মুকুলকে চাইছেন মমতা! কিন্তু সাড়ে তিন বছরের দূরত্ব কি সহজে ঘোচে, ধরা পড়ল যে ছবি
মুকুলকে চাইছেন মমতা! কিন্তু সাড়ে তিন বছরের দূরত্ব কি সহজে ঘোচে, ধরা পড়ল যে ছবি
মুকুল রায়কে ফের পুরনো ফর্মে পেতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জন্য তিনি নিজে ফোন করেছিলেন মুকুলকে। বলেছিলেন, তৃণমূল ভবনে আসুন এবং ৮ সেপ্টেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের কর্মিসভাতেও আসা চাই। সেইমতো মুকুল রায় এসেছিলেন। কিন্তু তাঁকে কি দেখা গেল আগের ফর্মে? পুরনো মুকুল কি ফিরে এলেন তৃণমূলের সমাবেশে?
অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মেলবন্ধনে
মমতা বন্যো্মপাধ্যায় চাইছেন, পুরনোরা আবার সক্রিয় হন। তাঁদের সঙ্গে অনেক স্বচ্ছন্দ তিনি। দলের নেতৃ্ত্বে পুরনো-নতুনদের মিশেল ঘটুক। অর্থাৎ অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মেলবন্ধন ঘটাতে চাইছেন তিনি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তিনি চাইছেন মুকুল রায়ের মতো ক্ষুরধার ভোট-কৌশলীকে ব্যবহার করতে। সেইজন্যই তাঁকে ফের তলব করেছিলেন মমতা।
মুকুল রায় হয়ে উঠেছিলেন চাণক্য
রাজনৈতিক কৌশল রচনায় এবং ভোট পরিচালনায় মুকুল রায়ের জুড়ি মেলা ভার বঙ্গ রাজনীতিতে। তিনি তাঁর মস্তিষ্ক দিয়ে বহু ভোট-যুদ্ধে দলকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছিলেন। মমতা বন্যোতাপাধ্যায়ের তৃণমূলে মুকুল রায় হয়ে উঠেছিলেন চাণক্য। তাঁর কৌটিল্য-নীতিতে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশক তিনি অনায়াসে ধরাশায়ী করেছিলেন বিরোধীদের।
পুরনো ছন্দে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায়
এমনকী বিজেপিতে গিয়েও তিনি চাণক্যের নীতি প্রয়োগে স্বতন্ত্র ছিলেন তিনি। কিন্তু বিজেপিতে সাড়ে তিন বছর কাটিয়ে তৃণমূলে ফেরার পর আর তাঁকে পুরনো ছন্দে ফিরে পাওয়া যায়নি। তিনি ধীরে ধীরে অন্তরালে চলে গিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী-বিয়োগ ও শারীরিক কিছু সমস্যা তাঁকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছিল।
পুরনোদের পাশে চাইছেন মমতা
এরই মধ্যে রাজ্য রাজনীতিতে অনেক স্রোত বয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়োগ-দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছেন। আবার অনুব্রত মণ্ডলও গরু-পাচারকাণ্ডে জেল হেফাজতে। তৃণমূলের আরও অনেকে ইডি-সিবিআই স্ক্যানারে রয়েছেন। এই অবস্থায় পুরনো নেতাদের পাশে চাইছেন মমতা। পার্থ-অনুব্রত পঞ্চায়েত ভোটের আগে মাইনাসের খাতায় পড়ে যাওয়ায় মুকুল রায়দের মতো পুরনোদের পাশে চাইছেন মমতা।
একার হাতে সামলাতেন গোটা তণমূল
মুকুল রায় একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ছিলেন। মুকুল রায় থাকাকালীন দলের সংগঠন নিয়ে কোনওদিন চিন্তা করতে হত না মমতা বন্যো্রপাধ্যায়কে। একার হাতে সামলাতেন গোটা রাজ্যের তৃণমূল সংগঠনকে। ভোট-অঙ্কও ছিল তাঁর নখদর্পণে। এহেন মুকুল রায়কে হারিয়ে প্রাথমিকভাবে তৃণমূল বিপাকে পড়েছিল।
মুকুলকে পুরনো ছন্দে চাইছেন মমতা
পরবর্তী সময়ে মুকুল রায়ের জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সংগঠনের ভার নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু চাণক্য মুকুলের জায়গা এখনও তৃণমূলে ভরাট হয়নি। তাই তো প্রশান্ত কিশোরের মতো পেশাগত ভোট কৌশলীকে এনে ২০২১-এর নির্বাচন করতে হয়েছিল। কিন্তু মমতা চাইছেন মুকুল যখন ফিরে এসেছেন দলে, তখন তাঁকে পুরনো ছন্দে দেখতে।
মুকুল রায় দ্বিতীয় সারির নেতাদের দলে
সেই কারণেই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে যখন সাড়া দিয়ে মুকুল রায় তৃণমূল ভবন ও নেতাজির ইন্ডোরের কর্মিসভায় এসেছেন, তখন তাঁকে কী রূপে এবং কী ভূমিকায় দেখা যায়, তা জানতে আগ্রহী ছিল রাজনৈতিক মহল। সেখানে দেখা গেল মুকুল রায় দ্বিতীয় সারির নেতাদের সঙ্গে বসে রয়েছেন।
দ্বিতীয় সারি থেকে মঞ্চে উঠে এলেন মুকুল
কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মিসভায় আসতেই বদলে গেল ছবিটা। স্বয়ং সুব্রত বক্সি মুকুল রায়কে পথ দেখিয়ে মঞ্চে নিয়ে আসছেন। দুদিন আগেই তিনি তৃণমূল ভবনে সুব্রত বক্সির সঙ্গে বৈঠক করে বলেছিলেন, আমি এখনও মরে যাইনি, বেঁচে আছি। তারপর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সারি থেকে মঞ্চে উঠে আসা তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়ে গেল এদিন।
তৃণমূলে পুরনো মুকুলের ঠাঁই হবে তো!
মুকুল রায়কে এদিন পুরনো নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দৃশ্যতই খোশ মেজাজে দেখা গিয়েছে। তাতে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন মুকুল রায় যদি ফের দায়িত্ব পান তবে পুরনো ফর্মে ফিরতে বিলম্ব হবে না। কিন্তু প্রশ্ন একটাই নতুন তৃণমূলে পুরনো মুকুলের ঠাঁই হবে তো! সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো আবার নতুন তৃণমূলের স্লোগান তুলেছেন!
এক থেকে একশো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে অবশ্য কোনও ভেদাভেদের কথা বলেননি। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলে কোনও সেকেন্ড ম্যান নেই। এক থেকে একশো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বাকি সবাই কর্মী। আমিও কর্মী। এই অবস্থায় দেখায় মুকুল রায় নতুন তৃণমূলে কীভাবে জায়গা করে নেন আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে।
চোরেদের রানি মমতা! নবান্নের ১৪ তলা থেকে নামানোর ডাক দিলেন শুভেন্দু