতা চলছে মাধব মন্ত্রী ও নানা যোশির মধ্যে। আবার মাঝে মধ্যে এই অবতারে দেখা যেত ইব্রাহিম মাকা ও বিজয় রাজিন্দরনাথও। তবে এদেরকে কড়া টক্কর দিয়েছিলেন এই বঙালি সন্তান।
১৭ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণী ক্রিকেটে অভিষেক
১৯২৬ সালের ৩১ মে বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর। এরপর সপরিবারে চলে আসেন কলকাতায়। সেখানেই তাঁর স্কুলে পড়াশোনা। মাত্র ১৭ বছর বয়সে স্কুলের বৈতরণী পেরোনোর কিছুদিন পরই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে যায় তাঁর। ইডেন গার্ডেনসে হওয়া সেই ম্যাচে বাংলার প্রতিপক্ষ ছিল বিহার। ব্যাট হাতে দুই ইনিংসে মাত্র ১৩ ও ২ রান করেছিলেন। এছাড়া উইকেটকিপার হিসেবে ছিল তিনটি ডিসমিসাল।
প্রবীরের উত্থান
প্রথম ম্যাচের ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলতে বেশি সময় নেননি প্রবীর। দ্বিতীয় ম্যাচে হোলকারের বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলা। ওয়ান ডাউনে নেমে সিকে নায়ুডু, বিবি নিমবালকার, হীরালাল, মুশতাক আলিদের মতো বোলারদের বিপক্ষে ২২৫ মিনিট ক্রিজে টিকে থেকে ১৪২ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেন। এরপর আর ফিরে তাঁকাতে হয়নি তাঁকে।
অস্ট্রেলিয়া সফর
দলের সাথে প্রবীর অস্ট্রেলিয়া সফরে গেলেন প্রবীর। তবে দলে জেনি ইরানি থাকায় প্রথম দুটি টেস্ট ম্যাচে প্রবীরের স্থান হয়নি প্রথম একাদশে। গ্যাবায় প্রথম ম্যাচে ভারতের শোচনীয় পরাজয়, এবং সিডনিতে দ্বিতীয় ম্যাচ ড্র করার পর, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তৃতীয় টেস্টে ইরানির বদলে স্কোয়াডে নিয়ে আসা হয় প্রবীরকে।
ব্র্যাডম্যনকে স্টাম্প আউট করা
তবে জাতীয় দলে অভিষেকের আগেই হইচই ফেলে দিয়েছিলেন প্রবীর। অ্যাডিলেড ওভালে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ট্যুর ম্যাচে তিনি ভিনু মানকাড়ের বোলিংয়ে স্টাম্পিং করেছিলেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে। পরবর্তীতে প্রবীর নিজেও দাবি করেছিলেন, এটিই ছিল তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন। যদিও ব্যাট হাতে সেই পুরো সফরটাই যেন প্রবীরের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছিল। ছয় ইনিংসে মাত্র ৩৩ রান করেছিলেন তিনি।
কিপার হিসাবে রেকর্ড
এরপর দলে আসা যাওয়া জারি ছিল প্রবীরের। এরই মাঝে চিপকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কিপার হিসাবে গড়েছিলেন এক অনন্য রেকর্ড। সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে তিনি একে একে স্টাম্প করেন টম গ্র্যাভেনে, ডোলান্ড কার, ম্যালকম হিল্টন ও ব্র্যায়ান স্ট্যাথামকে - এবং প্রতিটিই মানকড়ের বলে।
প্রবীরের কেরিয়ার
মোট ১৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ২০টি ক্যাচ ধরার পাশাপাশি, ১১টি স্টাম্পিংও করেছিলেন প্রবীর। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০৮টি ক্যাচের পাশাপাশি তাঁর দখলে ছিল ৩৬টি স্টাম্পিং। ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট হাতেও তিনি মোটামুটি ভালোই রান করেছেন। তিনটি সেঞ্চুরিসহ ২৩.২৪ গড়ে ২,৫৮০ রান করেছিলেন তিনি। কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ে একদমই সুবিধা করতে পারেননি, এখানে তাঁর অর্জন মাত্র ১১.৭৮ গড়ে ১৬৫ রান।
ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি হয়েও জোটেনি খেলরত্ন! একনজরে অবাক করে দেওয়া তালিকা