পুরুষ শাসিত কর্মক্ষেত্রে নারীরাও গর্জন করে টিকে থাকতে পারে ‘শেরনি’–তে প্রমাণ করলেন বিদ্যা
গর্জন সত্যি শোনা গেল! তবে তা বাঘের নয়, বিদ্যা বালনের অভিনয়ের। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর সত্যিই একটি ভালো ছবি বর্ষার দিনে উপহার হিসাবে পেলেন দর্শকরা, তা হল 'শেরনি’। সিনেমার নামের সঙ্গে মুখ্য চরিত্র বিদ্যা বালনের অভিনয় খুব সুন্দরভাবে খাপ খেয়ে গিয়েছে। নিউটনের পরিচালক অমিত মাসুকর আবার প্রমাণ করেছেন যে তিনি একজন দক্ষ পরিচালক এবং চিত্রনাট্য বোঝার ক্ষমতা তাঁর বিপুল।
কেন দেখবেন শেরনি
চিত্রনাট্যকার আস্থা টিকুর জোরদার চিত্রনাট্যের সঙ্গে সিনেমার সহ অভিনেতাদের গায়ে কাঁটা লাগার মতো অভিনয় দর্শককে আসনে বসে থাকতে দেবে না। একাধিক–স্তর বিশিষ্ট গল্পকে কীভাবে অ্যামাজন অরিজিনালে পেশ করা যায় তারই দুর্দান্ত উদাহরণ শেরনি। বাঘের অত্যাচারে যখন গ্রামবাসীরা নাজেহাল, এক এক করে প্রাণ যাচ্ছে গ্রামের মানুষের। ঠিক সেই সময়েই এলাকার ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের অফিসার হয়ে আসেন বিদ্যা। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কাজের জায়গাতেও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। আদৌ কি সেই যাত্রায় সফল হন বিদ্যা? সেটাই দেখার হলে দেখতে হবে 'শেরনি’।
ছবির গল্প
একটি গ্রাম, যার চারধার ঘিরে ঘন জঙ্গল। নানা কারণে গ্রামের মানুষদের সেই জঙ্গলে যেতে হয় জীবিকার জন্যে, পেটের দায়, আর সেখানেই রয়েছে মারণ ফাঁদ। দিনে দুপুরে থাবা বসাচ্ছে বাঘ। গ্রামের মানুষ তা নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানালেও বনদফতর আর রাজনীতির মাঝে মিলছে না তেমন কোনও উপকার। এরই মাঝে নতুন পোস্টিং নিয়ে উপস্থিত হন বিদ্যা বালন তথা বিদ্যা ভিনসেন্ট। যাঁর প্রধান টাস্ক হল টি১২ বাঘিনীকে ধরা ও তাকে নিয়ন্ত্রণ করা। গল্পের প্লটে খুব সহজভাবে দেখানো হয়েছে বিদ্যা কীভাবে পুরুষ শাসিত সমাজে ফেঁসে যাচ্ছেন এবং তাঁকে পরাস্ত করার বিভিন্ন উপায় বের করা হচ্ছে। তবে বিদ্যার লড়াইটা কেবল গ্রামের মানুষকে বাঁচানো নয়, তাঁর লড়াইটা দুর্নীতি মেটানোও বটে।
অভিনয়
বিদ্যাকে কেন এই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় নেওয়া হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিদ্যা তাঁর চরিত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে ন্যায় বিচার করেছেন। তিনি তাঁর অভিনয়ের মাধ্যমে ফের প্রমাণ করেছেন যে কেন তিনি এই চরিত্রের জন্য পরিচালকের প্রথম পছন্দ। ছবিতে অভিকাংশ পার্শ্ব চরিত্রেরাই হলেন আসল বনদফতরের কর্মী নয় তো গ্রামের মানুষ। যার ফলে চরিত্রগুলোকে অনেকাংশে যত্ন করে সাবলীল করা সম্ভব হয়েছে।
চিত্রনাট্য, পরিচালনা এবং ক্যামেরা
সময়ের সঙ্গে তাল মেলানো বা প্রকৃতি ও সভ্যতার সংঘাত, যাই বলা হক না কেন, ছবির মধ্যে রয়েছে এক বিশেষ বার্তা। কোথাও গিয়ে সমঝোতা করে সহাবস্থানের কথাই বলে শেরনি। নিজের দৃষ্টিভঙ্গীর প্রসারতা ও মানুষ বনাম বন্যের এই প্রধান সমস্যাটিকে তুলে ধরার জন্য অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখেন নিউটন পরিচালক অমিত মাসুরকার। ক্যামেরার পেছনে অসাধারণ কাজের দক্ষতা দেখিয়েছেন রাকেশ হরিদাস। তাঁর ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়েছে গভীর জঙ্গলের গভীরতর দিক, বন্যতা, আদিমতা, যা সত্যিই অনবদ্য।
সংলাপ
ছবিতে আদ্যপান্ত কোনও তীক্ষ্ণ সংলাপের ধার না থাকলেও, ছবির পরতে-পরতে যেভাবে গল্পকে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে এই ছবির যে বার্তা তা সহজেই দর্শকদের কাছে পৌঁছে যায়। সংলাপের যার মুখে ঠিক যতটুকু বাক্য না দিলে নয়, তার মুখে ঠিক ততটাই বসানো হয়েছে। অযথা ছবিকে থ্রিলার বা অ্যাকশনে পরিণত করার কোনও চেষ্টাই ছিল না।
খামতি কোথায়
যদি থ্রিলার বা সাসপেন্স ভেবে এই ছবি দেখতে বসা যায়, তবে এক কথায় বলতে গেলে হতাশ হতে হয়। তবে ছবির শেষে যে বার্তা পৌঁছোয়, তা এক কথায় বলতে গেলে নিঃসন্দেহে এই ছবিকে এক ভিন্ন মাত্রা দেয়। অভিনয়ের দিক থেকে প্রতিটা অভিনেতা নজর কেড়েছেন এই ছবিতে। তবে গল্পের বুনট খানিকটা থাকলে, ছবিটা দর্শক মনে আরও বেশি করে জায়গা পেত।