মমতাই শেষ কথা তৃণমূলে, দলের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বার্তা দিলেন পিকে-অভিষেককে
একটা প্রশ্ন সম্প্রতি উঠছিল, তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে? শনিবার জাতীয় কর্মসমিতির ২০ জনের নাম ঘোষণা করে মমতা বুঝিয়ে দিলেন তিনিই শেষ কথা।
একটা প্রশ্ন সম্প্রতি উঠছিল, তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে? শনিবার জাতীয় কর্মসমিতির ২০ জনের নাম ঘোষণা করে মমতা বুঝিয়ে দিলেন তিনিই শেষ কথা। তৃণমূল কংগ্রেস তাঁর, তৃণমূলের নিয়্ন্ত্রণ তাঁর হাতেই রয়েছে। তিনিই শেষ কথা বলবেন। তাঁর সাফ কথা, সকলকে এক হয়ে চলতে হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তৃণমূলের শেষ কথা
একটা কথা এতদিন শোনা যে, তৃণমূলে একটাই পোস্ট, বাকি সব ল্যাম্প পোস্ট। অর্থাৎ তৃণমূলের সব কিছুই মমতাকেন্দ্রিক। তা বোঝাতেই ওই শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হত। কিন্তু হালে তৃণমূলে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে তৃণমূলে কর্তৃত্ব কার তা নিয়ে। পরিস্থিতি এমনই জায়গায় পৌঁছয় যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিবৃতি দিয়ে বলতে হয়, তিনিই তৃণমূলের শেষ কথা।
তৃণমূলের রাশ নিজের হাতেই রাখলেন মমতা
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাটে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বদের ডেকে বৈঠক করে বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই সর্বেসর্বা। তাঁর কথাই তৃণমূলে চলবে। অর্থাৎ তিনিই শেষ কথা বলবেন। একইসঙ্গে তিনি প্রশান্ত কিশোর ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বার্তা দিলেন। মমতা বলেন, নিজের হাতে গড়ে দলটাকে তৈরি করেছেন। তিলে তিলে একটা দল গড়ে তিনি এই জায়গায় এসেছেন। সেই দলটাকে তিন এত সহজে ভাঙতে দেবেন না। তৃণমূলের রাশ তিনি নিজের হাতেই রাখবেন।
তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতি ঘোষণা
সম্প্রতি তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচনও হয় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। সেই নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। সেদিনই পাঁচ-ছ'জনের নাম ঘোষণা করে তৃণমূল কংগ্রেসের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছিলেন, তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতি শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে।
অভিষেকের পদ ছাড়া নিয়ে বিতর্কের মাঝে
এদিকে তৃণমূলের অন্দরের কোন্দল বাড়তেই থাকে। এর মধ্যে আবার প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার আই প্যাকের সঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমোর দূরত্ব বেড়ে যায়। তৃণমূলে মমতা বনাম অভিষেক লড়াই চলছে বলে ফলাও করে প্রচারও হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে অভিষেক তাঁর পদ ছাড়তে পারেন বলেও ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর।
জাতীয় কর্মসমিতিতে ২০ জন সদস্য
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই শক্ত হাতে হাল ধরতে কালবিলম্ব না করে বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে মমতার গড়া কমিটির নেতারা ছাড়াও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ শীর্ষ নেতৃত্বকে ডাকা হয়। এদিন প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় কর্মসমিতির ২০ জন সদস্যের নাম স্থির করেন। সেইসঙ্গে অবলুপ্ত হয় তৃণমূলের সমস্ত পদ। এখন জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যদের পদ বিতরণ করবেন মমতা স্বয়ং।
জাতীয় কর্মসমিতিতে কারা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের হাতে গড়া কর্ম সমিতিতে রয়েছেন সর্বভারতীয় সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া রয়েছেন ১৯ জন সদস্য। তাঁরা হলেন- অমিত মিত্র, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, বুলচিক বরাইক, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুখেন্দুশেখর রায়, মলয় ঘটক, অনুব্রত মণ্ডল, গৌতম দেব, রাজীব ত্রিপাঠী, অসীমা পাত্র, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও যশবন্ত সিনহা।
মমতাই তৃণমূলের এক এবং অদ্বিতীয় মুখ
এদিন বৈঠক শেষে পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, দলরে সর্বভারতীয় সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শীঘ্রই পদাধিকারীদের মনোনীত করবেন। কে কোন পদ পাবেন তা ঠিক করবেন সভানেত্রী। তারপরই তৃণমূলের পক্ষ থেকে আমরা তা প্রকাশ্যে আনব। এদিন বৈঠকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মমতা বুঝিয়ে দেন, তৃণমূলের রাশ তাঁর হাতেই ছিল, তাঁর হাতেই থাকবে। অর্থাৎ মমতাই তৃণমূলের এক এবং অদ্বিতীয় মুখ।
তৃণমূলকে বাংলাকেন্দ্রিকই রাখতে চেয়েছেন মমতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়া জাতীয় কর্মসমিতিতে ভিনরাজ্যের নেতা মাত্র একজন। তিনি হলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী মন্ত্রিসভরা সদস্য প্রাক্তন বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহা। এছাড়া ভিনরাজ্যের আর কোনও নেতা বা নেত্রীকে জাতীয় কর্মসমিতিতে সুযোগ দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বলাই যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর তৃণমূলকে বাংলাকেন্দ্রিকই রাখতে চেয়েছেন। তিনি সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন বাংলাকেই।
জাতীয় কর্মসমিতি থেকে বাদ পড়লেন যাঁরা
এবার জাতীয় কর্মসমিতি থেকে বাদ পড়েছেন তিনজন। সেই তিনজনের মধ্যে সৌগত রায় ও ডেরেক ও'ব্রায়েনের বাদ পড়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এছাড়া বাদ পড়লেন দুলাল মুর্মু। তাঁর জায়গায় আলা হয়েছ বুলুচিক বরাইককে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনের বৈঠকে বার্তা দিয়েছেন, দলে এক হয়ে থাকতে হবে, একসঙ্গে চলতে হবে। তৃণমূলের সবকিছু দায়িত্ব মমতার হাতে ন্যস্ত হয়েছে। সাত নেতা সই করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁরা জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
প্রশান্ত কিশোর ও আই প্যাককেও বার্তা
সাত নেতা লিখিতভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার এই পদক্ষেপে স্পষ্ট, এখন থেকে যাবতীয় সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পদক্ষেপে প্রশান্ত কিশোর ও আই প্যাককেও বার্তা দিলেন। তিনি যে নির্বাচনী কৌশল ও নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে তাঁর সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। তাঁর কথা শিরোধার্য করেই চলতে হবে।