মমতার ‘বাংলা’-বার্তায় নিশানা অভিষেককে! তৃণমূলের রাশ টানতে যাঁদের দিলেন দায়িত্ব
মমতার ‘বাংলা’-বার্তায় নিশানা অভিষেককে! তৃণমূলের রাশ টানতে যাঁদের দিলেন দায়িত্ব
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূলের সর্বসর্বা তিনিই। তাঁর হাতেই থাকবে তৃণমূলের রাশ। তিনিই সংগঠন সামলাবেন। এই কাছে তিনি অগ্রাধিকার দেবেন কাকে, কোন লক্ষ্যে ছুটবে তারা, তার নীতি প্রণয়ন করবেন তিনিই। তৃণমূলে শুরু হওয়া বিতর্কের অবসানে নিজেই ময়দানে নেমে দলের চলার পথ ঠিক করে দিলেন সু্প্রিমো মমতা।
বাংলা আগে, তারপরে ভিনরাজ্য
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে দেন কোন পথে চলবে তৃণমূল। তিনি বলেন, তাঁদের পাখির চোখ হল বাংলা। বাংলাকেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়েছে তৃণমূল, ভবিষ্যতেও দেবে। ভিনরাজ্য নিয়ে চিন্তা তারপরে। কখনই বাংলাকে উপেক্ষা করে ভিনরাজ্যের দিকে নজর দেবে না তৃণমূল। এটা তাঁরা সাফ কথা।
বাংলার কথায় অভিষেককে বার্তা!
দলের অভিমুখ স্পষ্ট করে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব আরোপ করার কথা বলেছেন। তাঁর এই কথায় প্রশ্ন উঠে পড়েছে, তবে কি তিনি অভিষেককে বিশেষ বার্তা দিতে চাইছেন। তা না হলে কেন তিনি ফলাও করে বলবেন ভিনরাজ্যের থেকে বাংলাই সর্বদা বেশি গুরুত্ব পাবে?
নিশানায় তৃণমূলের ভিনরাজ্যে বিস্তার
আসলে একুশের নির্বাচন-পর্ব থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভিন রাজ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করেছিলেন। তিনি বাংলার পাশাপাশি ভিনরাজ্যেও তৃণমূলের বিস্তারের প্রত্যাশী হয়ে ওঠেন। ভোট মিটলে তিনি তৃণমূলকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে দিতে সংগঠন গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন।
তৃণমূলে কর্তৃত্বের প্রশ্নে মমতা-অভিষেক
আর একুশের নির্বাচন-পর্বে মোদী-শাহদের থেকে মমতার পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্ব আদায় করে নিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর এই গুরুত্ব বৃদ্ধিতে অভিষেক তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড হয়ে তো উঠেছিলেনই, একটা মহল তাঁকে তৃণমূলের প্রধানও ভাবতে শুরু করেছিল। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলে তৈরি হয়েছিল তৃণমূলে কর্তৃত্বের প্রশ্ন।
ভিনরাজ্য থেকে ড্যামেজ কন্ট্রোলে অভিষেক
সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে মমতা-অভিষেক নিয়ে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অভিষেককে অস্বীকার করেন। অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার মডেল আবার সেই সেই বিতর্ককে উসকে দেয়। পরিস্থিতিতে এমন পর্যায়ে যায় যে, অভিষেককে ভিনরাজ্য থেকেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে বার্তা দিতে হয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে রাশ
কিন্তু তাতেও বিতর্কের অবসান হয়নি। শেষে আসরে নেমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাশ তুলে নিতে হয় নিজের হাতে। মমতা জানান, দলের সংগঠন তিনিই দেখবেন, আর কেউ নন। তিন-চার বছর কাজ করে কেউ নিজেকে বড় কিছু ভাবলে ভুল হবে। অনেক কষ্ট করে এই দলটা তিনি গড়েছেন। অনেকেরই মেহনত আছে। তা বলে দলে নিজেকে কেউ যেন শেষ কথা না মনে করেন।
দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন মমতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের হাতে দলের রাশ রাখতে বিশেষ নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, সাংসদদের কেনও সমস্যা থাকলে তা জানালেন হবে লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রাজ্যে নেতার কোনও সমস্যা থাকলে তা জানালেন হবে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে। বিধায়কদের কোনও সমস্যা থাকলে জানাতে হবে মহাসচিব তথা পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।
তৃণমূলে কার অবস্থান কোথায়!
এদিন কোথাও তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলেননি। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, এটা একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত। তিনি বোঝাতে চাইলেন, তৃণমূলে কার অবস্থান কোথায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সব কথা বলে গেলেন, তার পিছনে নিশ্চয়ই কোনও কারণ রয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
প্রবীণ ও নবীনদের এক সূত্রে গাঁথতে
তৃণমূলে গত কয়েক মাসে প্রবীণ নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। দলের সামনের সারিতে চলে এসেছিলেন নবীন নেতারা। প্রবীণ নেতারা বুঝতে পারছিলেন না, দলে তাদের ভূমিকা কী। এর ফলে তৈরি হচ্ছিল বিবাদ। তৃণমূলের সেই বিবাদ মেটাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে আসরে দলের প্রবীণ ও নবীনদের এক সূত্রে গাঁথতে চাইলেন। একইসঙ্গে চাইলেন বিতর্কে ইতি টানতে।
বাতলে দিলেন সমস্যা সমাধানের উপায়
একুশের নির্বাচনে বিপুল সাফল্য এলেও দলের অন্দরে একটা ফারাক তৈরি হচ্ছিল। নেতারা বুঝতে পারছিলেন না কার কাছে যাবেন, কে তাদের সমস্যার সমাধান করবেন। সেই প্রশ্নও উঠে পড়েছিল দলে। এবার সেই সব প্রশ্নের নিরসন ঘটাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিলেন, বাতলে দিলেন সমস্যা সমাধানের উপায়। একইসঙ্গে দলের রাশ রাখলেন নিজের হাতে।
কাঁটা-গাছটা মুড়িয়ে দিলেন মমতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন, একটা নির্বাচন জিতেই যুদ্ধ শেষ নয়। সামনে শতাধিক পুরসভার নির্বাচন রয়েছে। রয়েছে পঞ্চায়েক নির্বাচন। সর্বোপরি রয়েছে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে। সেই নির্বাচনের দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কাঁটা হোক, তা তিনি চান না। তাই কাঁটা-গাছটা মুড়িয়ে দিলেন তিনি। তৃণমূলের সংকটে ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন মমতা।