ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ দলে সিদ্ধার্থ যাদব ডাক পেতেই ভিড় গাজিয়াবাদের মুদি দোকানে
আসন্ন এশিয়া কাপ ও অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের জন্য ভারতীয় দল ঘোষণা হয়েছে। আর তারপর থেকে অন্য ছবি ধরা পড়ছে গাজিয়াবাদের কোটগাঁওয়ের একটি ছোট্ট মুদি দোকানের সামনে। দোকানটি চালান শ্রবণ যাদব। তবে ভারতের দল ঘোষণার পর থেকেই শ্রবণকে তাঁর দোকানের নিয়মিত ক্রেতারা তো বটেই, অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাতে আসছেন আরও অনেকেই। কেন না, শ্রবণ-পুত্র সিদ্ধার্থ সুযোগ পেয়েছেন ভারতীয় দলে।
ছোট শহরের সিদ্ধার্থ
ভারতের যে অনূর্ধ্ব ১৯ দল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে অনেক ক্রিকেটারই রয়েছেন যাঁরা ছোট শহর থেকে উঠে এসেছেন। অনেকে আবার আছেন যাঁদের বাবা কিংবা মা অথবা দুজনেই খেলাধুলোর সঙ্গে জড়িয়ে। সিদ্ধার্থের বাবা শ্রবণ যাদব গাজিয়াবাদে নেটে কয়েক ওভার বোলিং করেছিলেন মনোজ প্রভাকরকে। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। কিন্তু ক্রিকেট খেলার প্রতি তাঁর যে আবেগ তাই সিদ্ধার্থের এগিয়ে চলার পথে ইতিবাচক ভূমিকা নেয়। শ্রবণ যাদব এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, "সিদ্ধার্থ যখন ছোট, তখন থেকেই আমি স্বপ্ন দেখতাম ও দেশের হয়ে খেলবে। ব্যাট হাতে নিয়ে প্রথম দিন থেকেই বাঁহাতে দাঁড়িয়েছিল। তা দেখে আমার মা বলেছিলেন, এ আবার কী! উল্টো দাঁড়িয়েছে কেন? আমি তখন মাকে বুঝিয়েছিলাম, এটাই ওর ব্যাটিং স্টান্স। সেদিন থেকে সিদ্ধার্থ বাঁ হাতে ব্যাটিং করে আসছে।"
বাবাই প্রেরণা
আট বছর বয়স থেকে ক্রিকেটে সিরিয়াস অনুশীলন শুরু সিদ্ধার্থের। তাঁর বাবা কাছের মাঠেই নিয়ে গিয়ে থ্রোডাউন প্র্যাকটিস করাতেন। এর একটাই উদ্দেশ্য, যাতে সোজা ব্যাটে খেলা রপ্ত হয়। বেলা ২টোর সময় দোকান বন্ধ করে ছেলেকে মাঠে নিয়ে গিয়ে ঘণ্টা তিনেক এভাবেই অনুশীলন করাতেন। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ফিরে ফের দোকান খোলা, এটাই ছিল শ্রবণের রুটিন। সিদ্ধার্থের ঠাকুমা চাইতেন নাতি পড়াশোনায় মন দিক। তাই শ্রবণ যাদবকে তিনি বলতেন, সিদ্ধার্থের জীবন নিয়ে এভাবে বাজি ধরা ঠিক হচ্ছে না। কেরিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে, তবে উৎসাহ দিতেন সিদ্ধার্থের ঠাকুরদা।
এগিয়ে চলা
সিদ্ধার্থের কেরিয়ারে ভূমিকা রয়েছে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটার আরাধ্য যাদবের পিতা অজয় যাদব ও সিদ্ধার্থের কোচ প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার অজয় শর্মার। অনূর্ধ্ব ১৬ ট্রায়ালে শ্রবণের অনুরোধেই সিদ্ধার্থের জন্য ভালো কোচের সন্ধান দেন অজয় যাদব। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। উত্তরপ্রদেশ অনূর্ধ্ব ১৬ দলের হয়ে সুযোগ পাওয়ার পর সেই মরশুমেই সিদ্ধার্থ সর্বাধিক রান সংগ্রাহক হন। একটি দ্বিশতরান,পাঁচটি শতরান করেন। এরপর সুযোগ জোনাল ক্রিকেট আকাদেমিতে, সেখান থেকেই খুলে যায় বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ক্রিকেট আকাদেমির দরজা।
নজরকাড়া পারফরম্যান্স
কোভিড পরিস্থিতি কাটিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠেয় অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে বিসিসিআই অনূর্ধ্ব ১৯ চ্যালেঞ্জার ট্রফি আয়োজন করে। সেখানেও সবচেয়ে বেশি রানের নিরিখে সিদ্ধার্থ ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে। এটি শতরান ও তিনটি অর্ধশতরান করেন। কলকাতায় অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজেও তিনি খেলে গিয়েছেন। সিদ্ধার্থ নিজের পরিবারের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কেও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তাই বন্ধুরা শপিং বা সিনেমা দেখতে গেলেও তিনি সেই পথে হাঁটেন না। ক্রিকেটই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। আর শ্রবণ যাদবের কথায়, সিদ্ধার্থকে দেখে অনেকেই বলতেন আপনার ছেলে ভারতের হয়ে খেলবে। সেটাই সত্যি হতে চলেছে।
Congratulations to three UP players vasu vats aradhya and sidharth for being selected for under 19 icc World Cup. Thanks @BCCI . @UPCACricket pic.twitter.com/LIraIUaJZZ
— Rajeev Shukla (@ShuklaRajiv) December 19, 2021