তৃণমূল কি হাত গোটাচ্ছে গোয়া-ত্রিপুরা-মেঘালয় থেকে, মমতার নয়া ‘টিম’ গঠনে পূর্বাভাস
তৃণমূল কি হাত গোটাচ্ছে গোয়া-ত্রিপুরা-মেঘালয় থেকে, মমতার নয়া ‘টিম’ গঠনে পূর্বাভাস
একুশের নির্বাচনের পর তৃণমূল নজর দিয়েছিল ভিনরাজ্যের সংগঠনে। সেইমতো তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ত্রিপুরা ও গোয়া। তারপর মেঘালয়, হরিয়ানাকেও তারা টার্গেট করেছিল। কিন্তু কোথায় কী! তৃণমূলের জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা হতেই দেখা গেল পুরো উল্টো ছবি। ত্রিপুরা, গোয়া কিংবা মেঘালয় বা হরিয়ানা- কোনও রাজ্যেরও কোনও নেতার নাম নেই!
তৃণমূল যে রাজ্যগুলিকে টার্গেট করেছে, তাদের নেতা নেই
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০ সদস্যের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যদের নামের তালিকা তৈরি করেন। সেই তালিকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া বাকি ১৯ জনের নাম ঘোষণা করা হয় শনিবার। কিন্তু সেই তালিকায় দেখা যায় তৃণমূল সম্প্রতি যে রাজ্যগুলিকে টার্গেট করেছে, সেই রাজ্যের কোনও নেতার নাম নেই।
তৃণমূল গোয়া বা ত্রিপুরার কাউকে জাতীয় কর্মসমিতিতে রাখেনি
একুশের ভোটে বিপুল সাফল্যলাভের পর তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিপুরা নিয়ে ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে ফেলে। ২০২৩-এ ত্রিপুরা দখল করাই তাঁদের পাখির চোখ ছিল, তা বোঝা যায় তৃণমূলের কর্ম-পরিকল্পনায়। আর ত্রিপুরার পাশাপাশি ভোটের মাত্র তিন মাস আগে গোয়া নিয়ে ঝাঁপায় তাঁরা। গোয়ায় কংগ্রেসকে ভেঙে ভিত গড়তে শুরু করে তৃণমূল। কিন্তু হালে দেখা গেল, তৃণমূল গোয়া বা ত্রিপুরার কোনও নেতাকে জাতীয় কর্মসমিতিতে রাখেনি।
নয়া জাতীয় কর্মসমিতি গড়ে কী বার্তা দিতে চাইল তৃণমূল
শুধু গোয়া বা ত্রিপুরা নয়, তৃণমূল মেঘালয় নিয়েও ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে। মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা-সহ ১২ জন কংগ্রেস বিধায়ককে ভাঙিয়ে নেয় তারা। হরিয়ানা থেকে কংগ্রেসের রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতা অশোক তানওয়ার-কেও দলে নেয় তৃণমূল। কিন্তু তাঁদের কাউকেই জাতীয় কর্মসমিতিতে না রেখে কী বার্তা দিতে চাইল তৃণমূল কংগ্রেস?
ভিনরাজ্যের হেভিওয়েটরা ব্রাত্য তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতিতে
তৃণমূলের নবগঠিত জাতীয় কর্মসমিতিতে বাংলার মুখই উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। ভিনরাজ্যের মাত্র দু-জন রয়েছেন তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতিতে। একজন প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা। আর একজন উত্তরপ্রদেশের রাজেশ ত্রিপাঠী। কিন্তু ত্রিপুরার জন্য নিবেদিত প্রাণ সুস্মিতা দেব, গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরো, হরিয়ানার অশোক তানওয়ার, বিহারের পবন বর্মা, কীর্তি আজাদ- কাউকেই স্থান দেননি মমতা।
তৃণমূল কি ভিনরাজ্যকে আর সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না?
জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যরা সাধারণত সর্বভারতীয় পদ পান। কংগ্রেসে সেটাই রীতি। সেই পরিকাঠামো মতো তৃণমূলেও সেটাই হবে। কিন্তু সর্বভারতীয় পদের জন্য কেন ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের দিকে চেয়ে ভিনরাজ্যের নেতাদের সামনে আনা হল না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। তবে কি তৃণমূল বাংলার বাইরে কোনও রাজ্যকে আর সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না?
বাংলাকেন্দ্রিক মমতা! পরিস্থিতিই বলবে তৃণমূল কোন পথে
বিশেষজ্ঞদের মতে, তৃণমূল ত্রিপুরায় পা রেখে সেভাবে সুবিধা করতে পারেনি। আবার গোয়াতে গিয়েও সেভাবে দাঁত ফোটাতে তারা সক্ষম হবে না ধরে নিয়েই কি তবে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে তারা। গোয়া-ত্রিপুরা বা মেঘাল-হরিয়ানা নিয়ে কি তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঐক্যমত্য নন অভিষেক-পিকের সঙ্গে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে তাঁর মতের অমিল কি ভিনরাজ্যে দলের সম্প্রসারণ নিয়েও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি মনে করছেন, ভিনরাজ্যে নজর দিতে গিয়ে বাংলার প্রতি বঞ্চনা করা হচ্ছে? তাই তিনি বাংলাকেন্দ্রিক থাকতে চাইছেন। পরিস্থিতিই বলবে তৃণমূল কোন পথে!