মহাভারত আসলে কে লিখেছেন? বেদব্যাসের শ্লোকগাথা লিপিবদ্ধ করার উপাখ্যান বড়ই চমকপ্রদ
বেদব্যাস মহাভারতের রচয়িতা ছিলেন স্বয়ং ভগবান গণেশ, জানেন কী ছিল সেই উপাখ্যান
মহাভারত সংস্কৃত ভাষায় রচিত দুটি মহাকাব্যের অন্যতম। যেখানে মূল উপজীব্য বিষয় হল কৌরব ও পাণ্ডবদের দ্বন্দ্ব এবং কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধ। তার বাইরে দর্শন ও ভক্তির অধিকাংশ উপাদানই এই মহাকাব্যে সংযোজিত হয়েছিল। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী মহাভারতের রচয়িতা ছিলেন মহাঋষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস, যিনি ঋষি ব্যাসদেব বলেই পরিচিত। কিন্তু জানেন কি এই মহাভারত লিখেছিলেন স্বয়ং ভগবান গণেশ। এই প্রতিবেদনে সেই উপাখ্যানই বর্ণনা করা হল।
মহাভারত বা ভরত বংশের মহান উপাখ্যান যা সংস্কৃত ভাষায় লেখা হয়েছিল। ব্যাসদেব প্রথমে ৮৮০০ শ্লোকবিশিষ্ট 'জয়' নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। পরে ব্যাসদেবের শিষ্য বৈশম্পায়ন সেই গ্রন্থকে ২৪০০০ শ্লোকবিশিষ্ট 'ভারত' গ্রন্থ হিসেবে বর্ধিত করেন। পরে অপর এক শিষ্য 'ভারত' গ্রস্থকে বৃদ্ধি করে এক লক্ষ্য শ্লোক ও দীর্ঘ গদ্যাংশের 'মহাভারত' রচনা করেন বলে প্রচার।
মহাভারত মহাকাব্যটির আয়তন ইলিয়াড ও ওডিসি কাব্যদ্বয়ের সম্মিলিত আয়তনের দশগুণ এবং রামায়ণের চারগুণ। কিন্তু ব্যাসদেবের কাহিনির লিখিতরূপ কে দিয়েছিলেন, তা কি জানেন। ব্যাসদেবের কাহিনিটি নিজে হাতে লিখেছিলেন সিদ্ধাদাতা গণেশ। মহর্ষি বেদব্যাস হিমালয়ের পবিত্র গুহায় তপস্যা করার পর তাঁর মহাভারতের সম্পূর্ণ ঘটনাটি স্মরণ হয়ে যায়। মহাভারতে বর্ণিত রয়েছে এইরূপ কাহিনি।
ব্যাসদেব মনে মনেই রচনা করে ফেলেন মহাভারতের কাহিনি। কিন্তু তার পাশাপাশি তিনি ভাবেন এই কাহিনি লিপিবদ্ধে করে রাখা জরুরি। কিন্তু কে লিখবেন এই আখ্যান। ব্যাসদেব জানতেন, এটি কোনও সাধারণ লেখকের দ্বারা লেখা সম্ভব নয়। তাই তিনি ব্রহ্মাদেবের স্মরণ নিয়েছিলেন। ব্রহ্মদেব জানান, এই মহান কাহিনিটি সিদ্ধিদাতা গণেশের দ্বারা লিপিবদ্ধ হোক।
ব্যাসদেবের কথা শুনে গণেশ মহাভারত লিখতে সম্মত হন। কিন্তু শর্তারোপ করেন। সেই শর্ত ছিল, তিনি লিখতে আরম্ভ করলে তাঁর কলম থমতে দেওয়া চলবে না। ব্যাসদেবও পাল্টা শর্ত আরোপ করেছিলেন। তাঁর শর্ত ছিল, কোনও শ্লোকের অর্থ না বুঝে তিনি লিখতে পারবেন না। ব্যাসদেব প্রথমে ৮৮০০ কূটশ্লোক অন্তর্ভুক্ত করেন, যেন এই শ্লোকগুলির অর্থ অনুধাবন করতে গণেশের বেশ কিছুটা সময় লাগে, সেই অবসরে তিনি আরও কতকগুলি শ্লোক রচনা করে ফেলেন।
উভয়েই পরস্পরের শর্তে সম্ম্ত হন। এবং শুরু হয় মহাভারত লেখার কাজ। গণেশ খুব দ্রুত লিখতে পারতেন। ফলে অতি দ্রুততার সঙ্গে শ্লোক রচনা করার পিছনে ঋষি ব্যাসের প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু জটিল বাক্য রেখেছিলেন ব্যাসদেব। তা লিখতে গেলে গণশের বুঝতে সময় লাগে, ফলে ব্যাসদেব শ্লোক তৈরি করতে খানিক ভাবার সময় পেয়েছিলেন। আর গণেশের কলম ভেঙে গিয়েছিল এই মহাভারত লিখতে গিয়ে। তিনি সেই ভাঙা লেখনীকে টুকরো টুকরে করে শেষ করেছিলেন মহাভারতের রচনা।
এইরূপে মহাভারত রচনা করতে প্রায় ৩ বৎসর সময় লেগে যায়। ব্যাসদেব প্রথমে অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের জয় সূচক এই উপাখ্যান ১ লক্ষ শ্লোকে রচনা করনে। সর্বশেষে তিনি ৬০ লক্ষ শ্লোক সমন্বিত এই মহাকাব্য রচনা করেন। এই গ্রন্থের ৩০ হাজার শ্লোক দেবলোকে, ১৫ হাজার শ্লোক পিতৃলোকে, ১৪ লক্ষ শ্লোক রক্ষোলোক স্থান পেয়েছে। অবশিষ্ট মাত্র এক লক্ষ শ্লোক মনুষ্যলোকে মহাভারত নামে সমাদৃত বলে মহাভারতে বর্ণিত হয়ছে।