ধোনিকে কাদের পিছনে ফেলে নিয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস? কোন প্রেক্ষাপটে মাহি হন ভারত অধিনায়ক? জানালেন শ্রীনি
মহেন্দ্র সিং ধোনি চেন্নাই সুপার কিংসের হাতছাড়া হননি এন শ্রীনিবাসনের জন্যই। প্রথম আইপিএল নিলামে পরিকল্পনামাফিক না এগোলে ধোনিকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জার্সি গায়েও দেখা যেতে পারতো। চেন্নাই সুপার কিংসের সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে ধোনির ক্ষুরধার ক্রিকেট-মস্তিষ্ক। এমনকী তিনিই ভারতকে এনে দিয়েছেন টি ২০ বিশ্বকাপ। স্পোর্টসস্টারের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ধোনি সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জনসমক্ষে আনলেন এন শ্রীনিবাসন।
ধোনিকে নিতে মরিয়া
শ্রীনি বলেন, ২০০৮ সালের আইপিএলের নিলামে প্রথম দুটি পিক আমি মিস করেছিলাম। তখন ভিবি চন্দ্রশেখরকে বলি, ব্যাটন তুলে ধরতে, যে কোনও মূল্যেই হোক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে দলে নেব। আমি সহজ পাটীগণিত মাথায় রেখেই নিলামে এগিয়েছিলাম। পাঞ্জাব যুবরাজ সিংকে, দিল্লি বীরেন্দ্র শেহওয়াগকে, ব্যাঙ্গালোর রাহুল দ্রাবিড়কে ও মুম্বই সচিন তেন্ডুলকরকে আইকন প্লেয়ার হিসেবে নিতে রাজি হয়ে যায়। আইকন প্লেয়ারদের পিছনে বেশি অর্থ ব্যয় করলে আরও ২২ জন ক্রিকেটার নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ থাকবে না তা বুঝতে পারি। ধোনির বিডিং শুরু হয় ৪ লক্ষ মার্কিন ডলার থেকে। যখন দর ৯ লক্ষ মার্কিন ডলারে পৌঁছে যায় তখন তাঁকে নিতে লড়াইয়ে ছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস।
মুম্বইকে পিছনে ফেলে বাজিমাত
নিলাম চলতে চলতেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ধোনির জন্য ১৫ লক্ষ মার্কিন ডলার দর দিয়ে বসে। তখনই তারা বুঝতে পারে সবচেয়ে বেশি দামি প্লেয়ারের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি দর দিয়ে আইকন প্লেয়ার নিতে হবে। এর কিছু সময় পরেই মুম্বই চেন্নাইয়ের সঙ্গে দর কষাকষির লড়াইয়ে আর পেরে ওঠেনি। তাতেই চেন্নাই সুপার কিংস ধোনিকে দলে নিতে সক্ষম হয়। ধোনিকে গত মেগা মিলামে ১২ কোটি টাকায় রেখে দেয় চেন্নাই সুপার কিংস। শ্রীনিবাসন বলেছেন, ধোনি সব সময় চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গেই শুধু যুক্ত থাকবেন না, যুক্ত থাকবেন গোটা চেন্নাই শহরের সঙ্গেই। ধোনিকে ছাড়া যেমন সিএসকে হয় না, তেমনই ধোনিকেও সিএসকে ছাড়া কোথাও ভাবাই যাবে না।
বাইকে চেন্নাইয়ে
ধোনির বাইক-প্রেমের কথাও উঠে এসেছে শ্রীনিবাসনের কথায়। তিনি বলেন, আমরা জানতান ধোনি মোটরবাইক ভালোবাসেন। তাই তাঁকে বাইক দিয়েছিলাম। সেটি নিয়েই ধোনি বেরিয়ে যান। এই বাইক নিয়েই ধোনি চেন্নাইয়ের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছেন। চেন্নাইয়ের সঙ্গে ধোনির আত্মিক যোগ তৈরি হওয়ার পিছনে যে এই বাইকই সে কথা স্পষ্ট করেন শ্রীনি। যখনই ম্যাচ থাকত ধোনি বাইক নিয়েই সেখানে হাজির। নিজের মতো করে বাইক নিয়ে তিনি চেন্নাই শহরে ঘুরেছেন। তাতেই চেন্নাইবাসীর সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
টি ২০ বিশ্বকাপের আগে
ধোনির নেতৃত্বে ভারত প্রথম টি ২০ বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০০৭ সালের সেই বিশ্বকাপে ধোনি কোন প্রেক্ষাপটে অধিনায়ক হন সেটাও জানিয়েছেন প্রাক্তন বোর্ড সভাপতি। বোর্ডের তখনকার কোষাধ্যক্ষ শ্রীনিবাসন বলেন, আইপিএলের ঘোষণা হতে চলেছে। ভারত দক্ষিণ আফ্রিকায় টি ২০ বিশ্বকাপ খেলতে যাবে। রাহুল দ্রাবিড় অধিনায়কত্ব ছাড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। ইংল্যান্ড থেকে তিনি ফিরে এসেছেন। রাহুল নিজের উপর সন্তুষ্ট ছিলেন না। আমি দ্রাবিড়কে বোঝাই, অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলে ভারতের একদিনের আন্তর্জাতিক দল থেকে তাঁর বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরে সেটাই হয়েছিল। দ্রাবিড় পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন তৎকালীন বোর্ড সভাপতি শরদ পওয়ারের কাছে। তিনি দিলীপ বেঙ্গসরকার, প্রফেসর রত্নাকর শেট্টি ও সচিন তেন্ডুলকরকে ডেকে পাঠান। সচিন অধিনায়ক হতে চাননি। এই অবস্থায় কাকে ক্যাপ্টেন করা যায় তা নিয়ে একে অপরের দিকে সকলে তাকাতে থাকেন। আমি গোটা পরিস্থিতি দেখছিলাম। এরপর পাওয়ারই ধোনির নামটি তুলে ধরেন। তখনও সকলেই সাফল্যের বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু তারপর যা হয়েছে বাকিটা ইতিহাস।